অর্থনীতি

দোকান খুলে ক্রেতার অপেক্ষা

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বাড়ায় টানা ১১ দিন বন্ধ থাকার পর রোববার (২৫ এপ্রিল) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়া হয়েছে।

Advertisement

সরকার নির্ধারিত সময় সকাল ১০টা থেকেই বিভিন্ন শপিংমলের দোকান খোলা শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। দোকান খুললেও প্রথম দিন প্রথম দুই ঘণ্টায় মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের তেমন আনাগোনা দেখা যায়নি।

রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেট, মালিবাগ টুইন টাওয়ার, মৌচাক মার্কেট, ফরচুন মার্কেট, বেইলি রোডের নাভানা টাওয়ার সব জায়গায় দেখা যায় দোকান খুলে ক্রেতার অপেক্ষা করছেন বিক্রেতারা। তবে ক্রেতা আসছেন না।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, দোকান খুলে কর্মীরা পণ্য গোছাচ্ছেন। আর দুপুর ১২টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রয়কর্মীরা ক্রেতার অপেক্ষায় বসে রয়েছেন।

Advertisement

মার্কেটটির ব্যবসায়ী বিল্লাল বলেন, ‘মার্কেট খুলেছে এটাই বড় কথা। আমরা ধরেই নিয়েছি আজ খুব একটা বিক্রি হবে না। আজ মাল গোছগাছ করে রাখবো। এর মধ্যে যা বিক্রি হবে তাই ভালো।’

গত বছর রোজার ঈদের আগে এই মার্কেটটিতে ঢুকতে দুটি জীবাণুনাশক ট্যানেল স্থাপন করা হয়েছিল। তবে এবার তা দেখা যায়নি। এমন কী অনেক বিক্রেতা মাস্কও ব্যবহার করছেন না।

এ বিষয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী আরাফাত বলেন, ‘গত বছর মার্কেটের প্রবেশপথে জীবানুনাশক ট্যানেল ছিল। এবার কেন নেই জানি না। আর এখন যেহেতু ক্রেতা নেই তাই মাস্ক পরছি না। ক্রেতা আসা শুরু করলে অবশ্যই মাস্ক পরবো।’

টুইন টাওয়ার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, স্প্রে নিয়ে মার্কেটের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে আছেন সিকিউরিটি গার্ড। মার্কেটে ঢুকতে সবাইকে মাস্ক পরতে অনুরোধ করা হচ্ছে। এই মার্কেটে গিয়েও দেখা যায়, প্রতিটি দোকান খুলে বিক্রেতারা তাদের পণ্য প্রদর্শ করছেন। কিন্তু ক্রেতা নেই।

Advertisement

মার্কেটির একটি দোকানের ম্যানেজার জীবন বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তবে এবার বিক্রি খুব একটা হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। তাছাড়া ইতোমধ্যে ১০ রোজা চলে গেছে। সাধারণত রোজার ঈদের বিক্রি ১০ রোজার আগেই শুরু হয়ে যায়। গত বছরও আমরা লোকসান গুনেছি।’

তিনি বলেন, ‘রোজার সময় সকালে ক্রেতা মার্কেটে আসে না। ক্রেতা আসে বিকেল ও সন্ধ্যায়। কিন্তু এবার তো বিকেল ৫টার পর মার্কেট খোলার রাখা যাবে না। তাহলে বিক্রি হবে কীভাবে?’

বেইলি রোডের নাভানা টাওয়ারে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটের প্রবেশপথে জীবানুনাশক ট্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। মার্কেটে প্রবেশ করতে প্রত্যেককে এই ট্যানেলের ভিতর দিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মার্কেটটিতে গিয়েও দেখা যায় বিক্রেতার ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন। কিন্তু ক্রেতা আসছে না।

এ বিষয়ে মার্কেটটির একটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মেহেদী বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে আমরা বাড়তি বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু লকডাউন সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। ১১ দিন বন্ধ থাকার পর আজ আবার মার্কেট খুলেছে। আজ ক্রেতা কম হবে বলে আমরা ধরে নিয়েছি।’

তিনি বলেন, এখন গণপরিবহন চলাচল করছে না। আবার মাস শেষের দিকে। মানুষের হাতে এবার টাকাও কম। একেবারে প্রয়োজন না হলে হয়তো এবার মানুষ খুব একটা কেনাকাটা করবে না। আমরা অপেক্ষায় আছি, মাস শেষে হয়তো বিক্রি একটু বাড়বে। তবে বিক্রি যে খুব বেশি হবে না বোঝা যাচ্ছে।’

ফরচুন শপিংমলে গিয়ে দেখা যায়, শপিংমলটির প্রবেশপথে জীবানুনাশক ট্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকেও মার্কেটটির বেশিরভাগ দোকান গোছগাছ করতে দেখা যায়।

মার্কেটটির দোতলায় শাড়ির পসরা সাজানো মো. লিটন বলেন, ‘অনেক দিন পর আজ দোকান খুললাম। গোছগাছ করতে আজ সারাদিন চলে যাবে। তাছাড়া মার্কেট খোলার যে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে তাতে এবার বিক্রি হবে বলে মনে হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর লোকসান খেয়েছি। এবার ভালো ব্যবসা হবে এই আশায় অনেক টাকা বিনিয়োগ করছি। কিন্তু এমন সময় লকডাউন দেয়া হলো, আমাদের সব শেষ। এবার লোকসান গুণতে হবে। তবে মার্কেট খোলার সময় বাড়ালে হয় তো লোকসান একটু কম হবে।’

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ থেকে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে। গত শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগের (কোভিড-১৯) বিস্তার রোধে শর্তসাপেক্ষে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আগের নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় ব্যাপক সংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় বিবেচনা করে নতুন এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাজার/সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খুলতে আমরা শতভাগ প্রস্তুত। আমাদের গত বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেটাকে কাজে লাগানো হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন হয়তো একটু সমস্যা হবে। কিছু কেনাকাটার প্রয়োজন আছে। তবে সোমবার থেকে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমলে ক্রয়-বিক্রয় চলবে বলে আমরা আশা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব মার্কট বা শপিংমল স্বাস্থ্যবিধি মানবে না সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’

এর আগে করোনা সংক্রমণ রোধে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আটদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। লকডাউনের মধ্যে দোকান-শপিংমল বন্ধ রাখাসহ ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে।

সেই মেয়াদ শেষ হয় গত বুধবার (২১ এপ্রিল) মধ্যরাতে। তবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় লকডাউনের মেয়াদ আগামী ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

এর মধ্যে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়। তারা এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাদের দাবি তুলে ধরেন। দোকান মালিক সমিতির দাবির প্রেক্ষিতেই আবার দোকান ও শপিংমল খুলে দিয়েছে সরকার।

এমএএস/ইএ/জিকেএস