মাশরাফির পর যদি বাংলাদেশের দু’জন পেসারকে চিহ্নিত করতে বলা হয়, তাহলে সবার আগে আসবে তার নাম। তিনি রুবেল হোসেন। একদিনের ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের সব সময়ের সফলতম বোলারের তালিকায় তার নাম আছে।
Advertisement
ধারণা ছিল মাশরাফির অবসরের পর রুবেলই হবেন এক নম্বর পেসার। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক তিনি সে জায়গায় পৌঁছাতে পারেননি। এখন দলে জায়গাই অনিয়মিত হয়ে গেছে। নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলে থেকেও সেভাবে সুযোগ পাননি। শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলেছেন শুধু। নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে কোমরের ব্যাথায় খুব কষ্ট পাচ্ছেন রুবেল।
জাগো নিউজ : হ্যালো রুবেল কেমন আছেন? করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পর এখন কোথায় অবস্থান করছেন?
রুবেল : হ্যাঁ, করোনার মধ্যে আল্লাহ ভালই রেখেছেন। পরিবার নিয়ে মিরপুরের বাসায় আছি। এখনো করোনামুক্ত আছি। আল্লাহর অনেক শোকর। তবে করোনাজনিত সমস্যা না থাকলেও আমি বলতে পারছি না যে ভাল আছি। আসলে আমি পুরোপুরি ভাল নেই। কারন আমার নিজের একটু শারীরিক সমস্যা আছে।
Advertisement
জাগো নিউজ : সেকি! আপনি কী রোগাক্রান্ত? নাকি কোন ইনজুরির শিকার?
রুবেল : না, না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমতে কোন রোগ নেই। তবে একটু ইনজুরিতে পড়ে কষ্ট পেয়েছি কিছুদিন।
জাগো নিউজ : কী ইনজুরি? কবে, কিভাবে কোথায় আঘাত পেলেন?
রুবেল : আসলে আমি কোমরের ব্যাথায় ভুগছি। আল্লাহর রহমতে এখন একটু কমের দিকে আছে। তবে সেই নিউজিল্যান্ড থেকে ফেরার পর বেশ কিছুদিন বেশ ভালই ভুগেছি।
Advertisement
জাগো নিউজ : একটু খুলে বলবেন কিভাবে কোমরে চোট পেলেন?
রুবেল : আসলে এটা নিউজিল্যান্ডে থাকালীনই ব্যাথাটা প্রথম অনুভব করেছি। ঠিক কোমরের মাঝখানটায় ডিস্কের মধ্যে ব্যাথা। প্র্যাকটিসে বোলিং করতে গিয়েই প্রথম ব্যাথা অনুভব করি। তবে তখন এত তীব্র ছিল না। হালকা, একটু একটু লাগতেছিল। তখনও আমি ফিজিওকে দেখিয়েছি।
তারপর ঢাকায় আসলাম। দেশে ফেরার দুই থেকে তিনদিন পর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি প্রচন্ড ব্যথা। এমন প্রচন্ড ব্যথা যে নড়তে চড়তে পারছিলাম না। আসলে নিউজিল্যান্ডে আমাদের প্রচুর ট্রাভেল করতে হয়েছে। তারপর ঢাকা এসে ব্যথার তীব্রতা বাড়ার পর আমি ন্যাশনাল টিমের ফিজিও বায়েজিদ ভাই ও দেবাশিষ দা’কে জানালাম। তারা বললো দুই-তিন দেখো। কিন্তু দেখি দুই-তিন দিন পরও কমতেছিল না। তখন আমাকে বায়েজিদ ভাই (ফিজিও) কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে বললেন, এই ঔষধ গুলো খাও। আশা করি ঠিক হয়ে যাবে।
তারপর ঔষধ গুলো খাচ্ছিলাম। কোন এক্সারসাইজ করিনি। শুধু কোমরে একটা বেল্ট ব্যবহার করেছি। তারপর আল্লাহর রহমতে ভাল। তবে পুরোপুরি সেরে যায়নি। এখনো আছে। মাঝেমধ্যে ব্যাথাটা ওঠে। তবে তীব্রতা আগের চেয়ে কম। এখন গতকাল শুক্রবার থেকে রিহ্যাব শুরু করেছি।
বুঝতেই পারছেন, কোমরের ব্যথা, তারওপর ডিস্কে। একটু সেনসেটিভ জায়গায়। আমি এমআর করিয়েছি। এমআরআই রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেছেন, খুব গুরুতর কিছু নয়। তবে ব্যথাটা পুরনো। রিকভারি করতে হবে। কোমরকে শক্ত করে তুলতে হবে। তারপর আপনাআপনি সেরে যাবে।
তবে ডাঃ দেবাশীষ দা আমাকে বলেছেন, কোনোভাবেই টানা দু’দিনের বেশি বোলিং না করতে। এখন তো বোলিং করবে না, যখন বোলিং শুরু করবা তখনও তাড়াহুড়ো করো না। জায়গাটা সেনসেটিভ। আমি এক্সট্রা রিকভারির চেষ্টা করছি।
জাগো নিউজ : আপনার সেরে উঠে মাঠে ফিরতে কতদিন লাগতে পারে?
রুবেল : ঠিক নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। তবে অন্তত এক মাসের আগে নিশ্চয়ই না। ২৫ থেকে ৩০ দিনও লাগতে পারে।
জাগো নিউজ : ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে কতটা উৎসাহী আপনি?
রুবেল : কি বলেন! আমিতো প্রিমিয়ার লিগ খেলতে মুখিয়ে আছি। জানি না কবে কখন শুরু হবে? তবে আশা করছি আমি তার আগেই সুস্থ হয়ে উঠবো ইনশাল্লাহ।
জাগো নিউজ : শ্রীলঙ্কায় জাতীয় দলের খেলা দেখছেন, কেমন লাগছে?
রুবেল : খুবই ভাল লাগছে। দারুণ খেলছে আমাদের টিম। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা চমৎকার ব্যাটিং করেছে। আমরা ৫০০ প্লাস রান করেছি সেটাই অনেক। বোলাররাও সাধ্যমত চেষ্টা করেছে। খারাপ হয়নি। তাইজুল আর তাসকিন ভাল বোলিং করেছে। আমরা অনেক রান করেছি।
জাগো নিউজ : শ্রীলঙ্কায় ৪ বছর আগে শততম টেস্ট জয়ের স্মৃতি মনে আছে?
রুবেল : হ্যাঁ, থাকবে না কেন? আমিতো শততম টেস্ট দলে ছিলাম। একাদশে জায়গা পাইনি। তবে যেহেতু দলে ছিলাম, তাই সব চোখের সামনেই ঘটেছে। আমরা ভাল খেলেই লঙ্কানদের হারিয়ে নিজেদের শততম টেস্ট জিতেছিলাম।
জাগো নিউজ : মাশরাফির পর ধরা হয়েছিল রুবেলই হবেন এক নম্বর পেসার; কিন্তু আপনি সে জায়গায় নেই। দলে অবস্থান নড়বড়ে। এটা কতটা দুঃখ দেয়?
রুবেল : আমার খুব একটা দুঃখ নেই। তবে কিছু আফসোস আছে। কারণ আমি ১২ বছর খেলে ফেলার পর সাকুল্যে ১০০ প্লাস ম্যাচ খেলেছি। এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারতো। আমার মনে হয় শেষ কয়েক বছর দলের সাথে থাকলেও যে কোন ফরম্যাটে ম্যাচ খেলার সুযোগ কম পেয়েছি। বেশিরভাগ সিরিজে দেখা গেছে একটি মাত্র ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছি এবং সেটাও হয়ত সিরিজের শেষ ম্যাচে।
হঠাৎ হঠাৎ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়ায় ভাল পারফরম করতে কষ্ট হয়েছে। কাজটা কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। কারণ ম্যাচ নিয়মিত না খেললে পারফমেন্স ধরে রাখা কঠিন। তবে আমি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি। আশা করছি এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেই আবার দলে ফিরবো এবং একাদশেও জায়গা করে নিব। তবে আমার দলে জায়গা নিয়মিত না হলেও একটা অন্যরকম আফসোস আছে।
জাগো নিউজ : সেটা কি রকম?
রুবেল : আমার একটাই আফসোস। তাহলো বিশ্বের সব টেস্ট দলে একটা জুটি থাকে। পেস বোলিং জুটি। তাতে করে প্রতিপক্ষ ব্যাটিং লাইনআপের ওপর প্রভাব বিস্তারের কাজটি সহজ হয়। দু’প্রান্তে দু’জন বোলার জুটি গড়ে আক্রমণ শানালে আপনাআপনি বোলিং কার্যকরিতা বেড়ে যায়।
কিন্তু আমাদের দেশে আজ পর্যন্ত কোন বোলিং জুটি গড়ে ওঠেনি। তৈরি হয়নি। আমরা চেষ্টাও করিনি। কিন্তু ইতিহাসে অনেক সফল পেস বোলিং জুটির নজির আছে। যারা জুটি গড়ে দলের সাফল্য বয়ে এনেছেন। আমাদের দেশে পেস বোলারদের এমন জুটি তৈরির সুযোগ ও সম্ভাবনা ছিল।
কিন্তু আমরা সেভাবে চিন্তা করিনি। আমি নিজের কথা বলছি না যে, আমাকে রেখে ওই জুটি তৈরি করতে হবে। তবে আবারও বলছি, পেস বোলিংকে ধারালো করতে হলে দু’জনার জুটি তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। তাতে করে পেস বোলিংয়ের ধার বাড়বে। আমরা উপকৃত হবো।
এআরবি/আইএইচএস