দেশজুড়ে

পিসিআর ল্যাবে সুফল পাচ্ছেন রাঙ্গামাটির মানুষ

দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনা শনাক্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যুবরণ করছেন অসংখ্য মানুষ। রাঙ্গামাটিতে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে করোনা সংক্রমণ ও মৃতের হার। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির এ সময়েও গত একমাসে রাঙ্গামাটিতে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২৫ জন। এসময় ১ হাজার ৩৬২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শনাক্ত বিবেচনায় করোনা আক্রান্তের হার দশ ভাগেরও কম। অথচ যেখানে অন্যান্য জেলায় এ হার ২৫ থেকে ২৭ ভাগ। গত একমাসে রাঙ্গামাটিতে করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন একজন।

Advertisement

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাঙ্গামাটিতে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কারণে করোনা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয়েছে। দ্রুত পরীক্ষার পর সাথে-সাথে রেজাল্ট পাওয়ার কারণে রোগ নিরূপণের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি অক্সিজেন প্ল্যান্টের কাজ শেষ হলে করোনা রোগী ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার সুযোগ আরও বেশি সৃষ্টি হবে।

জেলা সিভিল সার্জনের অফিস প্রদত্ত গত এক মাসের করোনা পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২৪ মার্চ রাঙ্গামাটিতে করোনা শনাক্ত হয় ৩ জন। এদিন রাঙ্গামাটির পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হয় ৪২ জনের নমুনা। গত একবছরে সেদিন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয় ১ হাজার ৩১৪ জন। এর একমাস পর গত ২২ এপ্রিল পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্ত হয় ১ হাজার ৪৩৯ জনের। একমাসের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয় ১২৫ জন। এই একমাসে নমুনা সংগ্রহ করা হয় ১ হাজার ৩৬২ জনের। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪৫-৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। করোনার প্রথম ঢেউয়ে রাঙ্গামাটিতে মৃত্যুবরণ করে ১৬ জন। আর গত একমাসে করোনায় রাঙ্গামাটিতে মৃত্যু হয়েছে একজনের।

রাঙ্গামাটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের পর দ্রুতই অসুস্থ রোগীরা পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন মানুষ। আগে যেখানে নমুনা সংগ্রহের পর রেজাল্ট পেতে ৭-১০দিন সময় প্রয়োজন হত এখন পিসিআর ল্যাব স্থাপনের পর নমুনা সংগ্রহ করে দিনে দিনেই রেজাল্ট জানিয়ে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত রোগ নিরূপণের কারণে করোনা ছড়ানোর সুযোগও কমে এসেছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশাসনের কঠোর নজরদারর কারণে দেশে করোনা ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও রাঙ্গামাটিতে করোনা শনাক্ত অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত রয়েছে।

Advertisement

রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, আগে রাঙ্গামাটি থেকে চট্টগ্রামে নমুনা পাঠানো হতো। সে রেজাল্ট পেতে আমাদের অনেক সময় লেগে যেত। কিন্তু বর্তমানে সেই অসুবিধা আর নেই। পিসিআর ল্যাব স্থাপনের পর সকালে কিংবা দুপুরে নমুনা সংগ্রহের পর বিকেলেই আমরা রেজাল্ট দিয়ে দিচ্ছি। এতে দ্রুত রোগ নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে রোগ ছড়ানোর সুযোগও কমে এসেছে।

রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ সংবাদকর্মী সুনীল কান্তি দে বলেন, দেশের অন্যান্য জায়গায় যেখানে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বগতি সেখানে রাঙ্গামাটিতে করোনা সংক্রমণ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকা একটা সুখকর বিষয়। অক্সিজেন প্ল্যান্টও যদি সঠিক সময়ে করা যেত, তাহলে মানুষ আরও বেশি সেবা পেতেন।

রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, রাঙ্গামাটিতে লিকুইড মেডিকেল অক্সিজেন (এলএমও) স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। তারপর আমরা প্ল্যান্টটি চালু করলে সাধারণ মানুষ এর সুফল পাবেন।

শংকর হোড়/আরএইচ/এমকেএইচ

Advertisement