একবার ভেবে দেখুন তো, যদি কোথাও ৬ মাস সূর্য ওঠে আর বাকি মাসগুলো অন্ধকারে থাকে; সেখানকার অবস্থা কেমন? আবার এমনো হতে পারে, মধ্যরাতে হঠাৎ সূর্য উঠেছে আকাশে, তখন আপনার কেমন দশা হবে?
Advertisement
তেমনই এক দেশ হলো নরওয়ে। এটি পৃথিবীর এমন একটি দেশ যেখানে মধ্যরাতে সূর্য ওঠে। সবসময় এমন ঘটনা না ঘটলেও বছরের বেশ কিছু সময়ে অনাকাঙ্খিত এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন সেখানকার জনগণ। এ ছাড়াও নরওয়ে সম্পর্কিত এমন অনেক তথ্য আছে; যেগুলো জানলে আপনি রীতিমতো অবাক হয়ে যাবেন!
নরওয়ে ইউরোপ মহাদেশের একটি রাজতান্ত্রিক দেশ। এটি সরকারিভাবে নরওয়ে রাজ্য হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বজুড়ে স্ক্যান্ডিনেভিয়ারের এ দেশটি মূলত মধ্যরাতের সূর্যের দেশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব নিদর্শন আছে নরওয়েতে। সেখানকার প্রতিটি স্থান দেখলে মনে হবে, রূপকথার একেকটি রাজ্য।
নরওয়ে অর্থনৈতিক দিক দিয়েও সমৃদ্ধশালী একটি দেশ। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে চতুর্থতম দেশ হলো নরওয়ে। শান্তিপূর্ণ দেশ নরওয়ের রাজধানীর নাম অসলো।
Advertisement
নরওয়ে সুইডেন ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯০৫ সালে ৭ জুন। এ দেশের আয়তন ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২৫২ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ৬৭তম দেশ।
২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নরওয়ের জনসংখ্যা ৫৩ লাখ ২৮ হাজার। এ দেশের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৪ শতাংশ মুসলিম এবং ৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ খ্রিস্টান। বাকিরা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশ নরওয়ে। ৬০ ডিগ্রি অক্ষাংশে অবস্থিত নরওয়ের রাজধানী অসলোয় জুন-জুলাই মিলিয়ে দু’মাস সবসময় দিনের আলো থাকে। অর্থাৎ এ সময়ে এখানে সূর্য অস্ত যায় না। এর ফলে এ সময় রাতের অন্ধকারের পরিবর্তে গোধূলির আলো দেখা যায় সারারাত।
অসলো শহর দক্ষিণ অংশে অবস্থিত। আরো উত্তরে ৭২ ডিগ্রি অক্ষাংশে আরো বেশি দিন এ সময় সূর্যালোক থাকে। শুধু অসলো নয়, প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত সুইডেনের স্টকহোম বা ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে ও রাশিয়ার বহু অঞ্চলে এর কাছাকাছি ঘটনা দেখা যায়।
Advertisement
সৌরজতের বিস্ময়কর ও অলৌকিক এ দৃশ্য দেখতে ভিড় জমায় পর্যটকরা। এ ছাড়াও নরওয়েতে রাতের আকাশে হরেক রঙা আলোর ছটা দেখা যায়।
পৃথিবীর অক্ষরেখা তার সমতলের ২৩.৫ ডিগ্রি ঝুঁকে যাওয়ার ফলে প্রতিটি গোলার্ধ গ্রীষ্মকালে সূর্যের দিকে হেলে যায়। আবার শীতকালে সেখান থেকে সরে যায়। ফলে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে বছরের একটি বিশেষ সময় মধ্যরাতেও সূর্য দেখা যায়।
তবে যখন কুমেরু অঞ্চলে শীতকাল, তখন দিন ও রাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যায় না। কারণ সূর্য সেখানে ওঠেই না। পুরো কুমেরু অঞ্চল অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। ঠিক তখন সুমেরু অঞ্চল পুরো ২৪ ঘণ্টাই সূর্যালোকিত দিন উপভোগ করে।
উত্তর গোলার্ধে গরম শুরু হয় ২১ জুন থেকে; তবে দক্ষিণ গোলার্ধে তা হয় ২১ ডিসেম্বর। জুনের শেষ ১০ দিনগুলো হোয়াইট নাইটস ফেস্টিভাল উদযাপন করে নরওয়েবাসী।
নরওয়ে বছরের আট মাস বরফের নিচে ঢাকা থাকে। বছরের দুই মাস এখানে সূর্য ওঠে না। নভেম্বরের ২১ তারিখ থেকে জানুয়ারির ২১ তারিখ পর্যন্ত সময়টাকে তাই ডার্ক পিরিয়ড বলা হয়। এই সময় আকাশে নর্দার্ন লাইট বা অরোরা বুরিয়াল দেখা যায়।
বিভিন্ন রঙের আলো অনেকটা রংধনুর মতো ফুটে ওঠে রাতের আকাশে। এ যেন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। যা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন! আকাশে লাল, সবুজ রঙের আলোর খেলা। এই অরোরা দেখতে অনেক পর্যটক এই সময়ে এখানে আসেন।
সূত্র: ভিজিট নরওয়ে
জেএমএস/জিকেএস