আন্তর্জাতিক

টিকা রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য বুমেরাং হয়ে ফিরছে

করোনাভাইরাস মহামারির তীব্রতার মধ্যে গত মাসের শেষের দিকে বিদেশে টিকা রফতানি স্থগিত করে ভারত। আগে নিজেদের লোকজনকে টিকা দেয়ার ‘যুক্তিতে’ এই পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতীয় সরকার। এখন সেই নীতিই যেন বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে তাদের দিকে। নিজেদের চাহিদা মেটাতে টিকার কাঁচামাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের এ সিদ্ধান্ত বদলাতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ টিকা উৎপাদনকারী দেশ ভারত। কিন্তু এক্ষেত্রে যেন ভারতীয়দের সুরেই জবাব দিচ্ছে মার্কিনিরা। ভারতের মতো তারাও বলছে, আগে নিজের চাহিদা, তারপর অন্যের। ফলে অনিশ্চয়তায় পড়েছে ভারতের টিকা উৎপাদনের ভবিষ্যৎ।

Advertisement

সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, আমেরিকান জনগণের প্রতি আমাদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমেরিকানদের টিকা দেয়ার বিষয়টি কেবল আমাদের স্বার্থেই নয়, বাকি বিশ্বের স্বার্থেও।’ অর্থাৎ তিনি পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারতে টিকার কাঁচামাল রফতানি তাদের কাছে আপাতত খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নয়।

শনিবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর টিকার কাঁচামাল পাঠানোর বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেনের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা করেছেন। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাও চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি কথা বলেছেন মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যানের সঙ্গেওয়াশিংটন সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কয়েকজনও টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে সমর্থন দিয়েছেন। তবে এটি পরিষ্কার যে, সেই প্রক্রিয়া এত সহজে হবে না।

Advertisement

এদিকে, টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় ভারতকে ফার্মা খাতে সহযোগিতা কমিয়ে দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল।

তার উদ্ধৃতি দিয়ে পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারিতে জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য আমাদের কাছে আসবে কি না তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, অবশ্যই ইউরোপের পক্ষ থেকে আমরা ভারতকে এত বড় ফার্মাসিউটিক্যাল উৎপাদক হতে দিয়েছি এই আশাতে যে, তারা সেই অনুসারে চলবে। কিন্তু এখন যদি সেটি না হয়, তাহলে বিষয়টি আমাদের পুনর্বিবেচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে জার্মানি তাদের শিল্পনীতি পরিবর্তন করতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে মেরকেল বলেন, এটি সত্যি যে আমরা বহু বছর আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করিনি।

ভারতের টিকা রফতানি বন্ধের প্রতিবাদে সরব হয়েছে আফ্রিকাও। গত বৃহস্পতিবার আফ্রিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক জন নেকেনগাসং হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ভারত যেন কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় আফ্রিকায় টিকা রফতানি বন্ধ না করে। তিনি বলেন, আপনারা যদি আফ্রিকা বা বিশ্বের অন্য অংশগুলোর আগে নিজেদের টিকা দেয়া সমাপ্ত করেন, তাহলে সেটি নিজেদের প্রতি সুবিচার হবে না। কারণ করোনার ধরন উদ্ভূত হবে এবং আপনাদের টিকাদান প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

Advertisement

করোনা মহামারির মারাত্মক ভয়াবহতা সত্ত্বেও আফ্রিকার অনেক দেশ এখনও টিকাদান কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি। আর যারা শুরু করেছিল, তারা দ্বিতীয় ডোজ কবে নাগাদ পাবে তা সেটিও নিশ্চিত নয়।

কেএএ/জিকেএস