মহামারি করোনাভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত ভারত। দেশটিতে করোনায় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৪৯ জন মারা গেছেন। তার মধ্যে দিল্লিতেই মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজারের বেশি মানুষের।
Advertisement
এই পরিস্থিতিতে জনবসতিপূর্ণ এলাকার পাশে গণচিতার ছবি সামনে এসেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুধু শ্মশানই নয়, ভারতের রাজধানীর কবরস্থানগুলোর অবস্থাও একই রকম। মরদেহ সমাহিত করার জায়গা পেতে হিমশিম খাচ্ছে করোনায় মৃতের পরিবারগুলো।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) ভারতের দৈনিক করোনা আক্রান্তে ফের রেকর্ড গড়েছে ভারত। দেশটিতে একদিনে নতুন করে দেশে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দিল্লিতেই নতুন আক্রান্ত ২৬ হাজার ১৬৯ জন। বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) রাতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দিল্লিতে একদিনে ৩০৬ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
শ্মশানের বাইরে লাইনেও জায়গা পাচ্ছেন না অনেকে
Advertisement
এর আগে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশের মতো জেলায় শ্মশানের বাইরে মরদেহ নিয়ে সারি সারি অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তবে দিল্লিতে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, শ্মশানের বাইরে লাইনেও জায়গা পাচ্ছেন না অনেকে। বাধ্য হয়ে বাড়িতেই প্রিয়জনের মরদেহ রেখে দিতে হচ্ছে।
চিতা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে আসা চোখ মুছতে মুছতে এ কথাই বলছিলেন সীমাপুরীর বাসিন্দা নীতীশ কুমার। তিনি বলেন, করোনায আক্রান্ত হয়ে দুই দিন আগে তার মা মারা গেছেন। কিন্তু কোনো শ্মশানে মায়ের মরদেহ দাহ করার জায়গা পাননি তিনি। তাই বাধ্য হয়ে দুই দিন বাড়িতেই মায়ের মরদেহ রেখে দিয়েছিলেন নীতীশ। নিজে বহু জায়গা ঘুরেছেন।
শেষমেশ একটি পার্কিং লটে গড়ে ওঠা অস্থায়ী শ্মশানে মাকে চিতায় তোলার জায়গা মেলে। বৃহস্পতিবার সেখানেই মায়ের মরদাহ করেন তিনি।
নীতীশ বলেন, ‘ মায়ের মরদেহ দাহ করতে কোথায় না গিয়েছি। কিন্তু কিছু না কিছু কারণে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। চিতা জ্বালানোর জন্য কাঠ পাওয়া যাচ্ছে না বলেও শুনতে হয়েছে।’
Advertisement
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘শহিদ ভগৎ সিংহ সেবা দল’-এর প্রধান জিতেন্দ্র সিংহ শান্টি বলেন, দিল্লিতে এমন দৃশ্য দেখতে হবে কেউ ভাবেনি। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, কারও বয়স ৫, কারও ১৫, কারও আবারও ২৫, তাদের মরদাহ করতে হচ্ছে। সদ্য বিবাহিত অনেকের মরদেহও শ্মশানে আসছে। এসব দৃশ্য চোখে দেখা যাচ্ছে না।
তিনি জানান, সীমাপুরীর পার্কিং লটে গড়ে ওঠা অস্থায়ী শ্মশানে বৃহস্পতিবার বিকেলে ৬০টি দেহ দাহ করা হয়েছে। জায়গা না পেয়ে পড়েছিল আরও ১৫টি মরদেহ। গত বছর পরিস্থিতি এতটা ভয়ঙ্কর ছিল না। সংক্রমণ যখন সর্বোচ্চে গিয়ে ঠেকে, সেই সময়ও একদিনে সর্বাধিক ১৮টি দেহ দাহ করতে হাত লাগিয়েছিলেন তিনি।
জিতেন্দ্র সিংহ আরও জানান, গত মঙ্গলবার একটি শ্মশানে ৭৮টি মরদেহ দাহ করা হয়েছে। জিতেন্দ্রর মা নিজে একজন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী। ১০ দিন আগে করোনায় আক্রান্ত হন তিনি কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনো হাসপাতালে জায়গা হয়নি বলে জানান তিনি।
খবর : আনন্দবাজার পত্রিকা
এমএসএইচ