জাতীয়

‘শত শত মানুষ আসে বাজারে, বিধিনিষেধ দিয়ে লাভ কী?’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ায় চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। তবে সরকারের এই বিধিনিষেধ মানার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না কাঁচাবাজারগুলোতে। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানীর অধিকাংশ বাজারে গিজগিজ করছে মানুষ। বিশেষ করে মহল্লার বাজারগুলোতে মানুষের ঢল নামছে।

Advertisement

এসব বাজারে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। সামাজিক দূরত্বের বালাই না থাকলেও অনেকে মাস্কও পরছেন না। আবার যারা বাজারে যাচ্ছেন তাদের সবাই বাজার করছেন না। অকারণেই অনেকে বাজারে ও রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছেন।

সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এভাবে বাজারে ঘোরাঘুরি করলেও তা দেখার যেন কেউ নেই। ফলে ইচ্ছামতো ঘর থেকে বের হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন একদল মানুষ।

শুক্রবার সকালে রামপুরার মোল্লাবাড়ি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। রাস্তার পাশে বসা এই বাজারে চলাচল করতে হরহামেশাই একজন আরেকজনের সঙ্গে ধাক্কা খাচ্ছেন। এদের কেউ বাজার থেকে সবজি কিনছেন, আবার কেউ কেউ অকারণে ঘোরাঘুরি করছেন।

Advertisement

বাজারে সবজি কিনতে আসা নজরুল নামের একজন বলেন, ‘এ বাজারে সবসময় মানুষের এমন ভিড় থাকে। করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে এখন আর ভয় নেই। ভয় থাকলে মানুষ এভাবে বের হতো না। এখানে পুলিশ কম আসে। কেউ মানুষকে ভিড় করতে নিষেধ করে না। তাই যে যার মতো চলে।’

বাজারটির পাশের এক বাসার বাসিন্দা আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার যে বিধিনিষেধ দিয়েছে তা এই বাজারে তাকালে বোঝা যায় না। প্রতিনিয়ত শত শত মানুষ এই বাজারে আসছে। এভাবে চললে বিধিনিষেধ দিয়ে আর লাভ কি?’

তিনি বলেন, ‘এখানকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম। প্রতিদিন করোনায় এতো মানুষ মরছে তারপরও কেউ সচেতন হচ্ছে না।’

মোল্লাবাড়ি বাজার থেকে মালিবাগ হাজীপাড়ার বৌ-বাজারে গিয়েও দেখা যায়, শতাধিক মানুষ বাজারটিতে ঘোরাঘুরি করছেন। একজন আরেকজনের গা-ঘেঁসে চলাচল করছেন। আবার যারা বাজার করছেন তারাও দোকানের সামনে গা-ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকছেন। যেন করোনা নিয়ে কারও মধ্যে কোনো দুশ্চিন্তা নেই।

Advertisement

বাজারটির ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন, ‘আমাদের এই বাজারে তুলনামূলক কম দামে পণ্য পাওয়া যায়। তাই মানুষের ভিড় একটু বেশি থাকে। মানুষের ভিড় হলেও এই বাজারের কোনো ব্যবসায়ী করোনা আক্রান্ত হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও আমাদের এই বাজার খোলা ছিল। এই বাজার থেকে নিম্ন আয়ের মানুষই বেশি বাজার করে। এখানে বাজার বসে, মানুষ আসে তা সবাই জানে। কেউ কোনো বাধা দেয় না। মাঝেমধ্যে পুলিশ এসে ঘুরে যায়। বাজারের সব ব্যবসায়ী পুলিশের পরিচিত।’

আলেয়া নামের একজন বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই এভাবে বাজার করি। আল্লাহর রহমতে এখনো আমাদের কিছু হয়নি। আর আল্লাহ যা কপালে লিখে রেখেছে, তা হবেই। এ নিয়ে এতো চিন্তা করে লাভ নেই!’

বাজারটিতে ঘোরাঘুরি করা সজিব নামের একজন বলেন, ‘বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে না। তাই একটু হাঁটতে বের হয়েছি। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাসায় ফিরে যাবো।’

বাজারটির পাশের একটি ভবনের বাসিন্দা আলম বলেন, ‘গতবছর বাজারে পুলিশের গাড়ি আসতো। গাড়ি থেকে মাইকিং করে করোনা বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা হতো। তারপরও মানুষ কিছুই মানতো না। তবে পুলিশ লাঠি নিয়ে আসলে দৌড়ে পালাত। কিন্তু এবার এর কিছু নেই।’

তিনি বলেন, ‘আগে করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভয় ছিল, এখন তা নেই। সরকার চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও বাজারে কোনো নজরদারি নেই। ফলে সবাই ইচ্ছেমতো চলছে। এ অবস্থা চললে সংক্রমণ কমবে কীভাবে?’

এমএএস/এমএইচআর/এমএস