করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মোবাইলে গেইমে জড়িয়ে পড়ছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিশোর, তরুণ ও যুবকরা পাবজি, তিনপাত্তি, ফ্রি ফায়ার গেমসে ঝুঁকে পড়ছে।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে উঠতি বয়সের শিক্ষার্থী ও পুরো যুব সমাজ পাপজি, তিনপাত্তি, ফ্রি ফায়ার নামক গেইমের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। যে সময় তাদের ব্যস্ত থাকার কথা বই আর খেলার মাঠে।সে সময়ে তারা তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ঘরকুনো হয়ে গেইমের নেশায় বুদ হয়ে রয়েছে।১০-২৫ বছরে এসব শিশু, কিশোর ও তরুণরা প্রতিনিয়ত স্মার্টফোনে গেইমে আসক্ত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাপজি গেইমে আসক্ত এক যুবক জানান, প্রথমে পাবজি গেইম ভালো লাগত না। কিছু দিন বন্ধুদের দেখাদেখি খেলতে গিয়ে এখন আসক্ত হয়েছি।এখন না খেললে ভালো লাগে না।
স্থানীয় দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী জনান, আগে এসব গেমস সম্পর্কে জানতাম না। এখন নিয়মিত খেলি। মাঝে মধ্যে খেলতে না পারলে মুঠোফোন ভেঙে ফেলার উপক্রম হয়।এসব গেমস একবার খেললে আর ছাড়া সম্ভব নয় বলে দাবি ওই শিক্ষার্থীর।
Advertisement
মোবাইল গেইম আসক্তিকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বলে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি প্রথমবারের মত এটাকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যেটাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোগব্যাধির শ্রেণি বিন্যাসের তালিকায় ‘গেইমিং রোগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষাক্ষীর মা বলেন, করোনায় মোবাইল গেইমসে সবচেয়ে বেশি আসক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা ।তারা লেখাপড়া বাদ দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ফ্রি ফায়ার নামক গেইম নিয়ে ব্যস্ত। যা তাদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
মোবাইল গেইম মাদকের চেয়েও ভয়ঙ্কর উল্লেখ করে গাজীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আতিকুর রহমান ভূঁইয়া জানান, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোর, তরুণ ও যুবকরা হতাশা থেকেই এসব গেইমে ঝুঁকে পড়েছে। ফলে বাড়ছে কিশোর অপরাধ। তাই সন্তানদের বাঁচাতে হলে অভিভাবকদের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহল, শিক্ষক এবং প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মসলিন কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার দাস বলেন, আগে অবসর সময় খেলাধুলার মধ্য দিয়ে পার হতো। এখন দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে মোবাইলে গেইম মহামারী আকার ধারণ করেছে। এতে একদিকে তরুণদের ভবিষ্যৎ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে কিশোর অপরাধসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ বেড়েই চলছে।
Advertisement
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, মোবাইল গেইমে সবচেয়ে বেশি আসক্ত হচ্ছে স্কুল পড়ুয়ারা।অনেকেই এ খেলার পেছনে অর্থ ব্যয় করছেন। অভিভাবকসহ সমাজের সবাই মিলে এ বিষয়ে তদারকি না করলে ভবিষৎ ভয়ংকর হতে।তাই সবাইকে সচেতন হতে আহ্বান জানান তিনি।
আব্দুর রহমান আরমান/এএইচ/জেআইএম