উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় ঝালকাঠিতে সুগন্ধি বোম্বাই মরিচ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়ির আঙ্গিনার কোণে এবং কৃষকদের কৃষি খেতে চাষ করা হচ্ছে সুগন্ধি বোম্বাই মরিচ। আবার অনেকে শখের বসে বভনের ছাদেও টবের উপরে চাষ করেন বোম্বাই মরিচ গাছ। গ্রাম্য ভাষায় সুগন্ধি বোম্বাই মরিচকে ঘৃত বোম্বাই বলা হয়। উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির অধিকাংশ মানুষই কৃষি নির্ভর।
Advertisement
এখানকার উৎপাদিত এই সুগন্ধি বোম্বাই মরিচের চাহিদা রয়েছে সারাদেশেই। সীমান্ত পেরিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশেও। তাই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এখান থেকে এ মরিচ কিনে সারাদেশে সরবরাহ করে থাকে। তবে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পান না বলে অভিযোগ রয়েছে কৃষকদের। সে তুলনায় মধ্যস্বত্বভোগী পাইকারদের লাভ বেশি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রীষ্মের দুঃসহ গরমে অনেকেই ভাতের সঙ্গে সুগন্ধি বোম্বাই মরিচ খেতে পছন্দ করেন। আর তাই বাজার থেকে অন্যান্য সবজির সঙ্গে বোম্বাই মরিচও কিনে থাকেন। তবে ক্রেতারা জানেন না তাদের কেনা এই মরিচ উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠি থেকে এসেছে। সদর উপজেলার ২২টি গ্রামের প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে এ বছর ঘৃত কাঞ্চন জাতের সুগন্ধি মরিচের আবাদ হয়েছে। রাসায়নিক সার দেয়া লাগে না এবং পোকা মাকড়ের উপদ্রব কম হয় বলে কৃষকরা এই মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
প্রতিটি গাছ থেকে এক মৌসুমে ৫০০ থেকে ১ হাজার মরিচ পাওয়া যায় যা বিক্রি করে কম হলেও ৩০০ টাকা পাওয়া যায়। একটি গাছের জন্য ৩ থেকে ৫ বর্গফুট জায়গা লাগে। সারা দেশেই এখানকার এই সুগন্ধি মরিচের চাহিদা রয়েছে তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এখানকার হাট বাজারে ভিড় জমান।
Advertisement
এখান থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে এ মরিচ কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে। তবে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পান না। কৃষিবিভাগ সূত্র জানিয়েছে, কম খরচে বেশি লাভ পাওয়া যায় বলে এ অঞ্চলের কৃষকরা সুগন্ধি বোম্বাই মরিচ চষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাছাড়া এ মরিচ চাষে আলাদা জমি লাগে না অন্যান্য সবজির সাথি ফসল হিসেবে চাষ করা যায়।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার পাঁজিপুথি পাড়া, শতদশকাঠি ও ভমিরুলীতে প্রতি সপ্তাহে বসে বোম্বাই মরিচের হাট। বৃহস্পতিবার ও রবিবারে হাট বসে পাঁজিপুথি পাড়ায়। শতদশকাঠিতে হাট হয় শনিবার ও বুধবার। আর ভীমরুলী বাজারে হাট ছাড়া প্রতিদিনই বিক্রি হয় । এসব হাটে বোম্বাই মরিচের পসরা সাজিয়ে বসে পাইকাররা।
পাইকাররা আবার এই মরিচ পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাগানগুলো থেকে কিনে আনেন। পাঁজিপুথি পাড়া হাটের মরিচের পাইকার মতিন হাওলাদার জানান, তারা ১ হাজার বোম্বাই মরিচ ৩০০ টাকায় পাইকারি কিনে সুবিধাজনক দামে আবার ঝালকাঠির বাইরে থেকে আসা পাইকারদের কাছে পাইকারি বিক্রি করেন।
তিনি জানান, এই বোম্বাই মরিচের বড় চালানটাই যায় ঢাকার কাওরান বাজারে। এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট ও ভারতেও এখান থেকে বোম্বাই মরিচের পাইকারি চালান হয়। শতদশকাঠি বোম্বাই মরিচ চাষিরা জানিয়েছেন, শতদশকাঠি, পাঁজিপুথিপাড়ায় ও ভীমরুলী বাজারে প্রতি হাটে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার বোম্বাই মরিচ বেচা কেনা হয়। কোন কোন সময় ফলন বেশি ভালো হলে লক্ষাধিক টাকাও কেনা বেচা হয় ।
Advertisement
ঝালকাঠি সদর উপজেলার ৯টি গ্রামে চাষ হয় বোম্বাই মরিচের । গ্রামগুলো হলো জগদীশপুর, শতদশকাঠি, শাখাকাচি, কাপড়কাঠি, খাজুরা, ভীমরুলী, ডুমুরিয়া, মীরাকাঠি ও গইওর। এসব গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক বোম্বাই মরিচ চাষের সাথে জড়িত। এসব গ্রামের চাষিরা ধানী জমিতে কাঁদি কেটে চাষ করেন বোম্বাই মরিচের। একটি গ্রামে ধানের চাষ হয় না বললেই চলে।
শতদশকাঠি গ্রামের বোম্বাই মরিচ চাষি রিপন বড়াল জানান, কার্তিক মাসে তারা গাছ লাগান এবং ফসল তোলেন চৈত্র-বৈশাখ মাসে। মার্চ এবং এপ্রিল মাসে বেশি ফলন হয়। এবার তিনি ১ বিঘা জমিতে বোম্বাই মরিচের চাষ করেছেন।
কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি হলে এবার আরো বাম্পার ফলন হতো বলে তিনি দাবি করেন। একই গ্রামের আরেকজন বোম্বাই মরিচ চাষি নারায়ন হাওলাদার জানান, তিনি ২৬ শতাংশ জমিতে এবছর বোম্বাই মরিচ লাগিয়েছেন। তিনি জানান এ অঞ্চলের ৯টি গ্রামের বোম্বাই মরিচের ফলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা হাটগুলো আস্তে আস্তে প্রসারিত হচ্ছে।
প্রতি বছরই বিক্রি বাড়ছে তাদের। তবে নারায়ন হাওলাদারসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য বোম্বাই মরিচ চাষি ও এর পাইকারি বিক্রেতারা মনে করেন আরো বেশি প্রচার হলে দক্ষিণাঞ্চলের এই ব্যতিক্রমধর্মী হাটে সারাদেশ থেকে আসা ক্রেতার সংখ্যা আরো বাড়তো। তাই এসব গ্রামের বোম্বাই মরিচ চাষি ও পাইকারি বিক্রেতারা এ ব্যাপারে মিডিয়ার সহযোগিতা ও সহানুভূতি কামনা করেছেন।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ফজলুল হক জানান, খুচরা বাজারে কোনো কোনো সময় একটি মরিচ ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয় অথচ এর উৎপাদক মরিচ প্রতি এক টাকাও পায় না। লাভের বেশির ভাগ তুলে নেয় পাইকারা এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মনিটরিং করলে কৃষকরা লাভবান হতে পারে।
মো. আতিকুর রহমান/এমএমএফ/এমকেএইচ