জাতীয়

চালে নাভিশ্বাস নিম্ন আয়ের মানুষের

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মালিবাগ হাজীপাড়ার একটি মুদি দোকানে চাল কিনতে যান গার্মেন্টসকর্মী হাজেরা। আটাশ চালের দাম শুনতেই দোকানি জানান কেজি ৫৮ টাকা। দাম শুনেই কিছুটা মলিন হয়ে গেছে হাজেরার মুখ। পরে ৫২ টাকা দিয়ে এক কেজি মোটা চাল কিনে বাসার দিকে রওনা হন ওই পোশাক শ্রমিক।

Advertisement

এ সময় হাজেরার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ১২ হাজার টাকা বেতনে হাজীপাড়ার একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। তার এই আয় দিয়েই চলে তিনজনের সংসার। চালের দাম বেশি হওয়ায় অনেক দিন ধরে টিসিবির চাল কিনে খান। কিন্তু হঠাৎ করেই চাল ফুরিয়ে গেছে। আবার অফিসেও যেতে হবে তাই দোকানে চাল কিনতে এসেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা খুব কষ্টে আছি। কোনো রকমে খেয়ে, না খেয়ে বেঁচে আছি। বাজারে সবকিছুর আগুনের মতো দাম। কোনো রকমে আলু ভর্তা-ভাত খাবো তারও উপায় নেই। আলুর কেজি ২০ টাকা। চালের কেজি ৫০ টাকার ওপরে। চালের দাম কিছুটা কম হলেও কষ্ট একটু কম হতো।

তিনি আরও বলেন, অনেক দাম হওয়ায় দোকানের চাল খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ন্যায্যমূল্যের চাল কিনি। কিন্তু লাইনে দাঁড়ানো সম্ভব না। এখন বাচ্চাদের জন্য রান্না করে অফিসে যাব। অফিসে যেতে দেরি হলে অনুপস্থিত দেখিয়ে বেতন কাটবে।

Advertisement

শুধু হাজেরা নয় চালের বর্তমান দাম সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বেশ ভোগাচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে খোলা মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকা কেজি। মাঝারি মানের পইজাম ও লতা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। আর গরিবের মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা।

বাজারে চালের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় গত জানুয়ারি মাসে চাল আমদানির শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে সরকার। অবশ্য সরকারের এই ছাড়ের সুফল মেলেনি। সরকার যখন চাল আমদানির শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়, সে সময় রাজধানীর বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছিল ৬০ থেকে ৬৪ টাকা। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের কেজি ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। আর মোটা চাল ছিল ৫০ টাকার নিচে।

চালের দামের বিষয়ে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করা মইদুল ইসলাম বলেন, চালের বাজারে কোনো নজরদারি নেই। দফায় দফায় দাম বাড়ছে। এখন এক কেজি মিনিকেট চাল কিনতে ৭০ টাকা গুণতে হয়। এ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। সব দায়, কষ্ট যেন সাধারণ মানুষের।

তিনি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অধিকাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম কমেনি। বরং উল্টো আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরা খুবই কষ্টে আছে।

Advertisement

রিকশাচালক প্লাবন বলেন, লকডাউনের কারণে আমাদের আয় অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। দিনে একশ টাকা আয় করা কষ্টকর হয়ে গেছে। এর মধ্যে তরিতরকারি সবকিছুর দাম বেশি। ৫০ টাকার নিচে এক কেজি চাল পাওয়া যায় না। এখন বুঝেন, আমরা কেমন আছি। চালের দাম কম থাকলেও কোনো রকমে পানি দিয়ে সেদ্ধ করে খেতে পারতাম। কিন্তু পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন এক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়।

চালের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, সপ্তাহখানেক আগে চালের দাম বেড়েছে। এরপর নতুন করে চালের দাম বাড়া বা কমার ঘটনা ঘটেনি। মিনিকেট চাল কোম্পানিভেদে ৬৬ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আটাশ চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা। আর মোটা চাল ৫২ টাকা।

তিনি বলেন, আড়তে যে ধরনের কথা শুনছি তাতে মনে হচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে। কারণ হাওরের ধান ওঠা শুরু হয়েছে। কিছুদিন পর এই ধানের চাল বাজারে আসবে। নতুন চাল বাজারে আসলে দাম কমবে। তবে চালের দাম খুব বেশি কমবে বলে মনে হয় না।

কিছুদিন পর চালের দাম কমতে পারে এমন আশার কথা শুনিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ন্যাশনাল রাইস মিলের কর্ণধার মোহাম্মদ হাসান রাজু। সম্প্রতি তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সাধারণত এই সময়ে বাজারে চালের সরবরাহ কম থাকে। এবারও সেটাই দেখা যাচ্ছে। এ কারণে চালের একটু দাম বেড়েছে। তবে ১০-১৫ দিনের মধ্যে চালের দাম কমে যাবে।

কী কারণে চালের দাম কমবে- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে হাওরের ধান ওঠা শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বগুড়া, নওগাঁর ধান ওঠা শুরু হবে। এসব ধানের চাল বাজারে আসলে দাম কমে যাবে।

এমএএস/এআরএ/এমকেএইচ