সাহিত্য

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবি শঙ্খ ঘোষের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কবি শঙ্খ ঘোষের শেষকৃত্য পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করা হয়েছে। বুধবার (২১ এপ্রিল) স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশ্চিমবঙ্গের নিমতলা মহাশ্মশানে কবির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে কবি তোপধ্বনি পছন্দ করতেন না। এজন্য পরিবারের দাবি অনুযায়ী তোপধ্বনি দেয়া হয়নি।

Advertisement

কবি শঙ্খ ঘোষের মরদেহ তার উল্টোডাঙার বাসভবন থেকে প্রথমে সল্টলেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার ছোট ভাইয নিত্যপ্রিয় ঘোষের বাসা। এরপর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিমতলা মহাশ্মশানে।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবির শেষকৃত্য করা হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। তবে কবির শেষবিদায়ের সময় তোপধ্বনি করা হবে না বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কবির প্রতি শোক জানাতে মুখ্যমন্ত্রী জানান, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদার কবিকে শেষ সম্মান জানানো হলেও ‘গান স্যালুট’ বাদ রাখা হবে। কারণ তোপধ্বনি পছন্দ করতেন না কবি। তার পরিবারও একই দাবি জানান।

এর আগে সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৮৯ বছর বয়সী কবি শঙ্খ ঘোষ। গায়ে জ্বর নিয়ে গত সপ্তাহে করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন কবি। ১৪ এপ্রিল বিকেলে জানা যায়, তিনি করোনা পজিটিভ। এছাড়া এমনিতেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন এই কবি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়।

Advertisement

করোনা সংক্রমিত হওয়ার পর ঝুঁকি না নিয়ে বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন শঙ্খ ঘোষ। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। বুধবার সকালে তাকে ভেন্টিলেটর দেয়ার চেষ্টাও হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে চিরতরে চলে গেলেন তিনি।

দীর্ঘ কর্মজীবনে নানা ভূমিকায় দেখা গেছে শঙ্খ ঘোষকে। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব আইওয়া এবং বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৯২ সালে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরগ্রহণ করেন। বছর দুয়েক আগে ‘মাটি’ নামের একটি কবিতায় মোদি সরকারের মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন তিনি।

বাংলা কবিতার জগতে শঙ্খ ঘোষের অবদান কিংবদন্তিপ্রতিম। ‘দিনগুলি রাতগুলি’, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’ তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তার প্রসিদ্ধি সর্বজনবিদিত।

সাহিত্যজীবনে একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শঙ্খ ঘোষ। ১৯৭৭ সালে ‘বাবরের প্রার্থনা’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘সাহিত্য অকাদেমি’ পুরস্কার পান।

Advertisement

১৯৯৯ সালে কন্নড় ভাষা থেকে বাংলায় ‘রক্তকল্যাণ’ নাটকটি অনুবাদ করে ফের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া রবীন্দ্র পুরস্কার, সরস্বতী সম্মান, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালে তাকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করে তৎকালীন ভারত সরকার।

শঙ্খ ঘোষের আসল নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। তার বাবা মনীন্দ্রকুমার ঘোষ এবং মা অমলা ঘোষ। ১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বর্তমান চাঁদপুর জেলায় তার জন্ম। বংশানুক্রমিকভাবে পৈত্রিক বাড়ি বরিশালের বানারিপাড়ায়।

তবে শঙ্খ ঘোষ বড় হয়েছেন পাবনায়। বাবার কর্মস্থল হওয়ায় তিনি বেশ কয়েক বছর পাবনায় অবস্থান করেন এবং পাবনার চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় কলা বিভাগে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

এএএইচ/জেআইএম