করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ বাড়ায় সরকারঘোষিত লকডাউনে দিন-রাত একাকার হয়ে গেছে মধ্যবয়সী অ্যাম্বুলেন্সচালক এমরান হোসেনের। করোনা রোগীদের বাসা থেকে হাসপাতালে নেয়া, মরদেহ হাসপাতাল থেকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার কাজে কেটে গেছে টানা তিন সপ্তাহ। প্রতিদিন তিনি ১২-১৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স চালিয়েছেন। রাতে বা দিনে যেটুকু অবসর মিলেছে ঘুমিয়েছেন অ্যাম্বুলেন্সেই। খাওয়া-দাওয়াও সেখানেই।
Advertisement
এমরান পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সাভারে। তবে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় পরিবার-পরিজনদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে গত তিন সপ্তাহ আর বাড়িতে যাননি। অ্যাম্বুলেন্সকেই বানিয়ে ফেলেছেন ঘর। রোগী ও তার স্বজনরা হয়ে উঠেছে এমরানের আপনজন।
তবে তিন সপ্তাহ পর রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। নিজেকে করোনা থেকে নিরাপদ রাখতে যে পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রয়োজন তা দেড় বছরে বুঝেছেন এই চালক। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা এমরান এখনও জানেন না চালককে কে দেবে এসব সুরক্ষাসামগ্রী।
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের সেইফটি (নিরাপত্তা) দেয়ার জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। মালিক সমিতি, সরকার কিংবা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেউ এগিয়ে আসছে না।’
Advertisement
বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় অ্যাম্বুলেন্সচালক এমরান হোসেনের। দীর্ঘ আট বছর ধরে তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছেন। তবে গত বছরে করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লে সৃষ্টি হয় মানবিক বিপর্যয়। এমন পরিস্থিতি তিনি আগে কখনও দেখেননি।
এমরান বলেন, ‘প্রায় ৮ বছর ধরে এম্বুলেন্স চালাচ্ছি। গত বছর আরও অবস্থা খারাপ ছিল। সেই সময় প্রায় ৬ মাস অ্যাম্বুলেন্সের কাটিয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে একদিনও বাসায় যায়নি।’
নিজের সুরক্ষায় ১৪০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন একটি পিপিই। ময়লা হয়ে যাওয়ায় সেটা নিয়মিত পরতে পারেন না। তার কাছে সুরুক্ষা বলতে, একটা মাস্ক আর অর্ধেক খালি হওয়া বোতলের স্যানিটাইজার।
তিনি বলেন, ‘আমরা কোম্পানি থেকে পিপিই পাচ্ছি না। ১৪০০ টাকা দিয়ে আমি নিজে একটা পিপিই কিনেছি। সেটা ময়লা হয়ে যাওয়ায় পরিস্কার করতে দিয়েছি। সাবধানতার সঙ্গে করোনা রোগী আনা নেয়ার কাজ করছি। মানুষের জীবন তো বাঁচাতে হবে। এইখানে তো আমার বাবা, মা ও থাকতে পারত। এসব মাথায় রেখে করোনা রোগী নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটছি।’
Advertisement
নিজের পরিবারের কথা ভেবে গত তিন সপ্তাহ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এই চালক বলেন, ‘আমার সেইফটি আমাকে মেনে চলতে হচ্ছে। কোম্পানি কিচ্ছু দিচ্ছে না। আর লকডাউন শুরু হওয়ার পরে আমি বাসায় যাচ্ছি না। সেখানে ছেলে-মেয়ে আছে, পরিবার আছে। তাদের কথা চিন্তা করে গাড়িতে খাওয়া, দাওয়া, ঘুম, সবকিছু অ্যাম্বুলেন্সেই করছি।’
তিনি বলেন, ‘গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরু হলে আমি অ্যাম্বুলেন্সেই থাকা-খাওয়া শুরু করি। মালিক কোনো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না। কোম্পানি থেকে হ্যান্ডওয়াশ পেয়েছি। এখন পর্যন্ত কোন শারীরিক অবস্থা ভাল। এখন একটু রোগীর চাপ কম, গত সপ্তাহে প্রতিদিন ৩-৪ জন রোগী আনা-নেয়ার চাপ থাকলেও এখন সেটা নেই। কোনো দিন রোগীও পাওয়া যাচ্ছে না।’
বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগী নিচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ রোগী কুয়েত মৈত্রী, কুর্মিটোলা, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে, মুগদা হাসপাতালে আসতে চান। আর প্রাইভেট হাসপাতালগুলো থেকে রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছে। সেখানে সিট নেই, তারা রোগী নিচ্ছে না। রোগী নিয়ে মাঝেমধ্যেই অনেক হাসপাতালে ঘুরতেও হয়েছে।’
এসএম/এএএইচ/জিকেএস