এবারের আইপিএলে আসল সাকিবকে দেখা যাচ্ছে না। তিন ম্যাচে করেছেন সাকুল্যে (৫+৯+২৬) ৪০ রান। স্ট্রাইকরেট ১০০’র ও নিচে। সাকিবের ব্যাটকে আগে এত বর্ণহীন, কে দেখেছে কবে?
Advertisement
‘পাওয়ার হিট’ তো বহূদুরে, দেখে মনে হচ্ছে হাত খুলে ফ্রি-স্ট্রোক খেলাও ভুলে গেছেন সাকিব। ফ্রি-স্ট্রোক খেলাও সম্ভব হচ্ছে না। সিঙ্গেলস-ডাবলসে খেলছেন। হঠাৎ একটি বাউন্ডারি হাঁকাচ্ছেন। তিন ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে একটি মাত্র ছক্কা।
ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিস গেইল আন্দ্রে রাসেল, কাইরন পোলার্ডের মত শক্ত-সমর্থ শরীরের অধিকারী তিনি নন। তাদের মত অবলীলায় যে কোন বলকে শুধু শরীরের শক্তিতে বাতাসে ভাসিয়ে সীমানার ওপারে পাঠানো বা বিগ হিট নেয়ার ক্ষমতা-সামর্থ্য দুই’ই কম।
কিন্তু তারপরও সবার জানা, সাকিব শটস খেলতে পারেন। আলগা বল পেলে সীমানার ওপারে পাঠানোর সামর্থ্য আছে ভালই। উইকেটের সামনের চেয়ে দুই দিকে বিশেষ করে অনসাইডে মিড উইকেট আর স্কোয়ার লেগ দিয়ে তুলে মারতেও পারেন।
Advertisement
কিন্তু এবারের আইপিএলে সে সব কিছুই হচ্ছে না। কেমন যেন আড়ষ্ট, ছন্নছাড়া সাকিব। বিগ হিট নিতেই যেন কষ্ট হচ্ছে। যা দেখে অতিবড় ভক্তও হতাশ। ঠিক হিসেব মেলানো কঠিন।
কেন সাকিব পারছেন না? তা নিয়ে দেশে নানা জল্পনা-কল্পনা। জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে প্রিয় শিষ্য সাকিবের বর্তমান ব্যাটিং ও বোলিং নিয়ে অনেক খোলামেলা কথা বলেছেন কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম। তার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণে উঠে এসেছে বেশ কিছু বিষয়।
কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম অবশ্য এটাকে সাকিবের বড় ব্যর্থতা, সামর্থ্যের খুব বড় ঘাটতি বলে মনে করেন না। তার মনে হয়, আইপিএলে যে সাকিবকে দেখা যাচ্ছে, সেটা আসল সাকিব নন। এখন যে ব্যাটসম্যান সাকিবের দেখা মিলছে, আসলে ব্যাটসম্যান সাকিব এর চেয়েও ভাল। কোচ ফাহিম বলেন, ‘আসলে সাকিব যে ব্যাটিং করতে পারে, তা করতে পারছে না। এই না পারা আমার কাছে খুব অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। কারণ ভুলে গেলে চলবে না, তার এক বছরের বেশি সময়ের একটা লম্বা গ্যাপ আছে। সে বড় সময় খেলার বাইরে ছিল। এই দীর্ঘ সময় বাইরে থেকে এসে নিজেকে ফিরে পেতে সময় লাগে। বড় সময় বাইরে থেকে মাঠে ফিরে সবার আগে দরকার লম্বা ইনিংস খেলা। ফিরে এসে বড়সড় ইনিংস খেলার চর্চা দরকার। সেটা সাকিব করেনি বা করতে পারেনি। সে যদি ঘরোয়া ক্রিকেটে এনসিএল বা বিসিএল খেলতো, তাহলে তার লম্বা সময় উইকেটে থাকার অভ্যাস তৈরি হতো। তাহলে ভাল হতো। লম্বা ফরম্যাটে খেলতে পারলে খুব উপকার হতো।’
‘তা হয়নি। নিজের গতি ও ছন্দ ফিরে পেত। এই আইপিএলেও নিজের স্বাভাবিক গতি ও ছন্দে খেলতে পারতো। এত লম্বা ব্রেক থেকে আসার পর টি-টোয়েন্টির পেসে মানিয়ে নেয়া সহজ কর্ম নয়। এটা একটা বড় বাঁধা ও চাপ। আর টি-টোয়েন্টির বড় সমস্যা হলো, এই ফরম্যাটের পেসে যদি খেলতে হয় সেটা অনেক ব্যাটসম্যানের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। আইপিএলে যে গতিতে খেলতে হবে, একজন ব্যাটসম্যান যদি মনে করে ওই জায়গায় আমি নেই এখন, তাহলে তার জন্য বিগ প্রবলেম।’
Advertisement
‘প্র্যাকটিস করে টি-টোয়েন্টি খেলা মুশকিল। আপনি ভাবলেন, প্র্যাকটিস খুব ভাল করেছি, এখন আমি মাঠে গিয়ে খুব ভাল পারফরম করবো, তা খুব একটা হয় না। আসলে ভাল করতে হলে দরকার ভাল ফর্ম। ফর্ম যদি ঠিক থাকে, তাহলে ব্যাটে বলে হবে। সেটা ঠিকমত হওয়াটা দরকারী। যে কোন কারণেই হোক তা হচ্ছে না সাকিবের।’
‘শুধু আইপিএলের কথা বলবো কেন, আমি বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতেও দেখেছি সাকিব যেমনই খেলুক না কেন, যখনই বিগ হিট নিতে গেছে, তখনই আউট হয়েছে। এখানেও তাই হচ্ছে। বিগ হিট নিতে পারছে না ঠিকমত।’
ফাহিমের অনুভব, কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে। সে কারণেই সাকিব ঠিক নিজের মত করে ব্যাটিং করতে পারছে না। বিগ হিটিংয়ের ব্যাপারে কোথাও কোন দুর্বলতা, ঘাটতি রয়ে গেছে। এটা নিয়ে হয়ত কাজ করতে হবে।
তবে ফাহিম হতাশ নন। চিন্তার কারণও মনে করেন না। তার বিশ্বাস, সাকিব নিজেই এ অবস্থার উত্তরণ ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। তার ভাষায়, ‘সাকিব তীক্ষ্ম বুদ্ধিমান। ক্রিকেট জ্ঞান প্রখর। সে নিজেই জানবে, বুঝবে কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস হি উইল ওভার কাম দিস।’
অনেকেরই মত সাকিব যেখানে খেলতে নামছে, সেটা তার নিজের পজিসন নয়। যেখানে গিয়েই চালিয়ে খেলতে হচ্ছে। দেড়শোর ওপরে স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা প্রয়োজন। সেখানে সাকিব ঠিক উইকেটে গিয়েই এমন চালিয়ে খেলে অভ্যস্ত নয়। তাই তাকে আরও ওপরে খেলানো হলে হয়ত সাকিবের কাছ থেকে বেটার সার্ভিস মিলবে। আপনার কী মত?
কোচ ফাহিম বলেন, ‘আমিও তা মনে করি। কারণ এখন সাকিবকে যেখানে খেলানো হচ্ছে, সেখানে আর কোন অপশন নেই। গিয়েই মারতে হয়। ওপরে খেললে নতুন বল মেলে। ত্রিশ গজের ভিতরে ফিল্ডার বেশি। তাদের মাথার ওপর দিয়ে খালি জায়গায় বল পাঠাতে পারলে রান করা তুলনামূলক সহজ। আর একটু হলেও রয়ে সয়ে খেলার সুযোগ থাকে। ইনিংস সাজানোর অবকাশও মেলে।’
তবে ফাহিমের মনে হয় না, আইপিএলে সাকিব সে সুযোগ পাবেন কি না? কারণ এটা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট। কেকেআরের বেঞ্চে আরও নামি ও বড় অপশন আছে। তাদের রেখে সাকিবকে ওপরে খেলানো সম্ভব কি না? সেটাও খুঁটিয়ে দেখতে হবে।
ব্যাটসম্যান সাকিবের ফর্মে অসস্তুষ্ট হলেও সাকিবের বোলিং নিয়ে খুশি কোচ ফাহিম। বোলিংটা সে ভালই করছে। দ্বিতীয় ম্যাচে বেশ ভাল বল করেছে।
শেষ ম্যাচে আলগা বোলিং করা নিয়ে ফাহিমের মূল্যায়ন, ওই ম্যাচে সাকিব ম্যাক্সওয়েলের আগ্রাসী উইলোবাজির শিকার। ওই ম্যাচে ম্যাক্সওয়েল সবাইকে মেরেছে। সাকিব একা মার খায়নি। সাকিব যে ১২ বল করেছে তার প্রায় ১০টিতেই প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। কাজেই সে একটু বেশিই রান দিয়ে ফেলেছে। তারপর আমার মনে হয় সাকিবের বোলিং নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। বোলার সাকিব ঠিক জায়গায়ই আছে।
এআরবি/আইএইচএস