জাতীয়

মুগদা হাসপাতালে কমেছে করোনা রোগীর চাপ

সোমবার দুপুর দেড়টা। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো করোনা আক্রান্ত মনির হোসেনকে। জরুরি বিভাগে দেখানোর পর তাকে ভর্তি করা হলো। এ সময় দেখা গেলো হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ বেশ ফাঁকা। সাধারণ ওয়ার্ডেও খালি ছিল পর্যাপ্ত বেড।

Advertisement

অথচ কদিন আগেও এ হাসপাতাল ছিল রোগীতে ঠাসা। আইসিইউ, এইচডিও কিংবা একটি ওয়ার্ডের সাধারণ বেডের জন্য ছিল মানুষের হাহাকার। একটি শয্যার জন্য করুণ আর্জি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ঘুরে ফিরেছিলেন রোগীর স্বজনরা।

মুগদা হাসপাতালের পরিস্থিতি কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও এখনো ঢাকার অনেক সরকারি হাসপাতাল করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালেও পাওয়া যাচ্ছে না শয্যা।

সোমবার (১৯ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুগদা হাসপাতালে অবস্থান করে দেখা গেছে, এ সময়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ২২ জন করোনা রোগী। এরমধ্যে সাতজনকে ভর্তির প্রয়োজন হয়। বাকিদের বাসায় রেখে চিকিৎসার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।

Advertisement

কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, আজকে রোগীর চাপ কম। অথচ রোববার (১৮ এপ্রিল) একই সময়ে ৪৪ জন রোগী এসেছিলেন। এরমধ্যে ভর্তি করা হয় ৯ জনকে। বর্তমানে আইসিইউ খালি না থাকলেও এইচডিও এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৭৭টি বেড খালি রয়েছে। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ জানান, এপ্রিল মাসে সবচেয়ে কম রোগী হয়েছে সোমবার (১৯ এপ্রিল)। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ২৫৫ জন করোনা রোগী রয়েছেন। এপ্রিলের ১২ তারিখের আগে ৩০০ জনের উপরে ছিল রোগী।

এ হাসপাতালে সর্বমোট বেডের সংখ্যা ৩২৯টি। ১১ এপ্রিলের আগে বেডের থেকেও বেশি রোগী ভর্তি হয়। তথ্য আরও বলছে, ৯ এপ্রিলের আগে প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৫০ জন রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এখন সে সংখ্যা অনেক কম। গত শুক্র শনি ও রোববার যথাক্রমে ভর্তি হয়েছেন ১৯, ১৬ ও ৩৬ জন করোনা রোগী।

তবে হাসপাতালের ১৪টি আইসিইউ এবং ১০টি এইচডিও এখনও খালি নেই।

এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডের সকল বেডেই অক্সিজেনেরে ব্যবস্থা থাকায় রোগীর চাপ কিছুটা কম হয়েছে। হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগে ১-২ জন রোগী সেবা নিচ্ছেন। আগে যেখানে স্বজনদের ভিড় থাকত সব সময়। তবে এখনও আসা রোগীদের মধ্যে অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে বেশি।

Advertisement

হাসপাতালের চিকিৎসক ফরিদা ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে সর্বোচ্চ সংখ্যক অক্সিজেন সাপোর্ট সেন্টার করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি ভালো। কয়েকদিন আগেও অক্সিজেনের কারণে রোগী ফেরত দিতে হয়েছে। এইচডিওতে কর্তব্যরত আরেক চিকিৎসক বলেন, রোগীর খুবই চাপ ছিল। ডিউটি করতে হিমশিম হয়েছে। এখন একটু ভালো। এ কারণে যারা আছেন তারাও যথাযথ সেবা পাচ্ছেন। নতুন রোগীদের অধিকাংশরই অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। অক্সিজেনের সমস্যা না হলে হাসপাতালে এতো রোগী হতো না।

এদিকের হাসপাতালে অন্য একটি অংশে ভ্যাকসিন কর্মসূচি চলছে। সেখানেও খুব বেশি ভিড় নেই।

মেজবাউল তার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন ভ্যাকসিন নিতে। তিনি বলেন, মোবাইলে ম্যাসেজ এসেছে। দ্বিতীয় ডোজ দেব। ভিড় নেই। দুজনের পরে সিরিয়াল।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ জাগো নিউজকে বলেন, রোগী কমেছে। তবে যারা আছে তাদের বেশিভাগের পরিস্থিতি খারাপ। এ কারণে আইসিইউ খালি থাকছে না। সেটা একটা সমস্যা।

তিনি বলেন, এজন্য আমাদের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করি। অবস্থা ভালো হলে আবার ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। খালি থাকলে বাইরে থেকে রোগী ভর্তি করা হয়। তবে যে কেউ ওয়ার্ডে ভর্তি হতে পারবে।

হঠাৎ রোগী কমার বিষয়ে অসীম কুমার বলেন, করোনা এবার দ্রুত রূপ পাল্টাচ্ছে। আমার মনে হয়, যারা খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে, তারা হাসপাতালেই রয়েছে। বাইরে খারাপ রোগীর সংখ্যা কম। কয়েকদিনের মধ্যে মৃত্যুর হারও কমে আসতে পারে। একইসঙ্গে করোনা প্রকোপ কমবে।

আইসিইউ সংকট নিয়ে তিনি বলেন, এখন প্রতিদিনই আইসিইউ বেডের জন্য রিকোয়েস্ট আসছে। তবে সাধারণ ওয়ার্ডে অক্সিজেন থাকায় কিছুটা ম্যানেজ করা যাচ্ছে। ওয়ার্ডগুলোতে শয্যা খালি আছে। সেখানে ভর্তি থাকলে পরিস্থিতি দেখে আইসিইউতে নেয়া হচ্ছে।

এনএইচ/জেডএইচ/এএসএম