তাবলিগ জামায়াতের কিছু বিষয় আমল করার সময় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক আমাকে তা বন্ধ করতে বলে। আমি আমল বন্ধ না করতে চাইলে মামুনুলসহ অন্য আসামিরা আমাকে গুরুতর আঘাত করে। আমার মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। আমার প্রতি যে অন্যায় অত্যাচার করেছে সেজন্য মামুনুলের বিচার হওয়া উচিত। আর তাদের এই অত্যাচার বন্ধ হওয়া উচিত।
Advertisement
সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হকের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মামলার বাদী জি এম আলমগীর শাহীন এসব কথা বলেন।
মামুনুলের গ্রেফতার ও রিমান্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী জি এম আলমগীর শাহীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি তাবলীগ জামায়াতের একজন কর্মী। হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ অপর আসামিরা অন্যায়ভাবে আমাকে তাবলীগ জামায়াতের কিছু বিষয় আমল করার সময় বাধা দেয়। এ সময় তারা আমাকে গুরুতর আঘাত করে। আমার মোবাইল ও টাকা নিয়ে যায়। মামুনুলের এই অন্যায়-অত্যাচার বন্ধ হওয়া উঠিত। আমি ধর্মীয় কাজ করি, সেখানে মামুনুলরা বাধা দেয়। এছাড়া তারা সারা বাংলাদেশে দুই বছর ধরে আমাদের (তাবলিগ জামায়াত) আমলে বাধা দিচ্ছে। এই অন্যায়ের বিচার হওয়া উচিত। আশা করি, আমাদের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে তার বিচার হবে।
এদিন বেলা ১১টা ৯ মিনিটের দিকে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় ২০২০ সালের মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাজেদুল হক।
Advertisement
রিমান্ড আবেদনে এস আই সাজেদুল বলেন, ২০২০ সালের ৬ মার্চ আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোহাম্মদপুরের সাত মসজিদ এলাকায় সাত গম্বুজ মসজিদে আমল করাকালীন আসামি মামুনুল হক ও তার ভাই মোহতামিম মাহফুজুল হকের নির্দেশে জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার ছাত্র আসামি ওমর, ওসমান দুজন এসে মামলার বাদী জিএম আলমগীর শাহীনসহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের আমল করতে নিষেধ করেন। তাদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে এবং মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে বলে।
এরপর রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আসামি ওমর, ওসমান, শহিদ, আনিস, জহির মসজিদের ভেতরে এসে বাদীর সঙ্গে থাকা অন্যদের বেআইনি জনতাবদ্ধে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। বাদী তাদের রক্ষা করতে গেলে, আসামি জহির তাকে মারধর করে। এরপর আসামি মামুনুল হক ও তার ভাই মোহতামিম মাহফুজুল হকের নির্দেশে মাদরাসার ৭০/৮০ জন ছাত্র বাদীকে মারধর করে। এতে বাদী গুরুতর রক্তাক্ত ও জখম হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি স্যামসাং মোবাইল, সাত হাজার টাকা ও ২০০ ডলার নিয়ে যায় আসামিরা।
এদিকে রিমান্ড শুনানিতে বিচারক মামুনুলকে বলেন, ‘আপনার কি কিছু বলার আছে?’
উত্তরে মামুনুল বিচারককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি প্রতি রমজান মাসে ছয়বার কোরআন শরীফ খতম দেই। রমজান মাস পবিত্র মাস। এই মাসে আমি যেন রোজা, নামাজ ও কোরআন পড়তে পারি তার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আবেদন করছি।’
Advertisement
এর আগে বেলা ১১টা ৯ মিনিটের দিকে মামুনুল হককে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রোববার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ জাগো নিউজকে বলেন, ২০২০ সালের মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় তদন্ত চলছিল। তদন্তে হেফাজত নেতা মামুনুলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়ায় আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
রোববার দুপুর ১২ টা ৫০ মিনিটের দিকে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ।
জেএ/এআরএ/এএসএম