করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে চলমান লকডাউনের (বিধিনিষেধের) মেয়াদ একই শর্তে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ছে। সোমবার (১৯ এপ্রিল) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান।
Advertisement
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আটদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ বহাল থাকার কথা ছিল।
এর আগে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সোমবার বেলা ১১টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল সভা বসে। রোববার (১৮ এপ্রিল) ৩১তম সভায় সংক্রমণরোধে আরও এক সপ্তাহের জন্য ‘কঠোর লকডাউন’ আরোপের সুপারিশ করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি লকডাউনের মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। সাইন্টিফিক্যালি তো ১৪ বা ১৫ দিন লকডাউন না হলে সংক্রমণের চেইনটা পুরোপুরি ভাঙা সম্ভব হয় না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত আগের শর্ত মেনে লকডাউন কন্টিনিউ (অব্যাহত) করবে। বিধিনিষেধ আরও সাতদিন বাড়ল।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সামারি পাঠানো হয়েছে। তিনি অনুমোদন দিলে প্রজ্ঞাপন জারি হয়ে যাবে। আজকেও প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।’
ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সংক্রমণ ম্যানেজ করাটা আমাদের উদ্দেশ্য, ব্যবসায়ীরা যাতে ঈদের ব্যবসাটা করতে পারে। সেটা মাথায় রেখেই এখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি কী হয় সেটা বিবেচনা করেই পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা মনে করছি আরও (লকডাউন) সাতদিন দিলে সংক্রমণটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তবে এর মধ্যে কঠোর স্বাস্থ্যবিধিটা মানার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মাস্ক পরার অভ্যাসটা সবাইকে গড়ে তুলতে হবে। যতদিন না স্থায়ী সমাধান হচ্ছে ততদিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাইরে আসলে মাস্ক পড়তে হবে। আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থা দেখছি। স্বাস্থ্যবিধি মানলেই আমরা এটা ম্যানেজ করতে পারব।’
এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সরকার সারাদেশে আরও এক সপ্তাহ ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে। তিনি বলেন, ‘জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সরকার ঈদের আগে লকডাউন শিথিলেরও চিন্তাভাবনা করছে।’
Advertisement
লকডাউন ঘোষণা করে গত ১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। লকডাউনের মধ্যে পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
নি্র্দেশনা অনুযায়ী, লকডাউনের আটদিন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন। তবে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান-সংস্থা খোলা রয়েছে। খোলা রয়েছে শিল্প-কারখানা। সীমিত পরিসরে দেয়া হচ্ছে ব্যাংকিং সেবা।
এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। খোলা স্থানে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যদি কেনা-বেচা করা যাবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় এর আগে গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত লকডাউন বা বিধি-নিষেধ ছিল। তবে গণপরিবহন, মার্কেট খোলা রেখে এই লকডাউন ছিল অনেকটাই অকার্যকর।
একই সঙ্গে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় দুই সপ্তাহ পূর্ণ লকডাউনের সুপারিশ করে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।
সর্বশেষ রোববার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটাই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। একই সময়ে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬৯৮ জন।
আরএমএম/জেএইচ/জেআইএম