রোজার সময় সাহরি ও ইফতারে ভুল খাবার খাওয়ার কারণে ওজন বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শরীর হয়ে পড়ে দূর্বল। এ ছাড়াও নানা ধরনের রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।
Advertisement
তবে জানেন কি, রমজান মাস হতে পারে আপনার ওজন কমানোর সঠিক সময়। সাহরি ও ইফতারে যদি আপনি সঠিক খাবার খেতে পারেন; তাহলে ওজন দ্রুত কমবে।
সাহরি ও ইফতারে কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডা. তাসনিম জারা। দেশে এমবিবিএস সম্পন্ন করে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়ছেন তিনি।
ইফতারে যে খাবারগুলো খাবেন
Advertisement
খেজুর: অনেকেই ইফতার শুরু করেন খেজুর দিয়ে। যা খুবই ভালো একটি অভ্যাস। কারণ খেজুরে প্রাকৃতিক চিনি থাকে। দ্রুত সারাদিনের ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
এ ছাড়াও এতে ফাইবার বা আঁশসহ নানা ধরনের খনিজ পদার্থ থাকে। রোজার সময় ফাইবার শরীরে জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
পানি: খেজুর খাওয়ার পরপরই চিনিযুক্ত শরবত খেয়ে থাকেন অনেকেই। যা শরীরের জন্য মোটেও উপকারী নয়। এর পরিবর্তে পানি বা ডাবের পানি পান করুন। এতে পটাশিয়াম থাকে।
সারাদিন শরীরে ঘাম হয়ে যে পানিশূন্যতা হয়; তা মুহূর্তেই কাটিয়ে তোলে ডাবে থাকা পুষ্টিগুণ। এখন যেহেতু অনেক গরমে রোজা পড়েছে, তাই ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
Advertisement
ফলের রস: শরবতের পরিবর্তে বিভিন্ন তাজা ফলের জুস খেতে পারেন। তবে কোনো ধরনের চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করবেন না।
চিনি আমাদের শরীরে বাড়তি কোনো পুষ্টি দেয় না। বরং অতিরিক্ত চিনি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের রোগ হয়ে থাকে।
ফল-মূল: খেজুর পানি খাওয়ার পর হাতের কাছে থাকা ফল-মূল খান। নানা ধরনের ফলে নানা ধরনের পুষ্টিগুণ থাকে।
এ খাবারগুলো খেয়ে বিরতি দিতে হবে। মাগরিবের নামাজ পড়েন নিন। তারপর একটু হাঁটাহাঁটি করুন ঘরেই। সারাদিন উপবাসের পরেই ইফতারে যখন খাওয়া হয়; তখনই সঙ্গে সঙ্গে তা ব্রেইনে পৌঁছায় না।
কিছুক্ষণ পর ব্রেইন সেটা বুঝতে পারে। এ কারণে অতিরিক্ত আর খেতে ইচ্ছে করে না। রোজায় অতিরিক্ত খাওয়ার কারণেই কিন্ত ওজন বেড়ে যায়।
যারা রোজার এ সময় ওজন কমাতে চান; তারা ইফতারের পর খাবারকে ৪ ভাগে ভাগ করবেন। একটি প্লেটের অর্ধেকে রাখবেন শাক-সবজি ও ফল-মূল আর বাকি অংশে রাখবেন লাল চালের এক মুঠো ভাত বা রুটি, মাছ-মাংস ও ডাল। অর্থাৎ প্রোটিনজাতীয় খাবার।
অবশ্যই এ খাবার রান্নায় অতিরিক্ত তেল-মশলা দেওয়া যাবে না। আর রোজার সময় তেল ও মশলাযুক্ত খাবার খেলে গ্যাস্টিকের সমস্যা হয়। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল বা সরিষার থেল ব্যবহার করতে হবে। যা খাবেন না
অনেকেই ইফতারে ছোলা, বেগুনি, পেয়াঁজু ইত্যাদি খেয়ে থাকে; যা শরীরের জন্য মোটেও ভালো না। পাশাপাশি দ্রুত ওজন বাড়ায়।
এ খাবারগুলো মূলত ডুবো তেলে ভাজা হয়ে থাকে। এ খাবারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ট্র্যান্সফ্যাট থাকে। যে ফ্যাট শরীরের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।
গবেষণায় দেখা গেছে, আপনার সারাদিনের খাবারের মধ্যে যদি ২ শতাংশ পরিমাণও ট্র্যান্সফ্যাট থাকে; তাহলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে ২৩ শতাংশ। এ ছাড়াও ডায়াবেটিস, হাই প্রেশারসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে।
জিলাপি-বুন্দিয়া এ খাবারগুলোও তেলে ভাজা এবং অতিরিক্ত মিষ্টি হওয়ার কারণে এড়িয়ে যেতে হবে।
সাহরিতে যা খাবেন
সাহরিতে এমন সব খাবার খেতে হবে; যেগুলো দীর্ঘক্ষণ আমাদের পেট ভরিয়ে রাখবে। ফাইবারজাতীয় খাবার খেলে সারাদিন ক্ষুধা কম লাগে এবং অল্প অল্প করে এনার্জি পায় শরীর।
সাদা চালের ভাত খেলে শরীর পুষ্টিগুণ কম পায়। অন্যদিকে লাল চালের ভাতে অনেক বেশি ফাইবার থাকে। এ কারণে সাহরিতে লাল চালের ভাত খাবেন।
ওটস, বাদাম, চিয়া সিড, কলা, আপে, কমলা, সেদ্ধ ডিম, রাজমা ডাল এসব খাবারগুলো সাহরিতে খেলে সারাদিন শরীর সুস্থ থাকবে আপনার। পাশাপাশি ওজনও দ্রুত কমতে শুরু করবে।
সাহরিতেও অতিরিক্ত খাবেন না। আর খাওয়ার পরপরই শোয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় সারাদিন পেট জ্বালা-পোড়া করতে পারে।
শরীরচর্চা
অনেকেই ভেবে থাকেন রোজার সময় শরীরচর্চা করার প্রয়োজন নেই। বিষয়টি ভুল। ইফতারের আগ মুহূর্তে কিংবা সন্ধ্যার পরে ৩০ মিনিট সময় নিয়ে শরীরচর্চা করুন।
দ্রুত গতিতে হাঁটতে পরেন এ সময়। দৌঁড়াতে পারলে আরও ভালো হয়। সকালে ইয়োগা বা যোগব্যায়াম করতে পারেন। মোটকথা ওজন কমাতে চাইলে শরীরচর্চার বিকল্প নেই।
জেএমএস/জিকেএস