বিনোদন

হলিউডের সোফিয়া লরেনের চোখে সত্যিকারের একজন হিরো ওয়াসিম

ঢাকাই সিনেমার সোনালী দিনের সুপারস্টার অভিনেতা ওয়াসিম আর নেই। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রোববার (১৭ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়াসিমকে মৃত ঘোষণা করেন।

Advertisement

৭০-৯০ দশক পর্যন্ত তুমুল জনপ্রিয় এ নায়কের বয়স হয়েছিল ৭৪বছর।

তাকে বলা হতো ঢাকাই সিনেমার বাহাদুর নায়ক। কেউ বলতেন সুপারস্টার ওয়াসিম। হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সোফিয়া লরেনের দেখা পেয়েছিলেন ওয়াসিম। স্বপ্নের অভিনেত্রীও প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন ব্যক্তিত্ববান ওয়াসিমকে।

প্রায় ৪৬ বছর ধরে গুলশানের বাসায় থাকতেন চিত্রনায়ক ওয়াসিম। অনেক বছর ধরেই চলচ্চিত্র থেকে দূরে ছিলেন। তবে চলচ্চিত্রের মানুষদের থেকে নিজেকে একেবারেই আড়াল করে ফেলেননি কখনো। তাই মাঝে মধ্যেই বিশেষ দিবসগুলোতে তাকে দেখা যেতো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি)। আড্ডায় মেতে উঠতেন পরিচিত বলয়ে।

Advertisement

২০২০ সালের শুরুর দিকে, এ মুলুকে তখনো করোনার থাবা পড়েনি৷ মুঠোফোনে কথা হয়েছিলো ওয়াসিমের সঙ্গে। তিনি বলেছিলেন শিগগিরই সময় দেবেন৷ একদিন তার বাসায় গিয়ে আড্ডার ছলে সাক্ষাৎকার নেবো৷ সে একদিন আর কোনোদিনই আসবে না।

তবে কিছু কথা রেকর্ড হয়ে ছিলো ফোনে। সদালাপী ছিলেন৷ অনেক কথা ফোনেই বলে ফেলেছিলেন৷ তারই কিছু অংশ সাক্ষাৎকার আকারে তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য-

জাগো নিউজ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ক্যাম্পাসে যান কখনো?ওয়াসিম : না৷ কোথাও যাই না৷ ক্যাম্পাস জীবনটা দারুণ ছিলো৷ আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়েছি৷ অনেক ভালো ভালো শিক্ষক পেয়েছিলাম। ড. মাহফুজুল হক, ড. গিয়াস উদ্দিন স্যারেরা আমার শিক্ষক ছিলেন। আমার শিক্ষক ভাগ্য খুব ভালো ছিলো বলা যেতে পারে।

জাগো নিউজ : এখন আপনি কোথাও নেই৷ কিন্তু একটা সময় ঢালিউড মানেই নাকি ওয়াসিম৷ সেই যে অস্ত যাওয়া রঙিন, দুর্দান্ত দিনগুলো, মনে পড়ে না?ওয়াসিম : খুব পড়ে। জীবন তো আমার সেসব দিনেই বিকশিত হয়েছে৷ কোটি মানুষের ভালোবাসা আমি অর্জন করেছি ও-ই সময়গুলোতে। শুটিং, সিনেমার আয়োজন, হুল্লোড়, দর্শক; সব মনে পড়ে৷।

Advertisement

জাগো নিউজ : কিছু গল্প বলুন সেই সময় নিয়ে.....ওয়াসিম : আমি যে ধরণের সিনেমায় অভিনয় করেছি, অধিকাংশ ক্যারেক্টারই ছিলো চ্যালেঞ্জিং। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চরিত্র এসেছে৷ উপভোগ করে কাজ করেছি৷ যাই হোক আমি সেগুলো নিয়েও তেমন বলি না। ইচ্ছে করে না। আজকাল সিনেমায় যা হচ্ছে তা নিরবেই দেখি।

জাগো নিউজ : সিনেমা থেকে দূরে সরে থাকার কারণটা কী, বলবেন?ওয়াসিম : গল্পই পছন্দ হয় না। এখন যে ধরনের ছবি হয় সেগুলো করতে পারি না। মাঝে আমার কাছে অনেক সিনেমার অফার এসেছি। যে ধরণের গল্প এসেছে তাদের সবগুলোকে আমি খারাপ বলছি না। সেগুলো অনেক ভালোই ছিলো। কিন্তু আমি যে ধরণের গল্প ও চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছি সেগুলো তেমন ছিলো না। এই কারণে আর অভিনয় করা হয়নি। যেটা সবার কাছে ভালো লাগছে সেটা আমার কাছে ভালো না-ই লাগতে পারে। প্রত্যেকেরই নিজের আলাদা কিছু ভাবনা থাকে। আমি তাদের চিন্তার সঙ্গে যেতে পারি না। তাই নিজেকে গুটিয়ে রাখি।

দীর্ঘদিন একটা কাজের পর আপনার অভিজ্ঞতা যদি মূল্যায়িত না হয় তাহলে কাজ থেকে দূরে থাকাই ভালো।

জাগো নিউজ : এখন কীভাবে সময় কাটে?ওয়াসিম : সিনেমা দেখি। ঘরে বসে প্রচুর সিনেমা দেখা হয়। বেশির ভাগই বাইরের সিনেমা। আমার প্রিয় অভিনেতাদের একজন অ্যান্থনি কুইন। তার সিনেমা বেশি দেখি।

জাগো নিউজ : আর প্রিয় অভিনেত্রী কে?ওয়াসিম : হলিউডের ইতালিয়ান অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন৷ তার অভিনয় খুব ভালো লাগে। ব্যক্তিগতভাবেও তার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিলো। কথাও হতো। সোফিয়া লরেনের সঙ্গে প্রথম দেখা করতে যাওয়ার একটা মজার গল্পও আছে।

তখন নিউইয়র্ক থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে আটলান্টায় উনি থাকতেন। তার একটা দোকান ছিলো পারফিউম ওয়ার্ল্ড নামে। আমি এতদূর পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।

প্রথমে তার ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ হলো। সে সোফিয়াকে জানালো যে বাংলাদেশ থেকে একজন তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। এরপর আমি কেন এসেছি জানতে চাইলেন সোফিয়া। আমি বললাম, 'আমি তার অভিনয় পছন্দ করি। তাকে পছন্দ করি এতটুকু বললেই হবে।'

পরে তার সঙ্গে দেখা হলো। অনেক কথা হয়েছিলো। একটা বন্ধুত্ব ছিলো আমাদের৷ এক সময় উনি আমাকে বলেছিলেন, 'ওয়াসিম তুমি সত্যিকারের হিরো'। হা হা হা। তার সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে উনি শুধু ভালো অভিনেত্রীই নন, ভালো মনের একজন মানুষ। খুব সহজে মানুষকে মুগ্ধ করতে পারতেন৷ অনুপ্রেরণা যোগাতে পারতেন।

সোফিয়া ছাড়াও বেশ কজন হলিউড আর্টিস্টের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিলো। এখনো অনেকের সঙ্গে মাঝেমাঝে যোগাযোগ হয়। তাদের জীবনবোধ, মানুষ ও শিল্পকে তাদের চর্চার বিষয়টি আমাকে খুব মুগ্ধ করে৷

জাগো নিউজ : একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। অনেকেই আছেন সিনেমায় অভিনয় করেন না৷ কিন্তু এফডিসি যান, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা মেলে৷ কিন্তু আপনাকে বলা চলে কোথাও দেখা যায় না। কেনো? ওয়াসিম : এখন অন্য কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ততা। আমি আর দশ জনের মত ঠিক না। একটু ভিন্নভাবেই থাকতে পছন্দ করি। মাঝে মধ্যে এফডিসি যাই। পরিচিতজনদের সঙ্গে গল্প করে আসি। আমি নিজের মতো থাকতে পছন্দ করি। তবে সবার জন্য প্রার্থনা করি আমি। চাই আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক।

এলএ/এমকেএইচ