শিয়া মসজিদে হামলায় নিহত মোয়াজ্জেম হোসেনের পরিবারের সদস্যদের বুকফাঁটা কান্নায় হরিপুর গ্রামের আকাশ-বাতাস যেনো ভারি হয়ে উঠেছে। তার পরিবারের সঙ্গে কাঁদছে পুরো হরিপুর গ্রামের মানুষ। সাদামাঠা নিরীহ প্রকৃতির মানুষ মোয়াজ্জেমকে কেন গুলি করা হলো তার কোনো কারণ মেলাতে পারছে না গ্রামবাসী।হরিপুর গ্রামে শিয়া-সুন্নি নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। তাহলে কেন এই বর্বরতা। শুধু কি নাশকতা বা আতঙ্কের জন্যই এই ঘটনা। এমন প্রশ্ন গ্রামের শত শত মানুষের মুখে। সবাই এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছেন। শুক্রবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে মোয়াজ্জেমের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হলে সাধারণ মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন। বৃদ্ধ বাবার মৃত্যুতে একমাত্র ছেলে শাহাজুল ইসলাম বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বোন সাজেদা বেগমের অবস্থাও একই। আর স্বামী হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন কমেলা বেগম। আর বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন তিনি। দুপুর থেকেই উপজেলার কিচক ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে গিয়ে এ করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে। ভালো মানুষ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন আর ফিরে এলেন লাশ হয়ে। কমেলার সেই বুকফাঁটা আজাহারিতে স্বজন ও প্রতিবেশিরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। তাদের চোখ বেয়েও নিরবে জল ঝরছে। নিহতের স্বজনরা জানান, প্রায় দুই যুগ আগে শিয়া সম্প্রদায়ে অন্তর্ভুক্ত হন নিহত মোয়াজ্জেম হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা। তবে তিনি ও তার পরিবার ছাড়া বংশের সবাই সুন্নি সম্প্রদায়ে সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে কারো মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল না। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে যে যার রীতি অনুযায়ী ধর্ম পালন করে আসছিলেন।অপরদিকে, পাশেই ছেলে শাহাজুল একটি ঘরের মাঝে বাকরুদ্ধ হয়ে শুয়ে ছিলেন। কেবল মাঝে মধ্যে শোয়া থেকে ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন। পরে কারো কাঁধে ভর করে ঘরের বাইরে আসেন। কিন্তু ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না। জুম্মার নামাজ আদায়ের জন্য চাচাতো ভাইয়ের কাঁধে ভর দিয়ে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদান করতে যান।নামাজ শেষে শাহাজুল জানান, তিনি বাড়িতে ছিলেন না। সাত দিন আগে টাঙ্গাইলের একটি ইটভাটায় মাটি কাটার কাজ করতে গিয়েছেন। সংবাদ পেয়ে বাড়ি এসে জানতে পারেন বাবা আর নেই। অথচ বৃহস্পতিবার দুপুরেই মুঠোফোনে বাবার সঙ্গে কথা হয়। তিনি শরীরের যত্ন নিতে বলেছিলেন। ভালভাবে থাকতেও বলেছিলেন।নিহতের নাতি আশরাফুল ইসলাম জানান, মোয়াজ্জেম হোসেনরা চার ভাই ছিলেন। তিনিই ছিলেন সবার ছোট। শিয়া সম্প্রদায়ের এ মসজিদটিতে তিনি প্রায় পাঁচ বছর ধরে মোয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।তার ভাইদের মধ্যে আব্দুল মজিদ প্রামাণিকও বকস মিয়া অনেক আগেই মারা গেছেন। হবিবর রহমান নামের এক ভাই জীবিত আছেন।কিচক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফছার আলী জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি চক্র সুপরিকল্পিত ভাবে ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন। হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা শিবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) কামরুজ্জামান জানান, এখনো ক্লু উদ্ধার করা যায়নি। তদন্ত চলছে। বিকেলে রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল আল মাহমুদ ও বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।পুলিশের বিশেষ শাখা পিআইবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকতার হোসেন জানান, তারা ঘটনাস্থল কর্ডন করে রাকার পাশাপাশি আট রাউন্ড পয়েন্ট টু-টু বোর গুলি, তালা, রক্তমাখা জায়নামাজ উদ্ধার করেছেন। যারা গুলি চালিয়েছে তারা অস্ত্র চালোনায় খুব এটকা পারদর্শী নয়। কারণ আটটি গুলির মধ্যে পাঁচটিগুলিই বিদ্ধ হয়েছে মসজিদের কলামে। ভাগ্য ভালো এতে করে প্রাণহানি কম হয়েছে। তা না হলে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে যেতো।এআরএ/এমএস
Advertisement