গত মৌসুমের ন্যায় রাজশাহীর বাঘায় এবারও উপজেলা কৃষি অফিসারের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে ধান কাটতে এলাকা ছাড়ছেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক। চলতি সপ্তাহ থেকে গ্রুপ ধরে শ্রমিকরা এলাকার বাইরে ধান কাটতে যাওয়া শুরু করেছেন।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, গত মৌসুমেও ১৫-২০ জনের সমন্বয়ে এক একটি গ্রুপ গঠিত হয়। এভাবে গেল বছর প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক ধান কাটতে বাইরে গিয়েছিলেন। চলতি মৌসুমেও ২০ হাজার শ্রমিক পর্যায়ক্রমে ধান কাটতে যাওয়ার জন্য এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ৬ হাজার শ্রমিক এরইমধ্যে আবেদন করে প্রত্যয়নপত্র নিয়েছেন। এসব শ্রমিকরা ধান কাটতে নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যাচ্ছেন। শ্রমিকরা ভটভটিসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ কর্মস্থলে।
ছাতারি গ্রামের শ্রমিক হাফিজুল ইসলাম। তিনি একটি গ্রুপের দলনেতা। তিনি জানান, এ মৌসুমে এলাকায় কাজ না থাকায় প্রায় ২-৩ মাস বেকার সময় কাটাতে হয়। সংসার চালাতে গিয়ে অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অন্য এলাকায় এ সময় ধান কাটার জন্য শ্রমিক প্রয়োজন হয়। আর তাই বাসায় অলস বসে না থেকে ধান কেটে সংসার খরচ যোগাতে এলাকার বাইরে যান সবাই।
Advertisement
হাফিজুল ইসলাম আরও জানান, ধান কাটা মেষে এক একজন শ্রমিক মজুরিসহ ২০-২৫ মণ ধান নিয়ে বাড়ি ফিরেন। এতে ভাতের অভাবও দূর হয় আবার অর্থ দিয়ে পরিশোধ হয় দেনা। গত মৌসুমে যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় চুক্তিভিত্তিক গাড়ি ভাড়া করে গিয়েছিলেন তারা। আবার অনেকে বাইসাইকেল ও ভ্যান নিয়ে গিয়েছিলেন। এবারও যে যেভাবে পারছে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ‘ধান উৎপাদিত এলাকায় প্রতিবছর এ সময় শ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয়। এর সমাধানকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের মধ্যে প্রত্যয়নপত্র দিয়ে শ্রমিক পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেই ক্ষেত্রে উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও আমার যৌথ স্বাক্ষরে প্রত্যয়নপত্র (অনুমতি) দেয়া হচ্ছে। তবে এর মধ্যে কেউ যদি করোনা আক্রান্ত এলাকা থেকে নিজ এলাকায় ফিরে আসে, তাদের নমুনা পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা বলেন, ‘সরকার নির্দেশিত ১৩ বিধিমালার মধ্যে ১ বিধি রয়েছে বাইরে শ্রমিকদের কর্মে যাওয়ার বিষয়ে। বর্তমানে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই পূর্বের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকদের কাজে যাওয়ার প্রত্যয়ন ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমনকি শ্রমিকবাহী গাড়ির চালকদেরও এ প্রত্যয়ন দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু শ্রমিকরা দলবদ্ধ হয়ে বাইরে গিয়ে কাজ করবে, সেহেতু কাজ শেষে ফেরার পর তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। যাদের মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দেবে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকারও নির্দেশনা দেয়া হবে। এছাড়াও প্রত্যেককে নিজেদের সাবধানতা অবলম্বন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বেশি বেশি পানি পান করা ও ঘনঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার জন্যও পরামর্শ দিয়ে প্রত্যয়নপত্র দেয়া হচ্ছে।’
Advertisement
ফয়সাল আহমেদ/এসজে/জিকেএস