মানিকগঞ্জের শিবালয়ে পুলিশের উদ্যোগে পানি সংকট থেকে মুক্তি পেয়েছে ৩০০ পরিবার। মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে নিজস্ব অর্থায়নে মোটর বসিয়ে থানার পুকুর ভরছে পুলিশ। সেই পানি মোটর দিয়ে বাসা-বাড়িতে তুলে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করছে মানুষ। থানার পুকুরটিই এখন তাদের পানির একমাত্র উৎস।
Advertisement
ঐতিহ্যবাহী আরিচা ঘাট নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে ১০ হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পানি সংকটে ভুগছেন এখানকার বাসিন্দারা। টিউবওয়েলগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন আর আর্সেনিক।
এই সংকট মুহূর্তে একমাত্র পানির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে শিবালয় থানা কমপ্লেক্সের পুকুরটি। মোটরের মাধ্যমে পানি নিয়ে প্রায় ৩০০ পরিবার গোসল, থালা-বাসন পরিষ্কারসহ তাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, থানা পুকুরের চারপাশে শতাধিক মোটর রয়েছে। পুকুরে পাইপ নামিয়ে এসব মোটর দিয়ে বাসায় পানি নিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একাধিক মোটর সংযোগের মাধ্যমে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে এই পানি।
Advertisement
একদিকে এলাকাবাসী মোটর দিয়ে পানি তুলছেন, অপরদিকে থানা থেকে আরেকটি মোটর দিয়ে পানি দেয়া হচ্ছে পুকুরে। যাতে পুকুর শুকিয়ে পানি সংকট না হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আ. রহমান, আবু বক্কর সিদ্দিকসহ কয়েকজন গৃহবধূ জানান, আশপাশে তাদের কোনো পুকুর নেই। নদীও অনেক দূরে। এজন্য থানার পুকুরটি তাদের পানির চাহিদা মেটাচ্ছে। এই পুকুরটি না থাকলে তাদের অনেক বিপদে পড়তে হত।
পুকুরে পানি ধরে রাখার জন্য আগে থানার মোটর চালানো বাবদ খরচ দিতে হত। কিন্তু বর্তমান ওসি ফিরোজ কবীর যোগদানের পর থেকে তাদের কোনো খরচ দিতে হয় না। পুলিশের পক্ষ থেকেই এই খরচ বহন করা হয় বলে জানান আশপাশের বাসিন্দারা।
থানার পুকুরের পানি ব্যবহার করতে দেয়ায় তারা ওসিসহ পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
Advertisement
শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম জানান, তার ওয়ার্ডে স্থায়ী এবং ভাড়াটিয়া মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু তীব্র পানি সংকটের কারণে তাদের খুবই অসুবিধা হয়। এ অবস্থায় থানার পুকুরের পানি ব্যবহার করে তারা দৈনন্দিন কাজকর্ম সারছেন। পুলিশ কর্তৃপক্ষও খুবই আন্তরিকতার সাথে তাদের এই পানি ব্যবহার করতে দিচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, পানি সংকট মোকাবিলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে ইতোমধ্যে পানির আর্সেনিক এবং আয়রন পরীক্ষাসহ এলাকা সার্ভে করা হয়েছে। একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করার কথা রয়েছে তাদের।
শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবীর জানান, পুলিশ শুধু এখন মানুষের জান আর মালের নিরাপত্তাই দেয় না, সামাজিক ও মানবিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও অংশগ্রহণ করে। তেমনই একটি উদ্যোগ এটি।
তিনি বলেন, যখন এই থানায় যোগদান করি তখন দেখি মানুষের ব্যবহার করার মতো পানি নেই। থানার পুকুরটিও চৈত্র মাসে শুকিয়ে যায়। এই সময়টাতেও যেন পুকুরে পর্যাপ্ত পানি থাকে এজন্য একটি মোটর বসানো হয়েছে। মোটর দিয়ে পানি পুকুরে দেয়া হয়। আর চারপাশে মোটর বসিয়ে সেই পানি বাসা বাড়িতে নিয়ে ব্যবহার করছেন মানুষ।
তিনি আরও জানান, মোটর চালানো বাবদ ব্যয় পুলিশই বহন করে। পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীমের নির্দেশনায় মানুষকে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বি.এম খোরশেদ/এফএ/এএসএম