অর্থনীতি

বেড়েছে স্বর্ণের দাম

গেল সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে বড় উত্থান হয়েছে। এতে সাত সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে উঠে এসেছে দামি এই ধাতুটি। স্বর্ণের পাশাপাশি রুপার দামেও বড় উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে দাম বেড়েছে আর এক দামি ধাতু প্লাটিনামের।

Advertisement

গত এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৯১ শতাংশ। রুপার দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর প্লাটিনামের দাম বেড়েছে দশমিক ৩৮ শতাংশ।

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের এই দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়ানো হবে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।

তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় বিশ্ববাজারের সঙ্গে আপডেট থেকেছি। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের বাজারে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। বিশ্ববাজারে দাম কমায় মার্চ মাসে দেশের বাজারে দু’দফা স্বর্ণের দাম কমিয়েছি। তবে এখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়ানো হবে।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘মহামরি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় এখন দেশব্যাপী সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। এ কারণে এখন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে। সরকার বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিলে তারপর স্বর্ণের দাম সমন্বয় করার পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে স্বর্ণের দামে বড় পতন হয়। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে। ফেব্রুয়ারির পতনের ধারা মার্চ মাসের শুরুতেও দেখা যায়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বজারে স্বর্ণের দাম কমে ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এই টানা পতনে স্বর্ণের দাম ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যায়।

বিশ্ববাজারে বড় পতন হওয়ায় মার্চ মাসে দু’দফায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমিয়েছে বাজুস। সর্বশেষ গত ১০ মার্চ ভরিতে স্বর্ণের দাম ২০৪১ টাকা কমায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এই সংগঠন।

গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১০ মার্চ থেকে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৪১ টাকা কমিয়ে ৬৯ হাজার ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৫ হাজার ৯৬০ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৫৭ হাজার ২১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি স্বর্ণ ৪৬ হাজার ৮৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

Advertisement

এর আগে ২ মার্চ অনুষ্ঠিত বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩ মার্চ থেকে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫১৬ টাকা কমিয়ে ৭১ হাজার ১৫১ টাকা বিক্রি হচ্ছিল।

পাশাপাশি ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৮ হাজার ১ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৫৯ হাজার ২৫২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি স্বর্ণ ৪৮ হাজার ৯৩১ টাকা করে বিক্রি হচ্ছিল। ৯ মার্চ পর্যন্ত এই দামে স্বর্ণ বিক্রি হয়।

এর আগে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি ভরিতে স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৮৩ টাকা কমানো হয়। সে হিসাবে চলতি বছরে তিন ধাপে দেশের বাজারে ভরিতে স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ৫৪০ টাকা কমেছে।

স্বর্ণের দাম কমলেও রুপার পূর্বনির্ধারিত দাম বহাল রয়েছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রুপার দাম ১ হাজার ৪৩৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১ হাজার ২২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার দাম ৯৩৩ টাকা।

বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কমানোর পর মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিশ্ববাজারে বেশ কয়েকবার দাম বাড়া-কমার ঘটনা ঘটে। তবে এই দাম বাড়া বা কমার প্রবণতা ছিল বেশ ছোট। প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৭৪৫ ডলারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল।

এ পরিস্থিতিতে গেল সপ্তাহে স্বর্ণের দামে বড় উত্থান দেখা গেল। শেষ কার্যদিবসে ১৩ দশমিক ২৫ ডলার বাড়ার মাধ্যমে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৩৩ ডলারের ওপরে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে ১৭৪৩ ডলারে থিতু হওয়া প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম গত সপ্তাহ শেষে ১৭৭৬ দশমিক ৪৬ ডলারে উঠে এসেছে।

এদিকে শেষ কার্যদিবসে দশমিক ৩৭ শতাংশ বাড়ার মাধ্যমে গেল সপ্তাহে বিশ্ববাজারে রুপার দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স রুপার দাম দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৯৫ ডলার। এরপরও মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে রুপার দাম ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে গেছে।

স্বর্ণ ও রুপার দাম পাশাপাশি গেল সপ্তাহে আরেক দামি ধাতু প্লাটিনামের দামও বেড়েছে। গেল সপ্তাহে এই ধাতুটির দাম বেড়েছে দশমিক ৩৮ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স প্লাটিনামের দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০৩ ডলারে। এরপরও মাসের ব্যবধানে প্লাটিনামের দাম কমেছে দশমকি ৮৪ শতাংশ।

এমএএস/ইএ/এমএস