রিকশা ও অটোরিকশা চালকদের ৫০ ঘণ্টার প্রতীক্ষার প্রহর অবশেষে শেষ হলো। অপরাধ ছিল পরিবারের সদস্যদের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দিতে তারা লকডাউন সত্ত্বেও রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। লকডাউন শুরুর পর থেকে তিনদিনে কুষ্টিয়ার পুলিশ প্রায় দুই শতাধিক রিকশা ও অটোরিকশা মডেল থানা ও পুলিশ লাইনে আটক করে রাখে।
Advertisement
রিকশা চালকদের শত আকুতি আর বিক্ষোভ কোনো কিছুই মন গলাতে পারেনি পুলিশ কর্মকর্তাদের। উপায়ান্তর না পেয়ে এই তিনদিন রিকশা চালকরা খেয়ে না খেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পুলিশ লাইনের সামনে তীর্থের কাকের মতো প্রতীক্ষায় বসে ছিলেন কখন তাদের রিকশা ছাড়া পাবে। অবশেষে তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) জুমার পর থেকে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পুলিশ লাইনে আটক প্রায় দুই শতাধিক রিকশা ও অটোরিকশা একে একে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির বলেন, থানায় ৪০টির মতো রিকশা ও অটোরিকশা ছিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মুচলেকা নিয়ে রিকশাগুলো ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরই শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকেই রিকশা ছেড়ে দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে রিকশাচালকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। তারপর দুজন সাক্ষীসহ তাদের মুচলেকায় স্বাক্ষর নেয়া হয়। দুপুরে সেই কপি জমা দিয়ে একে একে রিকশা নিয়ে যান চালকরা। একই সময়ে পুলিশ লাইন কার্যালয়ের বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে থাকা প্রায় দেড় শতাধিক রিকশা ও অটোরিকশা ছেড়ে দেয়া হয়।
Advertisement
লকডাউনের প্রথম দিন ১৪ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে রিকশা-অটোরিকশা আটক শুরু করে পুলিশ। এরপর ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রায় দুই শতাধিক রিকশা ও অটোরিকশা আটক করে পুলিশ। এসব রিকশা কুষ্টিয়া মডেল থানার চত্বর এবং পুলিশ লাইনসে বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে রাখা হয়। এরপর থেকেই রিকশাচালকরা তাদের জীবিকার অবলম্বন রিকশা ফেরত পাওয়ার আশায় থানা এবং পুলিশ লাইনের আশপাশে অপেক্ষা করতে থাকেন।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিন দুপুর ১২টার দিকে ৩০-৪০ জন রিকশাচালক থানার প্রধান ফটকের সামনে এসে বিক্ষোভ করেন। এসময় ওসি শওকত কবির এসে তাদের সঙ্গে কথা বলে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত রিকশাগুলো ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দেন।
রিকশাচালকদের সামনেই ওসি পুলিশ সুপারের অফিসের দিকে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে তিনি সন্ধ্যার পরে সিদ্ধান্ত হবে বলে সবাইকে জানান। কিন্তু ওইদিনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় রিকশা ছাড়া হয়নি। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন রিকশাচালকরা।
মডেল থানার সামনে রিকশাচালক হাবিল চিৎকার করে বলেন, ‘আমাদের দেখার কেউ নেই। পেটের দায়েই তো রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। আমাদের সাত দিনের খাবার দিয়ে দিলেই তো বাড়ি থেকে বের হতাম না।’
Advertisement
অটোরিকশা চালক ইছাহক আলী বলেন, ‘চার চাকার কার গাড়িতো ঠিকই চলছে। তাদেরতো ধরে থানায় নেয়া হচ্ছে না। যত অত্যাচার গরিব মানুষের ওপর। কেউ তো দুই কেজি চাল নিয়েও আসে না।’
তৃতীয় দিনেও কুষ্টিয়ায় কঠোর লকডাউন চলছে। জরুরি সেবার আওতার বাইরে কোনো দোকান-পাট খোলেনি। মহাসড়কে এবং শহরের সড়কে যানবাহনের উপস্থিতি একেবারেই কম দেখা গেছে।
আল-মামুন সাগর/এসআর/জেআইএম