রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সোনারগাঁও হোটেলের প্রবেশপথের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বার বার সরিয়ে দিচ্ছিলেন। তাদের কারও হাতে হ্যান্ডব্যাগ, কারও হাতে খাম আবার কারও সঙ্গে কাপড়-চোপড়ের ব্যাগ দেখা যায়। পুলিশ কর্মকর্তা সরিয়ে দিলেও তারা বার বার গেটে কর্তব্যরত আনসার সদস্যদের কাছে ভেতরে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের কারও সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুরোধ করছিলেন।
Advertisement
আনসার সদস্যরা ‘আজ শুক্রবার, অফিস বন্ধ’ বলে জানালেও তারা নাছোড়বান্দার মতো অনুরোধ করেই যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা রুঢ় আচরণ করেই তাদের সরিয়ে দিতে বাধ্য হন।
দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউনের তৃতীয় দিন, শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় এ দৃশ্য দেখা যায়।
এ প্রতিবেদক এগিয়ে গিয়ে পরিচয় দিতেই সকলেই ছুটে আসেন। তারা জানান, তারা সবাই সৌদিপ্রবাসী কর্মী। ছুটিতে দেশে এসে লকডাউনের বেড়াজালে আটকে গেছেন। কারও আগামীকাল ১৭ এপ্রিল, কারও ১৮ এপ্রিল আবার কারও ১৯/২০ এপ্রিল সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের টিকিট করা আছে।
Advertisement
দুয়েকজন জানালেন, তাদের ১৫ এপ্রিল ফ্লাইট ছিল। গতকাল রাতে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় ১৭ এপ্রিল থেকে সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশ এবং সিঙ্গাপুরে বিশেষ ফ্লাইট চালুর সংবাদ শুনে লকডাউনের মধ্যেও নানান উপায়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছেন। ফ্লাইট নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় তাদের অনেকে করোনার নমুনা পরীক্ষা করাননি। ফ্লাইট কনফার্ম হলে তারা বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে জরুরিভাবে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নেবেন। কিন্তু তারা এয়ারলাইন্সের কাউকে পাচ্ছেন না।
বরগুনার পাথরঘাটার বাসিন্দা প্রবাসী মোস্তফা জানান, তিনি গত চার বছর যাবত সৌদি আরবে চাকরি করেন। গত ২০ জানুয়ারি ছুটিতে দেশে ফেরেন। তার আগামীকাল ১৭ এপ্রিল ফ্লাইট ও ১৮ এপ্রিল ভিসার মেয়াদ শেষ হবে। আগামীকাল ২টায় তার ফ্লাইট। টিকিট কনফার্ম আছে কি না জানতে গতকাল সকালে বরগুনা থেকে রওনা হয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টায় ঢাকায় আসেন। লকডাউনের কারণে মোটরসাইকেল, ট্যাক্সি-ট্রাকে করে অনেক কষ্টে এসেছেন। পথে পুলিশ তাকে আসতে সহায়তা করেছে । কিন্তু আজ এয়ারলাইন্সের অফিস বন্ধ থাকায় কিছুই জানতে পারছেন না। সৌদি আরব থেকে বলা হয়েছে সেখানে নিয়ম বদলে গেছে। ছুটির মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। আমি এখন কী করবো?
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আট হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করে ছুটে এসেছেন এক প্রবাসী কর্মী। তিনি জানান, আগামীকাল ১৭ এপ্রিল তার ফ্লাইট। লকডাউনের কারণে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় তিনি করোনার নমুনাও পরীক্ষা করেননি। আগামীকাল ফ্লাইট কনফার্ম জানতে পারলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেবেন। কিন্তু এখানে এসে দেখেন অফিস বন্ধ।
নোয়াখালীর রামগতির বাসিন্দা প্রবাসী হেলালের ফ্লাইট ছিল ১৫ এপ্রিল দিবাগত রাতে। ১১ এপ্রিল তিনি সৌদি এয়ারলাইন্সের অফিসে যোগাযোগ করলে বলা হয়, লকডাউনের কারণে বিমান চলাচল বন্ধ। যেদিন ফ্লাইট চলাচলের ঘোষণা দেবে সেদিনই এসে অফিসে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু আজ এসে দেখেন, অফিস বন্ধ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি একজন মানুষ আট হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে ঢাকায় এলাম। জানি না ভাগ্যে কী আছে! একই সুরে দুর্ভোগের কথা জানালেন অনেকেই।
Advertisement
এমইউ/এমএইচআর/এমএস