শিক্ষা

নতুন ভর্তি ও ঝরে পড়ার পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই সরকারের কাছে

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি এবং ঝরে পড়ার বিষয়ে সরকারের কাছে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, দারিদ্র্য, স্থানান্তর, কাজে নিয়োজিত হওয়াসহ বিভিন্নভাবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ঝরে পড়ার সংখ্যা অনেক বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

Advertisement

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক আলমগীর মো. মনসুরুল আলম ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক জানান, স্কুলগুলোর তথ্য পাঠানোর জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখনেও সে তথ্য পাওয়া যায়নি।

ডিপিই মহাপরিচালক মনসুরুল আলম বলেন, ‘২০২১ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ক্লাসে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ৩১ মার্চের মধ্যে তালিকা পাঠাতে নির্দেশনা দেই, তবে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এখনও অনেকে তা পাঠাতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি তাতে বোঝা যায় জেলা শহর, উপজেলা ও গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যালয়ে ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে এবং শহরের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমেছে।’

Advertisement

ডিপিই মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে সরকারি বিদ্যালয়গুলোর অনেক শিক্ষার্থী এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে গেছে। সে সম্পর্কে নথিপত্র দেখিয়ে সরকারি স্কুলগুলোকে ভর্তি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে কারণে গ্রামীণ অঞ্চল ও উপজেলার স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে।’

কিন্ডারগার্টেনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্ডারগার্টেনগুলোকে তালিকা পাঠাতে বলিনি। বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয়শুমারী প্রকল্পের আওতায় তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।’

এ বিষয়ে মাউশি মহাপরিচালক গোলাম ফারুক বলেন, ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় এক লাখ আসন শূন্য ছিল। সবগুলো আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। বেসরকারি স্কুলের তথ্য আমাদের কাছে নেই। বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তাদের ভর্তি চলছে এবং অনেক অভিভাবকরা নিয়মিত ক্লাস দ্বিতীয়বারের মতো রাখতে নতুন ক্লাসে শিশুদের ভর্তি করতে অনীহা প্রকাশ করছেন।’

তবে স্কুলগুলো ফের চালু হলেই ড্রপ-আউটের (ঝরে পড়া) সঠিক সংখ্যা বের করা যাবে।

Advertisement

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেনস অ্যাসোসিয়েশনের একটি অংশের সদস্য সচিব মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে আনুমানিক ৫ হাজার কিন্ডারগার্টেন এক বছরের জন্য লোকসানের কারণে স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানকে ঢাকা থেকে নিজের গ্রামে চলে গেছেন। অনলাইনে ক্লাস সুবিধা না থাকায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে বাসায় পড়াচ্ছেন।’

২০১৯ সালে প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুসারে, প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার প্রায় ১৮ শতাংশ ছিল এবং এটি মাধ্যমিক স্তরে ৩৫ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। ২০১৭ সালে ছিল যথাক্রমে ২১ শতাংশ এবং ৪৬ শতাংশ। বছর শুরুর দুই মাসের মধ্যে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করে তা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে দেয়ার কথা থাকলেও তিন মাস পরেও তা দেয়া হয়নি।

এছাড়াও চলতি গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, স্থানান্তর, কাজে যোগদান, দারিদ্র্যসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

এ বিষয়ে গণস্বাক্ষরতার নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘সরকারকে চলতি শিক্ষাবর্ষে নতুন ভর্তি ও পুরনোদের তালিকাভুক্তির সংখ্যা দ্রুত সংগ্রহ করতে হবে। ড্রপআউট হার গণনা করতে হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে সমস্ত শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়লো তা জানা সম্ভব হবে না।’

করোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সব শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষা পৌঁছে দেয়া যায় সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এমএইচএম/এসএস/এমএস