করোনাভাইরাসের টিকা নিতে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার মানুষ আসছেন টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নিতে।
Advertisement
টিকা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন সচেতনমহল।
বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে আসা ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকার সাখাওয়াত হোসেন মুসল্লী বলেন, ‘এখানে টিকা নিতে এসেছি, না করোনাভাইরাস বহন করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি তা বলতে পারছি না। সকাল থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকার সিরিয়াল পেয়েছি। হাজার হাজার মানুষ কোনা প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। অনেকের মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই। গায়ের সঙ্গে একে অপরের লেগে থেকে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে ও বসে আছে লোকজন।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মাছের বাজারেও এত ভিড় থাকে না। টিকা নিয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার কথা বলা হলেও বসার জন্য পর্যাপ্ত কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে অনেকে টিকা নিয়েই চলে যাচ্ছেন।’
এ বিষয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. হাফিজ উদ্দিন জানান, করোনার টিকা দেয়ার বিষয়টি মূলত দায়িত্ব সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের। আমাদের হাসপাতালে তাদের কেবলমাত্র স্থানটি ব্যবহারের জন্য দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার টিকা নিতে আসা লোকজনের মধ্যে কে করোনাভাইরাস বহন করছেন তা বলা মুশকিল। এ হাসপাতালেও করোনার ইউনিট রয়েছে। টিকা নিতে আসা লোকদের এবং হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসা-যাওয়া করার কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে।’
হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘করোনার টিকা দেয়ার জন্য হাসপাতালের তিনটি ফ্লোর ব্যবহার করা হচ্ছে। করোনার টিকা দেয়ার জন্য হাসপাতালের বাইরে পৃথক কোনো স্থান ব্যবহার করলে সবার জন্য মঙ্গল হতো বলে।’
Advertisement
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম এ হাসপাতালে করেনার টিকাদান কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। সরকারি নির্দেশনায় হাসপাতালটি করোনার টিকা নেয়ার স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন ইচ্ছে করলেই তা স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারি নির্দেশনার প্রয়োজন আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ জন্য সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের লোকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। একমাত্র স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সচেতনতাই করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।’
সিটি করপোরেশনের এই কর্মকর্তা জানান, ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গাজীপুরের ১০টি টিকাদান কেন্দ্রে এক লাখ ৩১ হাজার ৪৫৫ জন করোনার প্রথম ডোজ এবং ৬ হাজার ৯৩৫ জন দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৪৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৯৬৯ জন এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫৪ জন। করেনায় আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাজীপুর মহানগরীতে ৫ হাজার ৯৬৯ জন।
মো. আমিনুল ইসলাম/এসজে/এমকেএইচ