করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় এক সপ্তাহের জন্য দেয়া কঠোর নির্দেশনা অমান্য করে যারা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের বিষয়ে নজরদারি করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব।
Advertisement
রাজধানীর শাহবাগে মোড়ে এমন ১৫ জনকে সাত হাজার টাকা জরিমানা করে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর থেকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে সহায়তা করেন র্যাব-৩ এর সদস্যরা।
দেখা যায়, একটি ফার্মাসেটিকেলস প্রতিষ্ঠানের গাড়ি আটকায় র্যাব। গাড়ির স্টিকারে লেখা জরুরি ওষুধ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত। গ্লাস নামাতে বললেন ম্যাজিস্ট্রেট। দেখলেন গাড়ির ভেতরে ছিল গাড়িতে কয়েকটি কার্টন। চালককে বললেন, কার্টন কিসের? চালক বললেন, খেজুরের বক্স। ডাক্তারদের গিফট করার জন্য কোম্পানি থেকে পাঠানো হয়েছে।
কাজটি জরুরি না হওয়ায় ওই চালককে ১ হাজার টাকা জরিমানা করেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে জাহাঙ্গীর নামের ওই চালক প্রথমে জরিমানা দিতে রাজী হননি। তিনি বলেন, আমি শুধুমাত্র চালক, আমার কাছে এত টাকা নাই। তাছাড়া আমি কেন জরিমানা দেব।
Advertisement
একপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আপনি জরিমানা সংগ্রহ করে এনে দেন, অথবা ৩ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হল। পরে অবশ্য ওই চালক জরিমানা দিয়ে মুক্তি পান।
শাহ আলম নামে একজন লকডাউনের মধ্যে মুভমেন্ট পাস নিয়ে মেয়েদের ওড়না ডেলিভারি দিতে যাচ্ছিলেন। তিনি অনলাইনের মাধ্যমে পোশাক বিক্রি করেন। এ সময় সাত দিনের বিধিনিষেধে মানুষের অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছিলেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
ম্যাজিস্ট্রেট শাহ আলমকে তাকে দাঁড় করিয়ে কেন বের হয়েছেন তা জানতে চান। এরপর পাস নিয়ে বের হলেও তার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় শাহ আলমকে ১০০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযান চলাকালে শাহ আলমের মোটরসাইকেলে থাকা ব্যাগ সম্পর্কে ম্যাজিস্ট্রেট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এতে মেয়েদের ওড়না আছে। আমি নিউ মার্কেট এলাকায় যাব ডেলিভারির জন্য।’
Advertisement
অর্থদণ্ড পাওয়া শাহ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি অনলাইন ডেলিভারিকে জরুরি সেবা হিসেবেই জানতাম। তাই বের হয়েছিলাম।’
শিমুল ইসলাম নামের একজন কাঁচামাল ব্যবসায়ী। মাগুরা থেকে কাঁচামাল নিয়ে এসে রাজধানীর যাত্রাবড়ী বিক্রি করে আবার মাগুরায় ফিরে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রাজধানীর শাহবাগ মোড় পার হতে গেলে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দেখে ভয়ে মাস্কের বদলে মুখে গামছা দিয়ে এক পাশ দিয়ে দ্রুত চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
ঘটনাটি র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট দেখে ফেলেন এবং রিকশা থামাতে নির্দেশ দেন। রিকশা থেকে নেমে শিমুল বলেন, আমি র্যাব দেখে ভয়ে মুখে গামছা নিয়েছিলাম।
শিমুল ইসলাম জাগো নিজকে বলেন, রাতে কাঁচামাল নিয়ে মাগুরা থেকে যাত্রাবাড়ীতে এসেছিলাম। বিক্রি করে আবার মাগুরা ফিরে যেতে যাত্রাবাড়ী থেকে রিকশা নিয়ে গাবতলীর উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম। শাহবাগ মোড়ে আমি র্যাব দেখ ভয়ে মুখে গামছা দেই। মাস্কও ছিল কিন্তু মুখে না। মাস্কটি ছিল রিকশার হুডির সঙ্গে।
তিনি বলেন, এই লকডাউনের মধ্যে অনেক কষ্ট করে ঢাকায় এসেছিলাম এরপরেও র্যাব আমাকে ৩০০ টাকা জরিমানা দিল।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জাগো নিউজকে বলেন, অনেক দূর থেকেই রিকশাটি লক্ষ্য করছিলাম রিকশায় বসা একজন মাস্ক পরেনি। পরে আমাদের চেকপোস্টের কাছাকাছি এসে মাস্ক পরেন লোকটি। মাস্ক থেকেও না পরার কারণে ও সরকারি বিধি না মানার কারণে তাকে ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জাগো নিউজকে বলেন, রাজধানীতে মাস্ক পরার প্রবণতা আগের তুলনায় অনেকাংশেই বেড়েছে। র্যাব গত কয়েকদিন মাস্ক পরা নিশ্চিতে অভিযানের ফলে মাস্ক পরার হার বেড়েছে।
আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত টানা অভিযানে ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আর জরিমানা করা হয় ৭ হাজার টাকা। এ সময় রিকশাওয়ালা ও দরিদ্রদের মাঝে মাস্ক ওই হ্যান্ড-স্যানিটাইজার বিতরণ করে র্যাব।
তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী যারা আদেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। যারা বিনা কারণে বাইরে ঘোরাঘুরি করবেন, মুভমেন্ট পাস না নিয়ে বাইরে বের হবেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না তাদেরকে জরিমানা করাও হচ্ছে। জরিমানার পাশাপাশি জনগণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না আসার জন্য এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
পলাশ কুমার বসু আরও বলেন, জরিমানা করা র্যাবের উদ্দেশ নয়। র্যাবের উদ্দেশ করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা এবং সরকারের সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন মানতে সচেতনতা তৈরি করা।
টিটি/এমআরএম/এমকেএইচ