বিশেষ প্রতিবেদন

কৃষকের ধান যাচ্ছে মহাজনের গোলায়

আমনের বাম্পার ফলন হলেও ধানের দাম না থাকায় মহাবিপদে পড়েছেন কৃষক। ধানের খরচ তুলতে দিয়ে সস্তায় বিক্রি করতে হচ্ছে ধান। ধান কাটার মৌসুম শেষ পর্যায়ে এলেও বাজারে আশানারূপ দাম না পাওয়ায় কৃষকের ধান চলে যাচ্ছে মহাজনের গোলায়। প্রান্তিক কৃষকরা ধানের উপর নির্ভরশীল হলেও ধান বিক্রির সময় বাজারে ধানের দাম কম থাকে। সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের নিয়ম থাকলেও এক ছটাক ধানও কৃষকরা দিতে পারেন না। সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় আমনের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে সব এলাকা। কিন্তু কৃষকের মুখে হাসি নেই। কৃষক যেন নিরূপায় হয়ে ধানের আবাদ করছেন। ইতোমধ্যে জেলার ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। কিন্তু কৃষকের বাড়ির উঠানে নেই ধানের স্তুপ। গোলায় ভরা ধান। অন্যের জমিতে বর্গাকৃত চাষিরা পড়েছেন মহা সঙ্কটে। একদিকে ধানের বাজারে ধস, অপরদিকে কৃষি জমিতে সার, বীজ ও বালাইনাশকের টাকা তুলতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। আসন্ন রোরো মৌসুমে কৃষক ধানের চেয়ে ভুট্টার দিকে বেশি ঝুঁকছে। প্রতিবিঘা জমিতে ৩/৪ হাজার খরচ করে ৪/৫ হাজার টাকা ধান তারা ঘরে তুলছেন। অপরদিকে, কৃষকরা ভুট্টা চাষ করে প্রতিবিঘা জমিতে খরচ দাঁড়ায় ৫/৬ হাজার টাকা সেখানে ভুট্টা বিক্রি করতে পারের ১০-১২ হাজার টাকায়।নীলফামারী কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর আমন মৌসুমে এক লক্ষ ১১ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ধান রোপন করা হয়েছে এক লক্ষ ১২ হাজার ১`শ ৩০ হেক্টর জমিতে। আমনের বাম্পার ফলনের কারণে কৃষকরা চলতি মৌসুমে ৩ লক্ষ ৬ হাজার ১৬ মেট্রিক টন চাল ঘর তুলতে পারবেন। ধানের হিসেবে দাঁড়ায় চার লক্ষ ৬২ হাজার ৩২ মেট্রিক টন। ডিমলা উপজেলা পশ্চিম ছাতনাই গ্রামের কৃষক আইনুল হক জাগো নিউজকে জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে বর্গা চাষ করে ধান পেয়েছেন ১০২ মণ। খরচ হয়েছে ২৮ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ ধান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫`শ ৩০ টাকায়। বর্গাচাষ করে যে ধান পাবেন তা তার খরচও উঠবে না। ইরি বোরো মৌসুমে বর্গাকৃত জমিতে তিনি ভুট্টার আবাদ করবেন। প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করতে জমির মালিককে দিতে হয় দুই হাজার ৫`শ টাকা আর খরচ হবে তিন হাজার টাকা। ছাতনাই বালাপাড়া গ্রামের কৃষক মফিজার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করে ধান চাষ করি। আর লাভবান হচ্ছেন মহাজন। কৃষকরা যে সময় ধান বিক্রি করেন তখন বাজারে দাম থাকে না এবং সরকারও ধান নেয় না। কৃষকদের ধান বিক্রি শেষ হয়ে গেলে বাজারে ধানের দাম বেড়ে যায়। কৃষকরা ধান বিক্রি করে জমিতে ভুট্টা লাগানোর জন্য তৈরি করতে সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে।দক্ষিণ তিতপাড়ার কৃষক আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছর আমন ক্ষেতে সার ও বীজ প্রয়োগ করেও কারেন্ট পোকার আক্রমণের তিন বিঘা জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, ধানের গাছ ভালো হলেও কারেন্ট পোকা আমাকে সর্বস্বান্ত করেছে। কৃষি বিভাগকে এসময় পাওয়া যায় না।ডোমার উপজেলার গোমনাতি গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, সরকারিভাবে কৃষকদের কাছে ধান কেনার ঘোষণা দেয়া হলেও কৃষক এক ছটাক ধানও খাদ্য গুদামে দিতে পারেন না। এক শ্রেণির টাউট বাটপার কৃষকদের নামে খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করে। সরকার উচ্চ মূল্যে ধান কিনলে এ সুফল কৃষক পায় না। মেম্বার-চেয়ারম্যান কৃষকদের নামের ধানের স্লিপ ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দেন। নীলফামারী কৃষি অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আফতাব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, নীলফামারী জেলায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকদের ধান ঘরে তুলতে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। তুলনামূলক অন্যান্য বছরের তুলনায় আমনের পোকার উপদ্রুপ কম হয়েছে। বালাইনাশক ব্যবহার কম করায় কৃষকদের আমন ধানে খরচও কম হয়েছে। কৃষক ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না প্রসঙ্গে বলেন, কৃষি বিভাগ কৃষকদের কৃষি পণ্য আবাদের পাশাপশি উচ্চমূল্য ফসল আবাদে ভূমিকা রাখে। ধানের দামের বিষয়টি স্থানীয় বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।এমজেড/এমএস

Advertisement