ধর্ম

রোজা না রাখতে কাজের অজুহাত দেখানো যাবে কি?

রোজা ফরজ ইবাদত। রোজা রাখার শক্তি ও সামর্থ আছে; এমন সবার ওপর আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। আর কারা রোজা রাখতে পারবে না; সেই বিষয়টি সম্পর্কেও কুরআনুল কারিমে সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। কিন্তু তারপরও রোজা না রাখতে কাজের অজুহাতে দেখানো যাবে কি?

Advertisement

রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। কুরআন নাজিলের এ মাসে রোজা রাখা সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এভাবে এসেছে-

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘রমজান মাসই হল সেই মাস; যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে।’

Advertisement

এ আয়াতের আলোকে যারাই রমজান মাস পাবে তারা মাসব্যাপী রোজা পালন করবে। এটাই ইসলামি শরিয়তের নির্দেশ। কিন্তু যারা রোজা পালন করতে অপরাগ; কিংবা যেসব সমস্যার কারণে রোজা রাখা যাবে না। এমন বিষয়ের ধরন সম্পর্কেও আগের আয়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ

‘গণনার কয়েকটি দিনের জন্য। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৪)

আর যারা একেবারেই  রোজা রাখতে অপরাগ। সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। তাদের ক্ষেত্রে করণীয় কী হবে সে সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা এসেছে কুরআনে-

Advertisement

وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ وَأَن تَصُومُواْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

আর এটি (রোজা) যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৪)

সফর কিংবা অসুস্থতায় যারা রোজা রাখা থেকে বিরত থাকা যাবে। যখন তারা স্থায়ী হবে কিংবা সুস্থ হবে তখন ছেড়ে দেওয়া রোজাগুলো পূরণ করে নেওয়ার কথা রয়েছে। এ সম্পর্কেও রয়েছে কুরআনের ঘোষণা-

وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে (এ রোজার) গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য (অসুস্থতা ও সফরে রোজার বিধান) সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা (পরে রোজা রেখে) গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা'আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

সুতরাং কোনো কাজের অজুহাত দেখিয়ে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকার সুযোগ নেই। এমনকি কোনো ব্যক্তি যদি কঠিন কাজেও নিয়োজিত থাকে; তাকেও রমজানের ফরজ রোজা রাখতে হবে। ইসলামি শরিয়তের আলোকে যদি কারো কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক যৌক্তিক কারণ থাকে তবে সে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকবে এবং রমজানের পরে ছেড়ে দেওয়া রোজাগুলো পূরণ করে নিতে হবে। ইসলামের নির্দেশনাও এমনই।

কেননা ঐতিহাসিক বদরযুদ্ধ চলাকালীন কঠিন সময়েও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম মরুপ্রান্তর বদরে রোজা রেখেই যুদ্ধ করেছিলেন।

যদি কোনো ব্যক্তি কঠিন কাজে নিয়োজিত থাকে তবে তার জন্য সম্ভব হলে এ বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি। তাহলো-

১. ধৈর্য ধারণ করা;

২. কাজ যদি জীবিকার জন্য হয়; তবে সহজ কাজ খোঁজ করা;

৩. সম্ভব হলে রাতের বেলা কাজের আঞ্জাম দেয়া;

৪. সম্ভব হলে অন্য কোনো স্থানে কাজের জন্য স্থানান্তরিত হওয়া অথবা অন্য বিকল্প যে কোনো সহজ উপায় খুঁজে বের করা।

মনে রাখতে হবে

কাজের চাপের কারণে রোজা না রাখার অনুমোদন ইসলামি শরিয়ত দেয়নি। কাজ যত কঠিনই হোক না কেন তা শরীর কিংবা অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে রমজানের ফরজ রোজা পালন করা জরুরি। তবে কঠিন কাজের মধ্যেও যদি কেউ রোজা রাখতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায় তবে সে সময় রোজা ভেঙে ফেলা যাবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের ফরজ রোজা যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। ইসলামি শরিয়তের আলোকে রমজানের রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস