করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দেশজুড়ে ৮ দিনের কঠোর লকডাউন চলছে। বুধবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ দফার লকডাউন চলবে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত। লকডাউনে চলাচলে বিধিনিষেধ মানাতে মাঠে রয়েছে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে মুভমেন্ট পাস অ্যাপ থেকে পাস নিয়ে বের হতে হচ্ছে। বাইরে বের হলে পড়তে হচ্ছে পুলিশি চেকপোস্টে। সেখানে মুভমেন্ট পাস দেখাতে ব্যর্থ হলে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
Advertisement
তবে দেশের অর্থনীতি ও রফতানিমুখী শিল্পের কথা ভেবে সেগুলোতে লকডাউন শিথিল করেছে সরকার। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে।
কঠোর লকডাউনের মাঝেও দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে উৎপাদন চলছে নির্দেশনার আলোকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার স্বাস্থ্যবিধি মানতে ব্যর্থ হলে কারখানা চালাতে পারবেন না। তবে মুভমেন্ট পাস নিতে কিছুটা ঝামেলা হচ্ছে। বার বার এটা নিতে হচ্ছে। অন্যদিকে শ্রমিকরা বলছেন, প্রথমে কিছুটা ভয় কাজ করলেও কারখানায় এসে সেটি দূর হয়েছে, রয়েছে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা।
নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি কারখানা ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
Advertisement
এ এলাকায় সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই পোশাক কারখানাগুলোতে উৎপাদন চলছে। প্রতিটি কারখানার প্রবেশ পথে রয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। প্রায় প্রতিটি কারখানাতেই প্রবেশপথে একাধিক সাবান ও বেসিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারখানায় প্রবেশ করতে হচ্ছে ব্লিচিং পাউডার ও জীবানুনাশক মেশানো পাপোশে পায়ের জুতা ভিজিয়ে।
শ্রমিকদের হাত-পা জীবাণুমুক্ত করার পর শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে। এরপর শরীরে জীবাণুনাশক স্প্রে করে তারা যাচ্ছেন নিজ নিজ আসনে। দুই ঘণ্টা পর পর এবং খাবার ও নাস্তার বিরতির সময়ও জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।
তবে শ্রমিকদের পরিবহন ব্যবস্থায় রয়েছে ভিন্নতা। কারখানার পার্শ্ববর্তী এলাকায় যারা থাকেন তারা পায়ে হেঁটে কারখানায় আসছেন। আর দূরবর্তী স্থান থেকে আসা শ্রমিকদের জন্য কারখানা থেকেই পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আসাদ নামে একজন শ্রমিক জানান, ‘কঠোর লকডাউনের কথা শুনে প্রথমে একটু ভয় তৈরি হয়েছিল। তবে কারখানায় আসার পর, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেখে ভয় দূর হয়েছে। খুবই ভালোভাবে কাজ চলছে, বাসায় ফেরার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
Advertisement
এ বিষয়ে বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি এবং ফতুল্লা অ্যাপারেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘কঠোর লকডাউনের মাঝে কারখানা খোলা। এ নিয়ে আমাদের বাড়তি সতর্কতা আছে। আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ প্রতিটি শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখা। আমার শ্রমিকরা ভালো থাকলেই কারখানা ভালো থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানতে এবার আমরাও কঠোর হয়েছি। শ্রমিকদের আসা-যাওয়ার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা রাখছে কারখানা। হাত ধোয়া, পোশাক ও পায়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা, ফ্লোর জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে একটু পর পর। প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোনো কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মানতে না পারলে কারখানা চালাতে পারবে না।’
মুভমেন্ট পাস নিয়ে তিনি বলেন, ‘আরএমজি সেক্টরের সকলকে মুভমেন্ট পাসের আওতামুক্ত করার কোনো ঘোষণা আমরা পাইনি। তাই প্রতিবার মুভমেন্ট পাস নিতে একটু ঝামেলা হচ্ছে। ওয়েবসাইটের নির্মাতারা এর ব্যাবহারকারীর সংখ্যা মাথায় রেখে তৈরি করলে হয়তো সাধারণ কর্মচারীদের জন্য সহজ হতো। তবে এখন পর্যন্ত রাস্তায় আমাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়নি।’
ইএআর/এমএইচআর/জেআইএম