বিশেষ প্রতিবেদন

কঞ্চি কলমের বাঁশ বাগানে স্বপ্ন দেখছেন নওগাঁবাসী

বিলুপ্ত হওয়ার পথে বাঁশ। আর এ বাঁশজাত শিল্প রক্ষায় নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় কৃত্রিমভাবে (কঞ্চি কলম) বাঁশ বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। সামাজিক বন বিভাগের সহযোগিতায় গড়ে তোলা এই বাঁশ বাগানে লাখ লাখ টাকার স্বপ্ন দেখছেন এলাকাবাসী। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ বাঁশ বাগান থেকে এলাকাবাসীর আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় হবে। সেই সঙ্গে বিলুপ্তের হাত থেকে বাঁশজাত শিল্প রক্ষা পাবে। পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।ধামইরহাট বিট বনবিট অফিস সূত্রে জানা গেছে, বনবিট কর্মকর্তা লক্ষণ চন্দ্র ভৌমিক তার অফিসে বিশেষ পদ্ধিতে ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রায় ২০ হাজার কঞ্চি কলমের বাঁশ তৈরি করেন। তার পরামর্শে উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের সিলিমপুরে ২০১২-১৩ অর্থবছরে এলাকার ১০০টি পরিবারের একজন করে উপকারভোগী নিয়ে আত্রাই নদীর পাশে ফসল না হওয়া ৩৫ হেক্টর পতিত জমির উপর ১৭ হাজার পাক-কঞ্চি কলমের বাঁশের চারা ১৫ ফিট দূরত্বে লাগানো হয়। উপকারভোগীরা এসব বাঁশ রোপণ এবং নিয়মিত পরিচর্যা করে আসছেন।উপকারভোগীরা জানিয়েছেন, বাঁশের চারা লাগানোর পর থেকে একদিন পর পর পানি দিতে হয়। বাঁশ মাটিতে লেগে গেলে প্রতি বছরের বৈশাখ মাসে মাটিতে জৈব সার, ইউরিয়া, ডিএপি ও পটাশ সার বাঁশের গোড়ায় ছিটিয়ে পানি দিয়ে আগলা করে দিতে হয়। এরপর শক্ত খুঁটি দিয়ে বাঁশের কলম সোজা করে বেঁধে দিতে হয়। এতে ভাদ্র মাসে বন্যা হলেও কোনো সমস্যা হয় না। এছাড়া যে পাতাগুলো থেকে যায় তা মাটির সঙ্গে পচে যায়। এতে বাঁশের উপকার হয়। প্রায় ৪ বছর পর বাঁশ পরিপক্ক হলে কাটার উপযোগী হবে। উপকারীভোগী শান্তনা রানী রায় বলেন, বাঁশ বাগানের শুরু থেকেই দেখাশুনা করছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সুফল পাননি। তবে আগামী এক বছর পর সুফল পাবেন বলে আশা করছেন। এরপর প্রতি বছর থেকে নিয়মিত টাকা পাবেন। এ থেকে যে টাকা পাবেন তা দিয়ে সংসারের উন্নয়ন হবে এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবেন।সদস্য মাহমুদা বলেন, সংসারের কাজের পাশাপাশি সপ্তাহে ২-৩দিন বাঁশ বাগান পরিচর্যার জন্য সময় দেন। এতে পরিবার থেকে কোনো অসুবিধা হয় না। বাঁশ বাগান পরিচর্যায় বনবিট কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেন। সুন্দর এই বাঁশ বাগান থেকে আগামীতে সুফল পাবেন বলে জানান।উপকারীভোগী রেখা রানী বলেন, বাঁশ বাগানের শুরু থেকেই সদস্য আছেন। বিভিন্ন মিটিং এবং আলোচনায় তাদের ডাকা হয় ও পরামর্শ দেয়া হয়। এলাকাবাসী আকতার হোসেন বলেন, নিয়মিত বাঁশ বাগান পরিচর্যা ও যত্ন করায় স্বল্প সময়ে এটি একটি সফল বাঁশ বাগানে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি উপকারীভোগীরা এ থেকে সহযোগিতা পাবেন। উপকারীভোগীরা মোটা অঙ্কের একটা আয় পাবেন এবং আর্থিক উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় হবে। বাঁশ সুন্দর হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ভ্রমণে আসেন। বাঁশ বাগানের তত্ত্বাবধায়ক কামাল হোসেন বলেন, বাঁশ বাগানের এই সব জমিতে পানি সঙ্কটের কারণে ঠিকমতো ফসল হতো না। খরায় ফসল মরে যেত। এক সময় সবাই মিলে একটা সমিতি করে বন বিভাগের বনবিট কর্মকর্তা লক্ষণ চন্দ্র ভৌমিকের পরামর্শে ও নির্দেশনায় পতিত জমিতে বাঁশের বাগান করা হয়। প্রতিটি ঝাড়ে প্রায় ১০ থেকে ২০ টা করে বাঁশ হয়েছে। তিনি আরও জানান, ইত্যেমধ্যে প্রতিটি ঝাড়ে তিন থেকে চারটি করে বাঁশ পরিপক্ক হয়েছে। আগামী দুই/এক বছরের মধ্যে প্রতিটি ঝাড় থেকে ৪/৫টি বাঁশ বিক্রি করা যাবে। বৃক্ষরোপণে চার বার প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে প্রথম পুরষ্কার গ্রহণ করেন বনবিট কর্মকর্তা লক্ষণ চন্দ্র ভৌমিক। তিনি জানান, ধামইরহাট বিটের আওতায় ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩৫ হেক্টর জমিতে ৪টি গ্রামে সিলিমপুর, বলরামপুর, পশ্চিম চানপুর এবং চৌঘাট গ্রামের উপকারভোগীদের নিয়ে কঞ্চি কলমের বাঁশ বাগান করা হয়েছে। উপকারভোগীরা যথাসময়ে বাঁশ বাগান পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। এটি সফল বাগানে পরিণত হয়েছে। উপকারভোগীরা এতে সুফল পাবেন বলে আশা করছেন। ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলী বাঁশ বাগানটি পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া ৯৭ শতাংশের উপর বাঁশের চারা বেঁচে আছে। বাংলাদেশের মধ্যে নওগাঁর ধামইরহাটে একটি প্রথম হয় বলে জানান তিনি।তিনি আরও জানান, একটি কোঁরল (নতুন চারা) বাঁশ থেকে পরিপক্ক বাঁশ হতে প্রায় ৩ বছরের মত সময় লাগে। একটি ঝাড়ে যে কয়টি বাঁশ পরিপক্ক হবে তা নাম্বারিং করে সরকারি মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। বাঁশ বাগান থেকে যে আয় হবে উপকারীভোগীরা পাবেন ৪৫ শতাংশ, ৪৫ শতাংশ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হবে এবং ১০ শতাংশ বাঁশ বাগান পরিচর্যার কাজে খরচ করা হবে।এসএস/পিআর

Advertisement