জাতীয়

‘শহুরে’ মানুষ ফেরায় আতঙ্কে গ্রামের বাসিন্দারা

গত এক সপ্তাহ থেকে সরকারের উচ্চ মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছিল ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হবে। এই কঠোর বিধিনিষেধের খবরে এক অজানা শঙ্কায় কর্মস্থল ছেড়ে নাড়ির টানে গ্রামে ফিরেছেন অনেক মানুষ।

Advertisement

বুধবার (১৪ এপ্রিল) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, চন্দানাইশ, সাতকানিয়া, পটিয়া, হাটহাজারী ও সীতাকুণ্ডসহ আশপাশের উপজেলার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের উপজেলা থেকে যারা বিভিন্ন শহরে কাজ করতেন তাদের প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ লোকই ফিরেছেন গ্রামে। বিশেষ করে যারা চট্টগ্রাম শহরে থাকতেন, তাদের প্রায় সবাই ফিরেছেন। আবার যারা ঢাকা কিংবা অন্যান্য দূরের জেলা শহরে কাজ করেন তাদেরও একটি অংশ বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রামে ফিরেছেন বলে জানান তারা।

এদিকে ‘শহুরে’ মানুষদের এভাবে গ্রামে ফেরায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে এক ধরনের করোনাভীতি কাজ করছে। গ্রামের অধিকাংশ লোক করোনাকে শহরের রোগ মনে করে থাকেন। তারা মনে করেন এটি গ্রামে হয় না, ‘শহরের বড় বড় লোকদের’ বেশি হয়।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা আসলে শহর, গ্রাম কিংবা অঞ্চলভিত্তিক রোগ নয়। বাস্তবসম্মত কারণেই গ্রামে করোনা কম ছড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে, গ্রামের এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি দূরে। রাস্তাঘাটে শহরের মতো তেমন ভিড় নেই। লোকজন একে অপর থেকে দূরে থেকে চলাফেরা করতে পারেন, তাই গ্রামে করোনার সংক্রমণ কম হয়।

Advertisement

আবার পরিসংখ্যানও তাই বলছে। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৪৫ হাজার ৭০৮ জন। এদের মধ্যে নগরে ৩৬ হাজার ৬৫১ জন এবং গ্রামে ৯ হাজার ৫৭ জন। শতকরা হিসাবে শহরে প্রায় ৮০ শতাংশ আর গ্রামে মাত্র ২০ শতাংশ লোক করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা এটিও বলছেন, গ্রামে যদি করোনা ছড়ায়, তবে বড় ধরনের বিপদ হবে। কারণ তারা রোগটি সম্পর্কে সচেতন নন। এটির সংক্রমণ এবং প্রতিরোধের বিষয়টিও বেশিরভাগের অজানা।

সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা মো. ইলিয়াস জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ শহুরে মানুষ ফিরেছেন। তাদের কে কীভাবে এসেছেন আমরা জানি না। কোনো করোনা নিয়ে গ্রামে আসছেন কিনা এটিও বোঝা যাচ্ছে না। তবে তারা যে যার বাড়িতে এসেছেন। এখানে কেউ তো কাউকে মানা করতে পারবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘শহরে আক্রান্ত ও মৃতের কথা নিয়মিত টেলিভিশনে দেখি। আমাদের গ্রামে করোনায় কেউ মারা যাননি। খুব বেশি আক্রান্ত হতেও দেখা যায়নি। দূরে দূরে কোথাও আক্রান্ত হওয়ার কথা শুনেছি। তবে করোনা যাতে গ্রামে না ছড়ায় এজন্য দোয়া করছি।’

Advertisement

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘শহরের লোকজন থেকে গ্রামে করোনা ছড়াতে পারে কথাটা একেবারে অমূলক নয়। গ্রামে মানুষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে তাই সেখানে করোনা একটু কম ছড়ায়। শহরে বাসা-বাড়ি, রাস্তাঘাট সর্বত্র জ্যাম থাকায় করোনা বেশি ছড়ায়। করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যান দেখলেও শহর এবং গ্রামে আক্রান্তের হারে স্পষ্ট ব্যবধান দেখা যায়। শহর থেকে কেউ যদি সুপ্ত অবস্থায় করোনার জীবাণু নিয়ে গ্রামে যায় তবে গ্রামেও করোনা ছড়াতে পারে।’

মিজানুর রহমান/ইএ/এমকেএইচ