সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে লিচুর সবুজ গুটি উঁকি দিচ্ছে। গত দুই বছরের চেয়ে এ বছর লিচু বাগান বেচাকেনায় ব্যাপক সাড়াও পড়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন দিনাজপুরে।
Advertisement
ঈদের ৩ থেকে ৪ চার দিন পর বাজারে লিচু আসার কথা থাকলেও দিনাজপুরের লিচু বাজারে পাওয়া যাবে অন্যান্য বছরের তুলনায় ১৫ দিন পর অর্থাৎ ঈদের অন্তত ১৫ দিন পর।
এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশের মুখোমুখী হতে হয়নি লিচু চাষিদের। তাই তারাও স্বপ্ন দেখছেন উৎপাদিত লিচু ভালো মূল্যে বাজারে বিক্রি করার।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, এবার ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার লিচু উৎপাদন হবে। তবে বেসরকারি হিসাবে লিচু উৎপাদন হবে এর চার গুণ বেশি। যার মূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
Advertisement
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনাজপুরের বিভিন্ন বাগানে, প্রতিটি বাড়ির বসতভিটায় বা আঙিনায় লিচু গাছে থোকায় থোকায় লিচুর গুটি ঝুলছে। চাষিরা বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রামের লিচু চাষি নজরুল ইসলাম জানান, রমজান মাস ও করোনার কারণে গত দুই বছর তার বাগান বিক্রি হয়নি। কিন্তু এবার তার বাগান বিক্রি হয়ে গেছে।
বিরল উপজেলার লিচু চাষি মতিউর রহমান জানান, প্রথম দফায় লিচু বাগান বেচাকেনা হয়ে গেছে। আরেকটা বেচাকেনা হবে লিচু পাকার সময়। তবে অতিরিক্ত রোদ ও গরমের কারণে লিচুর গুটি পুড়ে যাচ্ছে। দিনাজপুরের লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি ও কাঁঠালি জাত উল্লেখয্যেগ্য। এবার রসগোল্লা হিসেবে পরিচিত বোম্বাই লিচুর উৎপাদন খুবই কম। দাম গতবছরের চেয়ে বেশি।
খানসামা উপজেলার লিচু বাগানের মালিক তাজ ফারাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কয়েকজন পাইকার লিচু বাগান দেখে গেছেন। কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো পাইকার লিচু বাগান দেখতেও আসেনি, দামও বলেনি।’
Advertisement
বোচাগঞ্জ উপজেলার চাতইল ইউনিয়নের বনহড়া গ্রামের লিচু বাগানের মালিক শাহ সুলতান আব্দুর রহমান বলেন, ‘গত দুই বছর পর এবার আগাম বাগান বিক্রি হয়েছে।’
কাহারোল উপজেলার লিচু বাগানের মালিক যীদন চন্দ্র শীল জানান, তার দুটি বাগানের মধ্যে একটি আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। আরেকটি বাগান এখনো বিক্রি হয়নি। তবে লকডাউন উঠে গেলে পাইকাররা আসবেন।
রাত জেগে বাগান পাহারা দেয়া এক লিচু চাষি মোসাদ্দেক হোসেন জানালেন আশার কথা। লিচুর ফুল আসা শুরু হওয়া থেকে বাগানের পরিচর্যা শুরু হয়েছে। নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দেওয়া হচ্ছে। রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার লিচু ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। তারা লিচু বাগান কিনছেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তোহিদুল ইসলাম জানান, চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফলনও ভালো হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এবার লিচুর বাজার কালিতলা নিউমার্কেট ও দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে দুই জায়গায়ই হবে। যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমরা লিচু উৎপাদন, পরিবহন, বাজারজাতকরণ থেকে শুরু করে এ সেক্টরের সঙ্গে জড়িত সবার সঙ্গে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি। যাতে এবার লিচু চাষিরা লোকসানের মধ্যে না পড়েন।’
তিনি আরও জানান, চলতি বছর দিনাজপুর জেলায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
এমদাদুল হক মিলন/এমএমএফ/এসইউ/জেআইএম