স্বাস্থ্য

ঢাকা মহানগর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা বন্ধ

করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি ছিল ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল। গত ডিসেম্বরের দিকে দেশে করোনার প্রকোপ কমলে এই হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এখন দেশে করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়লেও হাসপাতালটিতে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়নি।

Advertisement

তিনতলা বিশিষ্ট ১৫০ শয্যার এই হাসপাতালটির অবস্থান পুরান ঢাকার নয়াবাজার এলাকার বুড়িগঙ্গা সেতুর ডানে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্তমানে পুরান ঢাকার প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছে। বহু মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে জায়গা পাচ্ছে না। অথচ মহানগর জেনারেল হাসপাতালের সব শয্যা ফাঁকা পড়ে আছে। অবিলম্বে এই হাসপাতালটিতে করোনা চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানান এলাকাবাসী।

মহানগর জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটি নির্বাচিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে ৩৩ জন নার্স ১৯ জন চিকিৎসক প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে সাতজন চিকিৎসক হাসপাতালটিতে যোগ দেননি।

Advertisement

এছাড়া গত বছর করোনা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটি নির্ধারণ করা হলেও এখানে আইসোলেশন ইউনিট, ভেন্টিলেশন, নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) পরামর্শক ও চিকিৎসক ছিলেন না। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাননি নাগরিকের। এমন অবস্থায় অনেক রোগী হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। এক পর্যায়ে গত বছরের ডিসেম্বরে হাসপাতালটিতে করোনা চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এখন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, এখন হাসপাতালের বহির্বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় করোনা রোগীদের চিকিৎসায় স্থাপন করা শয্যাগুলোর উপর কয়েক স্তর ধুলাবালি পড়ে আছে। এর মধ্যে প্রতিটি রুমের দরজায় তালা লাগানো। চিকিৎসক এবং নার্সদের রুমগুলোতে তালা লাগানো। সেখানে কাউকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি।

পুরান ঢাকার আরমানিটোলার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম। গত ২২ মার্চ তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন।

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে দেখি এখানে করোনা চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডগুলোতে তালা লাগানো। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। তবে অক্সিজেন সংকটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’

Advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘এখন প্রায় প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছুটে আসেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না এই হাসপাতালে এখন করোনা চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় না। এ বিষয়ে রোগীরা জিজ্ঞেস করলেও কোনো উত্তর দিতে পারি না।’

ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক প্রকাশ চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছর ২৫ এপ্রিল সব বিভাগ বন্ধ করে হাসপাতালে শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু নানা সংকটে করোনার চিকিৎসাসেবা পূর্ণাঙ্গভাবে দেয়া সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে করোনা চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ফের অন্যান্য চিকিৎসা সেবা শুরু হয়।’

তিনি বলেন, ‘দেশে করোনা ফের বাড়ায় এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এখন এই হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ শয্যাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং জনবল চেয়েছি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দিলে করোনা চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে।’

ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালটি পরিচালনা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ।

এই বিভাগের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) মো. শরীফ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাসপাতালটিতে করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা করার জন্য আলোচনা চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা, সরঞ্জাম এবং জনবল পেলে করোনা চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হবে।’

এমএমএ/জেডএইচ/এইচএ/জেআইএম