‘বাড়ি তো যাওয়ার দরকার নাই। কিন্তু সরকার লকডাউন দিল। কাম কাইজ সব বন্ধ। অহন বাড়ি না গেলে খামু কী। এই লকডাউন যদি আরও বাড়ায়। তাইলে উপায় কী হইব।’
Advertisement
কথাগুলো বলছিলেন গাড়ি না পেয়ে ট্রাকে চড় পাটুরিয়া ঘাটে আসা রাজমিস্ত্রি ফরহাদ। তার সঙ্গে গাদাগাদি করে একই ট্রাকে যাচ্ছেন আরও অন্তত ৩০ জন।
শুধু ফরহাদ নয়, ঘাটে আসা বেশিরভাগ যাত্রীর মনেই শঙ্কা সর্বাত্মক লকডাউন আরও দীর্ঘ হতে পারে। তাই তাদের উপার্জন বন্ধ। বাসার বাইরে বের হতে পারবেন না। এর জন্য গ্রামে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে সময় কাটতেই ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাড়ি যাচ্ছেন।
এদিকে সরকার ঘোষিত লকডাউন বা বিধিনিষেধকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দিনভর রাজধানী ছেড়ে আসা মানুষের চাপ ছিল পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মোটরসাইকেল, ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে ভেঙে ভেঙে ঘাটে পৌঁছান ঘরমুখো মানুষ। আর এই সুযোগ বুঝে প্রতিটি যানবাহনই চড়া ভাড়া আদায় করেছে যাত্রীদের কাছ থেকে।
Advertisement
মঙ্গলবার দুপুরে ছোট গাড়ির দীর্ঘ সারি প্রায় ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর ফেরি পার হতে পেরেছেন ছোট গাড়ির যাত্রীরা। সন্ধ্যা ৭টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাটে শতাধিক ছোট গাড়ি ফেরি পারের জন্য অপেক্ষা করছিল।
দিনভর ঘাট ঘুরে দেখা যায়, লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকায় যাত্রী ও যানবাহন একত্রে ফেরি পার হচ্ছে। ঘাটে একটি ফেরি ভেড়া মাত্রই যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে ওঠেন। অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক। অতিরিক্ত যাত্রী চাপে অনেক ফেরিতেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও ছিল অসম্ভব। এছাড়া প্রচণ্ড গরমে যাত্রীদের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় আরও কয়েকগুণ। ঘাটে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলেও, তা মানাতে ফেরি সংশ্লিষ্ট অথবা প্রশাসনের কারও কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষজনই রাজধানী অথবা কর্ম এলাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। কারণ এই অবস্থায় চলার মতো তাদের কোনো সামর্থ্য নেই।
পাটুরিয়া ৪ নম্বর ফেরি ঘাটে দাঁড়িয়ে কথা হয় রায়হান উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি যাবেন খুলনায়। গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে ভাড়ার মোটরসাইকেলে করে তিনি পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছান ৬০০ টাকা দিয়ে। তার সঙ্গে আসা আরও একজনের কাছ থেকেও ৬০০ টাকা অর্থাৎ ১২০০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়েছে।
Advertisement
লকডাউনের মধ্যে বাড়ি যাচ্ছেন কেন উত্তরে তিনি বলেন, একটি ব্যাটারি তৈরি কোম্পানিতে চাকরি করি। করোনার কারণে গত মাসের বেতনও দেয়নি। কর্মীও ছাঁটাই করা হচ্ছে। এরমধ্য এক সপ্তাহের লকডাউনে কাজ বন্ধ। ঢাকায় কীভাবে থাকবো। তাই বাড়ি যাচ্ছি।
রাজধানী ছেড়ে আসা আইসক্রিম বিক্রেতা হারুন বলেন, ‘সরকার কয়দিন পর পর লকডাউন দিচ্ছে। এতে আমাদের তো সমস্যা। বসে বসে তো আর খাওয়া যাইব না। তাই বাড়ি যাচ্ছি। বিকল্প কোনো কাজ খুঁজে নিতে হবে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা অঞ্চলের ডিজিএম জিল্লুর রহমান জানান, সর্বাত্মক লকডাউনের খবরে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে গত দুদিন ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার অসংখ্য মানুষ এবং যানবাহন পারাপার হচ্ছে। সাধারণত এই ধরনের পরিবেশ ঈদের সময় দেখা যায়।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে প্রায় ৬ হাজার ছোট গাড়ি (প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস) পারাপার হয়েছে। সোমবার সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত পারাপার হয়েছে প্রায় ২১০০ ছোট গাড়ি। ১৬টি ফেরি দিয়ে বিরতিহীনভাবে এই যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হয়।
বিএম খোরশেদ/এসজে/এমকেএইচ