জাতীয়

লকডাউনের আগের দিন চট্টগ্রামের শপিংমলে জনস্রোত

কঠোর লকডাউন শুরুর একদিন আগে চট্টগ্রাম নগরের সড়ক, বিভিন্ন বাজার, শপিংমল ও ব্যাংকে মানুষের ঢল নেমেছে। সবাই ছুটছেন যার যার প্রয়োজনে। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। কেনাকাটা থেকে শুরু করে সব কাজ সেরে নিতে যেন ব্যস্ততার অন্ত নেই।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সরেজমিন চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন সড়ক, বাজার, শপিংমল এবং ব্যাংকে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

নগরের বাকলিয়া থেকে রিয়াজউদ্দিন বাজারে রায় শপিং সেন্টারে এসেছেন প্রবাসীর স্ত্রী সাঈদা আক্তার। লকডাউন কবে শেষে কবে আবার মার্কেট খুলবে, তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানান তিনি। এজন্যই ঈদের বাজার করতে এসেছেন তিনি।

সাঈদা আক্তার বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য কাপড়, নিজের জন্য শাড়ি এবং কসমেটিক্স কিনতে মার্কেটে এসেছি। কাল থেকে তো লকডাউন। আবার কবে খুলবে তার তো ঠিক নেই।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘গত বছর লকডাউনের কারণে পুরো রমজান মাসে মার্কেট বন্ধ ছিল। সন্তানদের কিছু কিনে দিতে না পারায় ঈদের দিন খুব কান্নাকাটি করেছিল। এজন্য এবার আগেভাগেই কিনে দিলাম। বাচ্চাদের জন্য যেহেতু মার্কেটে আসলাম, নিজের জন্যও তাই কিনে নিলাম।’

নগরের কাপড়ের আরেক বৃহত্তম বাজার টেরিবাজার এলাকায় শপিং করতে আসা আলমগীর জানান, ‘নিজের জন্য কিনতে আসিনি। মেয়ের বিয়ে দিয়েছি কিছুদিন আঘে। বেয়াই বাড়িতে কাপড় পাঠাতে হবে। তারা তো আর লকডাউন বুঝবে না। ঈদের আগে আর মার্কেট খুলবে কি-না, সেজন্য ভিড় ঠেলে কষ্ট করে বাজার করেছি।’

শুধু সাঈদা আক্তার বা আলমগীর নয়, মার্কেটে আসা বিভিন্ন ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন কারণ বলছেন করোনা সংক্রমণের মধ্যে ভিড় ঠেলে ঈদের বাজার করার বিষয়ে।

এ তো গেলো শপিংমলের চিত্র। নিত্যপণ্যের বাজারে দেখা গেছে আরও ভিড়। মুদিদোকান, মাছ মাংসের দোকান কিংবা কাঁচা বাজারে ভিড় বেশি। বেশিরভাগ মানুষই কিনছেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত। সপ্তাহ কিংবা বেশ কিছুদিন বাসা থেকে বের না হতেই তাদের এই অগ্রিম প্রস্তুতি বলে জানা গেছে।

Advertisement

মুদির দোকানে এক সঙ্গে ১০০ ডিম কেনার সময় এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেসা করা হয়, আপনার পরিবারের সদস্য কতজন? প্রশ্নে বিব্রত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ও স্ত্রী-বাচ্চা। লকডাউন ঘোষণায় করোনার কারণে কিছুদিন বের হবো না। এজন্য কিছুদিন বের হবো না।’

এদিকে নগরের প্রধান তিন প্রবেশমুখ নতুন ব্রিজ, অক্সিজেন মোড় এবং এ কে খান গেইট এলাকায় ঘরমুখী মানুষের চাপে যানজট হয়েছে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে। নতুন ব্রিজ এলাকায় কয়েক হাজার মানুষকে বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকা মুসলিম উদ্দিন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘লকডাউনে আমাদের অফিস বন্ধ। এখানে থেকে কি করব? এমনিতে ছুটি পাই না। তাই লকডাউনের উছিলায় হলেও এবার পরিবারকে কিছুটা সময় দিতে পারব।’

তবে দেশের বিভিন্নস্থানে থাকা লোকজনের হঠাৎ করে এভাবে গ্রামে ফেরার খবরে আতঙ্ক কাজ করছে গ্রামের লোকজনের মধ্যে। তাদের দাবি, গ্রামে এখনও করোনা আসেনি। শহুরে লোকজন করোনা নিয়ে গ্রামে যাবে।

শাহজাহান নামে সাতকানিয়ার এক বাসিন্দা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে গতবারের করোনায় আমার গ্রামে কেউ মারা যায়নি। কাউকে আক্রান্ত হতেও দেখা যায়নি। উপজেলা সদরের এদিকে কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছে শুনেছিলাম। তবে এবার যদি শহর থেকে কেউ করোনা নিয়ে আসে তবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

এছাড়া ব্যাংক বন্ধের ঘোষণায় (বিশেষ প্রয়োজনে ৯টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত খোলা) নগরের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সবাই লকডাউনে কত দিনে খুলতে পারে এই আশঙ্কায় আগেভাগে বেশি করে লেনদেন করে রাখছেন।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী উমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসব সমস্যার প্রেক্ষিতে আমাদের অভিযান চলছে। আজকেও বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। তবে আমরা যেটা দেখছি, লোকজনের মধ্যে অসচেতনতার চেয়ে বেশি অবহেলা কাজ করছে। যার জন্য অভিযান কিংবা জরিমানার পরও কাজ কম হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কথাটা একেবারে অমূলক নয়। গ্রামে মানুষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে তাই সেখানে করোনা একটু কম ছড়ায়। শহরে বাসা-বাড়ি, রাস্তাঘাট সর্বত্র জ্যাম থাকায় করোনা বেশি ছড়ায়। করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যান দেখলেও শহর এবং গ্রামে আক্রান্তের হারে অনেক ব্যবধান দেখা যায়। শহর থেকে কেউ যদি সুপ্ত অবস্থায় করোনার জীবাণু নিয়ে গ্রামে যায় তবে গ্রামেও করোনা ছড়াতে পারে।’

মিজানুর রহমান/এএএইচ/এমএস