মতামত

সীমান্তে হত্যা চলবেই?

সাতক্ষীরা সীমান্তের বিপরীতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তলুইগাছা সীমান্তের বিপরীতে ভারতের স্বরূপনগর থানার নিত্যানন্দকাঠি এলাকায় ওই হত্যার ঘটনা ঘটে। এতে সদর উপজেলার পাঁচরকি গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম (৪৫) ও কলারোয়া উপজেলার কাকডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল খালেক সরদার (৪০) নিহত হন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পতাকা বৈঠকের জন্য ভারতের আমুদিয়া বিএসএফ ক্যাম্পে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। আমরা এই হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। ভারত বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশি দেশ। ভারতের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত। দুই দেশের সম্পর্কও ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত প্রীতিময়। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক সীমান্ত হত্যা ঘটেই চলেছে। এ নিয়ে নানা সময় দুই দেশের পক্ষ থেকেই ঐকমত্যে পৌঁছা গেলেও সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা যে সম্ভব হয়নি তার প্রমাণ আবারো দুই বাংলাদেশিকে হত্যা। বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশের কিশোরী ফেলানি হত্যার দুঃখজনক ঘটনায় সীমান্ত হত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবেও আলোচনায় আসে। এ ঘটনায় মামলা হলেও বিএসএফের অভিযুক্ত ওই সদস্যকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে সীমান্তে বিএসএফের আচরণের মানসিক দিকটিও উঠে আসে। কিন্তু সীমান্তে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চলতে পারে না। এছাড়া গত ১৬ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের মধ্যে ১৭তম স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্তহত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে উভয় দেশই  সম্মত হয়।  বৈঠকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মেহরিশি, বিএসএফের মহাপরিচালক ডি কে পাঠকও উপস্থিত ছিলেন। এ ধরনের সিদ্ধান্তের পরও সীমান্ত হত্যার ঘটনা কেন ঘটলো সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। ভারতের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান বাংলাদেশের মানুষ কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করে। সেই সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে দীর্ঘ কয়েক দশক ঝুলে থাকা সীমান্ত সমস্যারও সমাধান হয়েছে। এরই মধ্যে হয়েছে ছিটমহল বিনিময়ও। ছিটমহলবাসীর কয়েক দশকের দুঃখ দুর্দশার চির অবসান হয়েছে। তারা এখন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে নিজ নিজ দেশেই গৌরবের সাথে বসবাস করছেন। এসব বিষয় দু’টি দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককেই নির্দেশ করে। কিন্তু সীমান্ত হত্যা চলতে থাকলে সব অর্জনই আসলে ম্লান হয়ে যাবে। এ বিষয়টি ভারতকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে। নরেদ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার কানেকটিভিটির ওপর জোর দিচ্ছেন। সীমান্ত হত্যা চলতে থাকলে সেটি কী করে সম্ভব? এছাড়া সীমান্তের আচরণের মধ্য দিয়েই সম্পর্কের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায়। আমরা আশা করবো নিহত দুই বাংলাদেশির হত্যার বিষয়ে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে। এ বিষয়ে অবশ্যই কার্যকর একটি পথ বের করতে হবে। এ জন্য বৃহৎ প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারতকেই এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।এইচআর/পিআর

Advertisement