ধর্ম

যেভাবে ধাপে ধাপে ফরজ হয়েছিল রোজা

কুরআন নাজিলের মাস রমজান। নাজিল হওয়া এ কুরআন; মানুষের জন্য হেদায়েত বা পথনির্দেশক। মুসলিম উম্মাহর জন্য নির্দেশনা হলো- যারা এ মাসটি পাবে তাদের জন্য রোজা পালন করতে হবে। কিন্তু ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই কি মাসব্যাপী এ রোজা রাখা ফরজ ছিল?

Advertisement

রমজানের রোজার পালনের নির্দেশহিজরতের পর মদিনায় দ্বিতীয় হিজরির ১০ শাবান মুমিন মুসলমানের ওপর রমজানের রোজা ফরজ হয়েছিল। কিন্তু এ রোজা ফরজ হওয়ার আগেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর রোজা ফরজ ছিল। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে রোজাগুলোও ধাপে ধাপে পালন করেছিলেন। আর তা সাহাবায়ে কেরামগণও পালন করতেন। রোজা পালনের ধাপগুলো হলো-

> প্রথম ধাপরমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোজা পালন করতেন। আর তা দেখে সাহাবায়ে কেরামগণও রোজা পালন করতেন। যাতে রোজা পালনের অভ্যাস তৈরি হয়।

কেউ কেউ বলেছেন, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি মাসে যে ৩দিন রোজা রাখতেন, তা ছিল আইয়্যামে বিজের রোজা তথা আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা। আর তা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ফরজ ছিল।

Advertisement

> দ্বিতীয় ধাপ কুরাইশরা জাহেলি যুগে আশুরার রোজা রাখতো। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় এসে হযরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণে তার স্মৃতি পালনে আশুরার দিন গুরুত্বের সঙ্গে নিজে যেমন সিয়াম বা রোজা রাখতেন এবং তার সঙ্গীদেরও এ রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। তখন এ রোজা ফরজ ছিল।

> তৃতীয় ধাপঅতঃপর সিয়াম বা রোজার বিধান নিয়ে কুরআনুল কারিমের আয়াত নাজিল হলো। কিন্তু শুরুতে তখনো রোজা পূর্ণ আকারে ফরজ ছিল না। যার ইচ্ছা সে রোজা রাখতো এবং যার ইচ্ছা সে না রেখে মিসকিনকে খাদ্য দান করতো। কিন্তু রোজা রাখাটা আল্লাহর দরবারে পছন্দনীয় ছিল। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন-‘যারা রোজা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রাখতে চায় না, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। যে ব্যক্তি খুশির সঙ্গে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি তোমরা রোজা রাখো, তাহলে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর; যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৪)

> চতুর্থ ধাপ :দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে আয়াত নাজিল করে পুরো রমজান মাস রোজা পানের নির্দেশ দেন। ফলে প্রত্যেক সামর্থবান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের হস্য পুরো রমজান মাসের রোজা রাখা ফরজ হয়ে যায়। এ ধাপেই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। যা ছিল আগের সব-নবি রাসুলদের ধারাবাহিক রোজা পালনেরই অংশ। আল্লাহ তাআলা বলেন-شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُরমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

সুতরাং সামর্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক (জ্ঞানসম্পন্ন সাবালক) স্থায়ীদের জন্য মিসকিনকে খাদ্যদানের বিধান রহিত হয়ে যায় এবং বৃদ্ধ ও রোগীদের জন্য তা বহাল রাখা হয়। কিছু কিছু আলেমগণের মতে এ বিধান গর্ভবর্তী ও দুগ্ধদাত্রী নারীদের জন্যও বহাল করার কথা বলা হয়। যারা গর্ভকালে বা দুগ্ধদান কারে রোজা রাখলে তাদের সন্তানের বিশেষ ক্ষতি হবে আশঙ্কা থাকে।

Advertisement

সুতরাং রোজা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য আবশ্যকীয় বিধান। তারপর থেকেই মুমিন মুসলমান মাসব্যাপী পালন করে আসছেন রমজানের রোজা।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মাসব্যাপী রমজানের রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর নির্দেশিত ফরজ বিধান যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস