‘মা, বইসা থাইক্যা লাভ নাই, চলো যাই, কাল আমুনে’। সোমবার (১২ এপ্রিল) ভরদুপুরে রাজধানীর শাহবাগে বেতার ভবনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) করোনা ইউনিট ও ফিভার ক্লিনিকের প্রবেশপথের পাশে মাটিতে খালি পায়ে বসে থাকা কালো বোরকাপরিহিত এক মধ্যবয়সী নারীকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলছিলেন ১৭-১৮ বছরের এক যুবক।
Advertisement
যুবকের কথা শুনেও ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত ওই নারীকে বিড় বিড় কিছু বলতে শোনা যায়। নিরাপত্তারক্ষীর দিকে এগিয়ে গিয়ে যুবক বলতে থাকেন, ‘চাঁদপুর মতলব থেকে সকালে মাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছি। ঢাকা শহরে থাকার জায়গা নাই। দয়া করে যদি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতেন।’ যুবককে ধমক দিয়ে নিরাপত্তারক্ষী বলে ওঠেন, ‘তোরে আগেও কইছি, কাল সকাল সকাল ওয়েবসাইটে চেষ্টা কইরা ম্যাসেজ লইয়া আইবি, আমার পক্ষে সম্ভব না।’
এবার ওই নারী উঠে হাঁটতে থাকেন। শামসুন্নাহার নামের এই মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ ভোরেই ছেলে পারভেজকে সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন। আউটডোরে চিকিৎসক দেখানোর পর বেতার ভবন থেকে করোনা পরীক্ষা করিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়। কিন্তু অনলাইনে নিবন্ধন না করে আসায় তার পরীক্ষা হয়নি। এখন নারায়ণগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে থাকবেন। কাল কারও মাধ্যমে নিবন্ধনের জন্য চেষ্টা করবেন বলে জানান।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সারাদেশে ১২১টি আরটি-পিসিআর, ৩৪টি জিন এক্সপার্ট এবং ১০০টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টসহ সর্বমোট ২৫৫টি ল্যাবরেটরি চালু রয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম খরচে ১০০ টাকায় সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে পরীক্ষা করতে যারা আসেন তাদের মধ্যে দরিদ্রদের সংখ্যা বেশি। বিএসএমএমইউতে অনলাইনে আগে থেকে নাম নিবন্ধন করতে হয় বলে হতদরিদ্রদের অধিকাংশ এখানে করোনার নমুনা পরীক্ষার সুযোগই পান না।
Advertisement
রোগীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বর্তমানে হাসপাতালে যেকোনো রোগী ভর্তির আগে অঘোষিতভাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে বলেন চিকিৎসকরা। প্রতিদিনই বিএসএমএমইউ আউটডোর থেকে অসংখ্য রোগী নমুনা পরীক্ষা করাতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ নানাভাবে ম্যানেজ করে নমুনা পরীক্ষা করাতে পারলেও দরিদ্র ও বৃদ্ধরা বিপাকে পড়েন।
সম্প্রতি বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, হতদরিদ্র, প্রবীণ ও গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মধ্যে যাদের অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন নেই, যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না তাদের জন্য স্পট নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে ফিভার ক্লিনিকে যোগাযোগ করা হলে তারা ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। ডা. শাহিনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কনফারেন্স সেন্টারে টিকাদান নিয়ে ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন বলে জানান।
এদিকে এদিন দুপুরে করোনা ডেডিকেটেড ঢামেক হাসপাতাল-২ ঘুরে দেখা গেছে, একজন ভর্তি রোগী দুই সপ্তাহ আগে করোনার নমুনা দিলেও রিপোর্ট পাচ্ছেন না। রোগী এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দোতলায় প্যাথলজি সেন্টারে কয়েকদফা যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, রিপোর্টটি তারা খুঁজে পাচ্ছেন না।
Advertisement
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদরোগসহ অন্যান্য ব্যাধি আগে থেকেই আছে তাদের ভোগান্তি বেশি হচ্ছে। ঢামেক-২ তে করোনার জন্য ভর্তি কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগীদের ঢামেক পুরোনো ভবনে নিয়ে ডায়ালাইসিস দিয়ে আনতে হচ্ছে। তাদের শ্বাসকষ্ট যেন না হয় সে জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার সহকারে টেনে নিয়ে যেতে হয়। এমন দৃশ্যে প্রতিদিনই দেখা যায়।
এমইউ/বিএ/এএসএম