টানা দুই কার্যদিবস বড় দরপতনের পর সোমবার দেশের শেয়ারবাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের উত্থানের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
Advertisement
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৬৬টি কোম্পানির শেয়ার দামের সর্বনিম্ন সীমা বা ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে বৃহস্পতিবার ও রোববার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। দুই কর্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১৭৩ পয়েন্ট পড়ে যায়।
অবশ্য বড় এই দরপতনকে যুক্তিসংগত নয় বলে জানিয়েছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেকরা। এ বিষয়ে গতকাল রোববার শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নতুন করে লকডাউন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখে দিয়েছে। এর সঙ্গে ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সব মিলে বিনিয়োগকারীদের পেনিক সেলের কারণে শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা দেয়া এই আতঙ্ক যুক্তি সংগত না। কারণ বিএসইসি থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে লকডাউনে ব্যাংক খোলা থাকলে শেয়ারবাজারে লেনদেন চলবে। আর ব্যাংক বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া নিয়েও পেনিক হওয়ার কিছু নেই। যারা বেশি দামে শেয়ার কিনেছেন, তাদের কম দামে বিক্রির চাপ বাড়ানো উচিত না।’
Advertisement
শেয়ারবাজারে টানা বড় দরপতনের মধ্যেই গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকের লেনদেনের সময় আধঘণ্টা বাড়ানো হয়। ব্যাংক লেনদেনের নতুন সময় সীমা আজ থেকে কার্যকর হয়েছে। ব্যাংকের লেনদেনের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসার পর শেয়ারবাজারেও লেনদেনের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় বিএসইসি।
সোমবার নতুন সূচিতে লেনদেন শুরু হতেই প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ে যায়। এতে প্রথম ১০ মিনিটের লেনদেনেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদনের শেষ পর্যন্ত সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৮৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৬০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৮২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বাজারটিতে দিনভর লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১১টির। আর ৭৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
Advertisement
মূল্য সূচকের উত্থানের সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৫৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনেদেন বেড়েছে ৩৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রবির ২১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২০ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জিবিবি পাওয়ার, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসেফিক ইন্স্যুরেন্স, বেক্সিমকো ফার্মা, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, বিডি ফাইন্যান্স এবং কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২০০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৩টির এবং ৩৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এমএএস/এমএইচআর/জেআইএম