রাজশাহী নগরীর হেঁতেম খান বনপুকুর এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে ময়েন উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয় শাহানার (৩০)। ভালোই যাচ্ছিল সংসার। কিন্তু বিয়ের বছর দুয়েক পর স্বামীর হৃদয়ে ছিদ্র ধরা পড়ে। চিকিৎসা নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি শাহানার স্বামী ময়েনের। ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন তিনি।
Advertisement
শাহানার স্বামী ময়েন উদ্দিনই ছিলেন ওই পরিবারের একমাত্র পুরুষ। শ্বশুর-শাশুড়ি গত হয়েছেন অনেক আগেই। ময়েনের এক বড়ভাই ছিলেন। তিনিও মারা গেছেন শাহানার বিয়ের এক বছর পরই।
এছাড়া ময়েনের পরিবারে ছিল তিনটি বোন। তারা হলেন- নাজরিন আক্তার (৪৫), নাসরিন আক্তার (৪০) ও বিলকিস আক্তার (৩৫)। তিন বোনই বিয়ের পরপরই বিধবা হন। ময়েনের বড় বোনের এক মেয়ে অহনা (১৮)। অন্য দুই বোনের কোনো সন্তান নেই। সবমিলিয়ে হেঁতেম খা বনপুকুর এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের বংশ পুরুষশূন্য।
এদিকে স্বামী (ময়েন) গত হওয়ার পর থেকেই শাহানার ওপর নেমে আসে তিন ননদের সীমাহীন অত্যাচার ও নির্যাতন। ননদদের অত্যাচার নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ সম্বল দু’বছরের মেয়ে সানজিদা রহমান সুরভিকে নিয়ে ঠাঁই নেন বাবার বাসায়।
Advertisement
শাহানা জানান, স্বামী বেঁচে থাকাকালীন কোনো প্রকার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। তবে বিয়ের প্রায় দুই বছর পর আমার স্বামীর হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। হার্টের বক্লের কারণে তিনি ২০১৯ সালে মারা যান।
শ্বশুরবাড়িতে আগে থেকেই মেজ ননদ নাসরিন ও বিলকিস থাকতেন। তাদের সবার বিয়ে হয়েছিল, তারা নিঃসন্তান। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তারা আমার শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন। বড় ননদ নাজরিন কখনও তার শ্বশুরবাড়িতে আবার কখনও হেঁতেম খা বনপুকুরে নিজের বাসায় তার মেয়ে নিয়ে থাকেন। তবে অধিকাংশ সময়ই নাজরিনের মেয়ে অহনা (১৮) আমার শ্বশুরবাড়িতে থাকে।
এসব কোনো বিষয়েই আমার আপত্তি নেই। তারপরও তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অযুহাতে আমাকে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালান।
ননদের বিষয়ে অভিযোগে শাহানা বলেন, ‘আমার ঘরের সকল ফার্নিচার কেড়ে নিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় তারা। মূলত স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই আমার ননদরা আমাকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি আইনের আশ্রয় গ্রহণ করি এবং কোর্টে নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করি। কিন্তু তার বিচারকার্য শেষ না হতেই, বিদ্যুত বিলের অযুহাতে আবারও আমার তিন ননদ ও বড় ননদের মেয়ে মিলে গত ২৯ মার্চ আমাকে মারধর করে।’
Advertisement
দুই ননদ নাসরিন ও বিলকিস
সর্বশেষ মারার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমার স্বামীর একটি ফার্নিচারের দোকান আছে, যেটি তারা জোরপূর্বক কেড়ে নিতে চাচ্ছে। আমার মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমি তাদের সেটি দিতে রাজি হয়নি। এক পর্যায়ে তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর আব্দুল মোমেনের কাছে অভিযোগ দিই। এ বিষয়ে তিনি একটি মিমাংসা করে দেন।
জনপ্রতিধির আব্দুল মোমেন একটি আপোষনামাও করে দেন এবং তাতে সবার সম্মতি নিয়ে স্বাক্ষর নেন। সেই আপোষনামাতে বলা হয়- ‘যেহেতু ময়েনের স্ত্রী শাহানা তার স্বামীর ব্যবসা পরিচালনা করতে আগ্রহী তাই তাকে ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হলো এবং বিনিময়ে প্রতিমাসে ব্যবসার লভ্যাংশ বাবদ ১০,০০০ টাকা তার ননদদেরকে দিতে হবে।’
শাহানার দাবি, আমি সেই অর্থও সঠিকভাবে ও সময়মতো পরিশোধ করি। কিন্তু সর্বশেষ ২৯ মার্চ তারা নতুনভাবে বিদ্যুৎ বিল না দেয়াকে কেন্দ্র করে আমার উপর অন্যায়ভাবে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং যাতে আর ফিরে না আসি সেজন্য বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন তারা।
তিনি জানান, এনিয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনো ফল পাচ্ছি না। বিচারহীনতায় আমি ও আমার পিতৃহারা একমাত্র মেয়ে সুরভি। শুধুমাত্র মাত্র আমার মেয়ে সুরভির ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বাবার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি।
জানতে চাইলে নাসরিন (মেজো ননদ) ও বিলকিস (ছোট ননদ) অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো শাহানার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ করেন।
তাদের ভাষ্য, ‘শাহানার কারণেই আমাদের ছোট ভাই দুশ্চিতায় মারা গেছেন। ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে শাহানাই বাসায় অশান্তি সৃষ্টি করেছে। তার কাছ থেকে কোনো কিছুই কেড়ে নেওয়া হয়নি। বাসায় যেসব রয়েছে তা সবই বাবা ও ভাইদের সম্পদ। শাহানাই উল্টো আমাদের সকলকে মারধরপূর্বক মামলা করেছে।’
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফয়সাল আহমেদ/এফএ/জেআইএম