একুশে বইমেলা

নিষ্প্রাণ বইমেলা, বিক্রেতাদের মাথায় হাত

শেষ দিকেও ক্রেতাশূন্য অমর একুশে বইমেলা। একদিকে করোনা অন্যদিকে লকডাউনের কারণে মানুষ প্রায় ঘরবন্দি। এ কারণে বইপ্রেমীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেলায় আসছেন না বলে বিক্রেতাদের মাথায় হাত। এমন প্রাণহীন বইমেলা আগে কখনো দেখেননি বলেও মন্তব্য করেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই।

Advertisement

শনিবার (১০ এপ্রিল) বইমেলায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে প্রস্তুতি শেষ করে দোকানিরা দুপুর ১২টায় দোকান খুলে বসে থাকলেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। যারা আসছেন তাদের অনেকে ঘোরাফেরা আর ছবি তোলায় ব্যস্ত। খুব কম সংখ্যক মানুষকে বইয়ের দোকানে দেখা গেছে। যে কারণে দোকানিরা বসে অলস সময় পার করছেন।

বইমেলায় পাঞ্জেরী প্রকাশনীর বিক্রেতা গালিব জাগো নিউজকে বলেন, শনিবার বন্ধের দিন হলেও দোকানে ক্রেতা নেই, বড় ধরনের ছাড় দিলেও বই বিক্রি হচ্ছে না। মেলার শেষ সময়ও তারা ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন।

পাশেই অনুপম প্রকাশনীর বিক্রেতা মো. কাহীন বলেন, বন্ধের দিন বিক্রি বেশি হবে এ আশায় আজ আগেই দোকান সাজিয়ে তোলা হলেও মানুষ আসছে না। দুপুর ২টা পর্যন্ত একটি বইও বিক্রি হয়নি।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, মেলার শুরুতে অধ্যাপক জাফর ইকবাল স্যারের শিশু-কিশোর উপন্যাস বিক্রি বেশি হয়েছে। লকডাউনের কারণে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলার সময় নির্ধারণ করায় রোদের কারণে মানুষ আসছে না। বিকেলে মানুষের ভিড় তৈরি হলেও সেসময় দোকান বন্ধ করতে হচ্ছে। গত শনিবারের চাইতে আজ মেলা ক্রেতাশূন্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শিশু-কিশোরদের জন্য প্রকাশিত চিলড্রেনস পাবলিকেশনের মালিক নূরুল আমীন ভূঁইয়া পিন্টু বলেন, করোনা আর লকডাউনে তাদের বই বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। বিক্রি না হওয়ায় মেলার দোকানে বিক্রেতা কমানো হয়েছে। দোকান ভাড়া পরিশোধ করতে পারছেন না। রাস্তার পাশের দোকানে কিছু বিক্রি হলেও ভেতরের দিকে কেউ যাচ্ছেন না। শিশুদের জন্য মজার ছড়া, গল্প, কবিতা, ভুতের বই, শিক্ষামূলক নানা ধরনের বই তুললেও তা কেনার কেউ নেই বলে জানান তিনি।

প্রগতি পাবলিকেশনের মালিক আসরাফ মাসুদ জানান, তিনি গত ২০ বছর ধরে মেলায় স্টল দিয়ে আসছেন। এবার তার নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি হয়েছে। এমন ক্রেতাশূন্য মেলা তিনি আগে কখনো দেখেননি।

তিনি আরও বলেন, প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করে ছোটদের জন্য ডিজিটাল বেশকিছু বই এনেছেন। তার মধ্যে ডাইফোর্ড, পপ আপ, ফ্লিপ বুক রয়েছে। শুরুতে ভালো বিক্রি হলেও ৫টার পর মেলা বন্ধ থাকায় কড়া রোদের কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে মেলায় আসছেন না।

Advertisement

বাবাকে নিয়ে পাঁচ বছরের শিশু উর্ষা এসেছে মেলায় ঘুরতে। একটি আধুনিক আদর্শলিপি বই কিনে বাবার সঙ্গে ঘুরছিল সে। এই শিশুর বাবা টুটুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, অনেক রোদ আর করোনার ভয় উপেক্ষা করে সন্তানকে নিয়ে মেলায় এসেছেন। বাচ্চার জন্য কয়েকটি বই কিনে বাড়ি চলে যাবেন বলে জানান তিনি।

শিশুদের জন্য পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে কিছুটা মিল রেখে ভিন্নধর্মী বেশকিছু বই নিয়ে এসেছে লাইন অব হোপ প্রকাশনা। এর স্বত্বাধিকারী ধ্রুব বলেন, বাজারে ক্রেতা নেই, যারা আসছেন তারা শিশুদের জন্য ডিজিটাল বই খুঁজছেন। তারা ভিন্নধর্মী বেশকিছু বই আনলেও তা বিক্রি হচ্ছে না।

এদিকে ইডেন কলেজছাত্রী সুমাইয়া তার ছোট দুই বোনকে নিয়ে মেলায় বেড়াতে এসেছেন। ১১ বছরের ছোট বোন ভুতের গল্পের বই কিনেছেন। মেজ বোন শান্তা ইসলাম এসএসসি পরীক্ষার্থী সেও ভুতের গল্পের বই খুঁজতে বিভিন্ন দোকান ঘুরে বেড়াচ্ছে।

তারা জানান, এবার বইমেলায় এসে আগের মতো মজা পাচ্ছেন না। এবার জন্যশূন্য হওয়ায় এটিকে বইমেলা মনে হচ্ছে না।

এমএইচএম/এমআরআর/এএসএম