কৃষি ও প্রকৃতি

পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটায় খোরশেদের ছাদবাগান

দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন মো. খোরশেদ আলম। বর্তমানে ঠিকাদারী পেশায় নিয়োজিত আছেন। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং এলাকায় পরিবার নিয়ে তার স্থায়ী বসবাস। কৃষক পরিবারের সন্তান হওয়ায় কৃষির সাথে ছোটবেলা থেকেই ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তার।

Advertisement

কৃষিকে ভালোবেসেই ১০ বছর আগে নিজ বাড়ির ছাদে (৬তলা) গড়ে তোলেন শখের বাগান। ১৬০০ বর্গফুটের ছাদে বাগান করে খোরশেদ পরিবারের পুষ্টির চাহিদাও মেটাচ্ছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার এই ছাদবাগানে প্রায় ১’শর অধিক ফুল-ফল, শাক-সবজি ও ঔষধি গাছ রয়েছে। তার ছাদ বাগানে রয়েছে ৯ জাতের পেয়ারা, ২ জাতের জামরুল, ৮ জাতের লেবু, ৪ জাতের বরই। ফল গাছের মধ্যে আরও রয়েছে লিচু, ড্রাগন ফল, আনারস, কতবেল, লটকন, জলপাই, আমড়া, কলা, নারিকেল, কমলা, সফেদা, খেজুর, জাম্বুরা ও করমচা।

এ ছাড়া ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ, জবা, নাইটকুইন, থাইপাতা। শাক-সবজির মধ্যে কাঁচা মরিচ, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, করলা, মিষ্টি আলু, ধনেপাতা ও পুদিনাপাতা। ঔষধি গাছের মধ্যে রয়েছে নিমগাছ, তুলসী গাছ, ঘৃতকুমারী। এছাড়াও রয়েছে মেহেদী ও পাথরকুঁচি গাছ ।

Advertisement

নিজের ছাদ কৃষি সম্পর্কে মো. খোরশেদ আলম জানান, অবসর সময় তিনি ছাদ বাগানেই ব্যয় করেন। এই কাজে তার স্ত্রী এবং ছেলে সব সময় উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি তাকে অনেক সহযোগিতা করে থাকেন। তিনি এই ছাদবাগানে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে সম্পূর্ণ কেঁচো সার ব্যবহার করেন।

এছাড়া তিনি তার বাড়ির ছাদে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি সব সময় তার বাড়ির ছাদ পরিষ্কার রাখেন বলেও জানান। গাছের প্রতি ভালোবাসা ও পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এই ছাদবাগান গড়ে তোলেন খোরশেদ আলম।

তিনি আরও জানান, শহরে যে কাউকেই ছাদবাগান করতে গেলে মাটি ও সার সংগ্রহ করার মতো বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়। তবে ইচ্ছে থাকলে যে কেউ ছাদে বাগান করতে পারেন। এতে সহজেই সবুজ প্রকৃতি, বিশুদ্ধ অক্সিজেন ও কীটনাশকমুক্ত টাটকা ফল ও সবজি পাওয়া যায়।

জানা যায়, তার এই ছাদবাগানের উদ্যোগ অন্যান্যদের ছাদবাগান করার ক্ষেত্রে আদর্শ ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে তিনি তার বাড়িতে আসা আগ্রহী আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের ছাদবাগান করতে উৎসাহিত করেন। তার ভাষ্যমতে, পরিবার এবং পরিবেশের জন্য এই ছাদকৃষি একান্ত প্রয়োজন।

Advertisement

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ছাদবাগানের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প থাকলেও আমাদের নারায়ণগঞ্জে এমন কোনো প্রকল্প এখনও নেয়া সম্ভব হয়নি। ঢাকার মতো আমরা আর্থিকভাবে সহায়তা না করতে পারলেও আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীকে ছাদবাগান করার জন্য উৎসাহ এবং গাছ লাগানো ও পরিচর্যার বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে ভবিষ্যতে যেন ঢাকার মতো আমাদের এখানেও এমন প্রকল্প নেয়া হয়, সেজন্য আমরা হেডঅফিসে চিঠি দিয়েছি। হেডঅফিস থেকে আশ্বাস দিয়েছে খুব শীঘ্রই আমাদের এখানেও এমন প্রকল্প চালু করবে।

ছাদবাগান নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের যোগান দেয় জানিয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, যানজট, শব্দ দূষণ ও বায়ু দূষণে যখন নাগরিকদের নাভিশ্বাস তখন নিশ্বাস নেয়ার একটি স্থান হতে পারে ছাদবাগান। এটির বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো ছাদ বাগান কোন এলাকার তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

তিনি বলেন,স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় আমরা লক্ষ্য করেছি যেসব এলাকায় ছাদবাগান আছে সেখানাকার তাপমাত্রার তুলনায় যেখানে ছাদবাগান নেই তার চেয়ে তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি কম।

কোনো বাড়িতে ছাদবাগান থাকলে সে বাড়ির সবচেয়ে ওপরের ফ্লোরে যারা থাকেন তারা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে। ছাদবাগান পানিচক্র নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করা ছাড়াও জীববৈচিত্র্যের উন্নয়ন, শব্দ ও বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে। ছাদ বাগান মানসিক প্রশান্তি নিয়ে আসার পাশাপাশি পারিবারি বন্ধন সুদৃঢ় করে বলেও জানান তিনি।

এস কে শাওন/এমএমএফ/এএসএম