রাজধানীতে মুমূর্ষু করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) একটি শয্যা পাওয়া ক্রমেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। সম্প্রতি মহামারি এ ভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউর চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
Advertisement
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা মুমূর্ষু করোনা রোগীতে পরিপূর্ণ। শয্যা ফাঁকা না থাকায় বহু মুমূর্ষু রোগীকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মন্ত্রী, সচিব, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী ও চিকিৎসক নেতা কারো সুপারিশেই এখন আর আইসিইউ শয্যা পাওয়া যাচ্ছে না।
আইসিইউ চিকিৎসকরা বলছেন, শয্যা খালি না থাকলে যত বড় সুপারিশ কিংবা যত মুমূর্ষু রোগীই হোক না কেন তারা নিরুপায়। তারা বলেন, আইসিইউতে কোনো রোগীর মৃত্যু কিংবা তিনি সুস্থ হয়ে না উঠলে শয্যা খালি হয় না।
বাংলা চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনয়শিল্পী, চিত্রনায়িকা ও সাবেক সংসদ সদস্য কবরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে রাজধানীর মহাখালীর গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, করোনায় তার ফুসফুসের ৬২ শতাংশ সংক্রমিত হয়েছে। আইসিইউতে ৬০ লিটার হাইফ্লো নাজেল ক্যানোলায় অক্সিজেন চলছে তার। তিনি রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
Advertisement
কবরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা জরুরি হয়ে পড়ে। কুর্মিটোলায় আইসিইউ শয্যা ফাঁকা না থাকায় হন্যে হয়ে আইসিইউ বেড খুঁজে বেড়ান তার স্বজনরা।
গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপারিশে স্বনামধন্য এই অভিনেত্রীর জন্য একটি আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা হয়। তিনি আরও বলেন, আইসিইউর একটি শয্যার জন্য প্রধানমন্ত্রীর যেখানে সুপারিশ লাগে সেখানে এর ভয়াবহতা কেমন তা সহজেই বোঝা যায়। তিনি করোনাকে সাধারণ রোগ না ভেবে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের (৯ এপ্রিল) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষিত ১০টি সরকারি হাসপাতালের নয়টিতে সর্বমোট আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৩২টি। এর মধ্যে ১২৯টিতেই রোগী ভর্তি রয়েছে। মাত্র একটি হাসপাতালে চারটি বেড ফাঁকা রয়েছে। অঙ্কের হিসেবে চারটি শয্যা ফাঁকা থাকার কথা থাকলেও একটি হাসপাতালের আইসিইউ বেডের সংখ্যার চেয়ে একজন রোগী বেশী ভর্তি রয়েছে।
শুধু সরকারিতে নয়; বেসরকারি নয়টি হাসপাতালের সাতটিতেই একটিও শয্যা ফাঁকা নেই। করোনা ডেডিকেটেড নয়টি বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৭৩টি। বর্তমানে মাত্র দুটি হাসপাতালের ১৪টি শয্যা ফাঁকা রয়েছে।
Advertisement
রাজধানীর ১০টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মধ্যে- উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ১৬টি আইসিইউ শয্যার ১৬টিতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ২০টি শয্যার ২০টিতে, ৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা হাসপাতালের ১০টি শয্যার ১০টিতে, ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৬টির মধ্যে ১৬টিতে, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ছয়টির ছয়টিতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০টি শয্যার ২১টিতে, ৫০০ শয্যার মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ১৯টি শয্যার ১৯টিতেই, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ১০টির মধ্যে ছয়টিতে এবং রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫টির মধ্যে ১৫টিতে রোগী ভর্তি রয়েছেন। শুধুমাত্র সোহরাওয়ার্দীতে চারটি শয্যা ফাঁকা রয়েছে। আজ (৯ এপ্রিল) সরকারি হাসপাতালের ২ হাজার ৭৫১টি সাধারণ শয্যায় এই মুহূর্তে রোগী ভর্তি আছে ২ হাজার ৪৭৬ জন।
অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালের ১৭৩টি আইসিইউ শয্যায় রোগী ভর্তি ১৫৯টিতে। আইসিইউ শয্যা ফাঁকা মাত্র ১৪টি। নয়টি হাসপাতালের মধ্যে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ২২টি আইসিইউ বেডের সবগুলোতে, আসগর আলী হাসপাতালে ১৮টির সবগুলোতে, স্কয়ার হাসপাতালের ১৯টির মধ্যে ১৫টিতে, ইবনে সিনা হাসপাতালের সাতটির সবগুলোতে, ইউনাইটেড হাসপাতালের ১৫টির সবগুলোতে, এভার কেয়ার হাসপাতালের ২১টির মধ্যে ১১টিতে, ইমপালস হাসপাতালের ৫২টির সবগুলোতে, এ এম জেড হাসপাতালের ১০টির ১০টিতে এবং বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের নয়টির সবগুলোতেই রোগী ভর্তি রয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ ৮৭১টি শয্যার মধ্যে আজ (৯ এপ্রিল) রোগী ভর্তি আছেন ৭১৬ জন।
এমইউ/এআরএ/জেআইএম