স্বাস্থ্য

চার ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সে অপেক্ষা করে বাসায় ফিরে গেলেন মাহবুব

‘এই রোগীর লোক কোথায়? রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। অক্সিজেন লেভেল ৪৭ -এ নেমে গেছে। এখনই অক্সিজেন না দিলে মারা যাবে।’

Advertisement

রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ এর জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই চিৎকার করে রোগীর স্বজনদের ডাকছিলেন কর্তব্যরত একজন আনসার সদস্য।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভেতরে এক মধ্যবয়সী নারী একজন বৃদ্ধকে ধরে বসে ছিলেন। লুঙ্গি ও সাদা গেঞ্জি পরিহিত ওই বৃদ্ধ ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছেন। ভারসাম্য রাখতে না পেরে বার বার ওই নারীর কাঁধে গা এলিয়ে দিচ্ছিলেন। এ সময় ওই নারীকে হতবিহবল দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকাতে দেখা যায়।

এর মাত্র কয়েকমিনিট আগেই নারায়ণগঞ্জ থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা এসে থামে। এক যুবককে দৌড়ে জরুরি বিভাগে যেতে দেখা যায়। একজন আনসার সদস্য অক্সিজেন লেভেল মাপার পর সাথে থাকা যুবককে দ্রুত অক্সিজেন মাস্ক কিনে আনতে বলেন। অক্সিজেন মাস্ক নিয়ে আসার পর তড়িঘড়ি করে বৃদ্ধকে জরুরি বিভাগের বাইরে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে মাস্ক পরাতে দেখা যায়।

Advertisement

কর্তব্যরত চিকিৎসক এ সময় বলছিলেন, ‘সিট খালি নাই, ভর্তি করতে পারব না। আপাতত অক্সিজেন দিয়ে দেখি কী হয়।’

সিএনজিচালিত অটোরিকশার অদূরেই অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর এক মধ্যবয়সী ব্যক্তিকে অক্সিজেন মাস্ক মুখে লাগিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি অ্যাম্বুলেন্সেই শুয়ে আছেন। স্বজনদের কয়েকজনকে এখানে সেখানে মোবাইল ফোনে রোগীকে ভর্তির ব্যাপারে কথা বলতে দেখা যায়।

জরুরি বিভাগের অদূরে হাসপাতালে প্রবেশদ্বারের ভেতর এক নারীকে হুইলচেয়ারে বসে অনবরত কাঁদতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ আগেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার স্বামী মারা গেছেন। ২০মার্চ এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

আজ শুক্রবার (৯ এপ্রিল) ছুটির দিনে দুপুর আনুমানিক সোয়া একটায় করোনা ডেডিকেটেড ঢামেক-২ হাসপাতালে সরেজমিন পরিদর্শনকালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের নানা ভোগান্তির এ দৃশ্য দেখা যায়।

Advertisement

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা পাওয়া ক্রমেই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। ঢামেক জরুরি বিভাগের সামনে চার ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সে অপেক্ষা করেও সিট না থাকায় ভর্তি হতে না পেরে বাসায় চলে যান মাহবুব আলম নামে একজন ব্যবসায়ী।

তার স্বজনরা জানান, করোনা আক্রান্ত হয়ে মাহবুব আলম বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে এনে অক্সিজেন নেয়ার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাচ্ছিলেন।

হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) রাতে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিমিটারে মেপে দেখেন অক্সিজেন লেবেল ৭৫ -এ নেমে গেছে। সকাল হতেই স্বজনরা তিন ভাগে ভাগ হয়ে মুগদা ও কুর্মিটোলা হাসপাতালে ছুটে যান। কিন্তু সেখান থেকে বলা হয় সিট খালি নেই।

এরপর ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এসে অ্যাম্বুলেন্সে শুইয়ে রেখে ভর্তির চেষ্টা করেন। মাহবুব আলমের ভাই জানান, নানানভাবে তদবির করেও রোগী ভর্তি করতে পারছেন না। চার ঘন্টা পর চিকিৎসকরা নাম ঠিকানা লিখে রেখে বলেছেন, ‘সিট খালি হলে মোবাইল ফোনে কল করে এনে ভর্তি করবেন।’

সরেজমিন পরিদর্শনকালে আরও দেখা গেছে, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে করোনা আক্রান্ত রোগী রেফার হয়ে এ হাসপাতালে এলেও ভর্তি হতে পারছেন না।

কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা জানান, গোটা হাসপাতাল করোনা রোগীতে ভরে গেছে। রেফার করা বা সরাসরি আসা কোনো রোগীই ভর্তি করতে পারছেন না। রোগীদের বাসায় রেখে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।

এমইউ/এমএইচআর/জেআইএম