টাঙ্গাইলের মির্জাপুর মহিলা কলেজের এইচএসসি ও ডিগ্রি প্রথমবর্ষের ২৯২ জন ছাত্রী থেকে উপবৃত্তির ফরম নিতে ২০০ টাকা করে যোগাযোগ ও অনলাইন ফি নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। বৃত্তি পাওয়ার তালিকায় স্থান পাওয়ার আগেই কলেজ কর্তৃপক্ষকে তাদের ওই টাকা দিতে হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে কলেজের শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
Advertisement
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর মহিলা কলেজে এইচএসসি প্রথমবর্ষে তিন বিভাগে ২৬০ জন ও দ্বিতীয় বর্ষেও ২৬০ জন এবং ডিগ্রিতে তিনবর্ষে ১২০জন ছাত্রী রয়েছে। এরমধ্যে ডিগ্রি প্রথম বর্ষে ৩২ জন ছাত্রী আছে।
উপবৃত্তি পেতে কলেজ থেকে একটি ফরম সংগ্রহ করে তা জমা দিতে হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ উপবৃত্তি পেতে ওই ফরম অনলাইনে আবেদন জানাবে। এজন্য কলেজে অধ্যয়নরত এইচএসসি প্রথম বর্ষের ২৬০ জন ও ডিগ্রি প্রথমবর্ষের ৩২ জন ছাত্রীকে ফরম দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘অধ্যক্ষ নিজের একক সিদ্ধান্তে এ টাকা নিয়েছেন। মহামারি এই করোনা মৌসুমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নেয়া অমানবিক কাজ। এছাড়া অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে তারা জানান।
Advertisement
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, কয়জন মেয়েকে উপবৃত্তি দেয়া হবে তার সঠিক তথ্য অধ্যক্ষ দিতে পারেননি। কিন্তু সব ছাত্রীর কাছ থেকেই ২০০ টাকা করে নিয়েছেন।
কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের আগে ফরম পূরণ করতে হবে বলে কলেজ থেকে জানানো হয়েছিল। প্রত্যেক ছাত্রীকে ২০০ টাকা করে কলেজে জমা দিয়ে ফরম নিতে হয়েছে। এজন্য তাদের কোনো রসিদ দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এইচএসসি প্রথমবর্ষের প্রায় ২৬০জন ও ডিগ্রি প্রথমবর্ষের ৩০ জন ছাত্রী উপবৃত্তির ফরম পূরণ করেছে। এরমধ্যে এইচএসসি প্রথমবর্ষের ছাত্রীদের কাছ থেকে যোগাযোগ ও অনলাইন খরচ বাবদ ২০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে।
সবাই উপবৃত্তি পাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘সব ছাত্রীর ফরম পূরণ করতে বলেছে তাই করেছি। কয়জন পাবে তার সঠিক তথ্য জানা নেই।’
Advertisement
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
তবে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর কলেজের মাঠে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুই স্কুলছাত্রী খেলছিল। অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ তাদের ডেকে কলেজের একটি কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। ঘটনা জানাজানির পর তাদের মায়েরা তৎকালীন মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ২৪ জুন অধ্যক্ষ হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তখনকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অধ্যক্ষ হারুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছিলেন।
এ নিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কম-এ ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ‘অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ’ ও ২০১৮ সালের ২ জুলাই ‘দুই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি, কলেজ অধ্যক্ষ বরখাস্ত’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। গতবছর ৩০ জুন অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ পুনরায় কলেজে যোগদান করেন।
এস এম এরশাদ/এসজে/এমএস