করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি মনে করেন, সরকারের এই স্ববিরোধী অবস্থান মহামারির প্রথম থেকেই, যেজন্য লকডাউন নিয়ে মানুষ সঠিক বার্তা পাচ্ছে না।
Advertisement
ড. হোসেন জিল্লুর পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) প্রধান নির্বাহী এবং বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের চেয়ারপারসন। সম্প্রতি ঘোষিত ‘লকডাউন’ এবং জনজীবন প্রসঙ্গ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে মিলিত হয়েছেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, মহামারি মূলত মানুষের হাতের বাইরের বিষয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এটি। কিন্তু পরিস্থিতি সামলে আনতে মানুষের হাতের নাগালেও কিছু বিষয় থাকে। আমরা হাতের মধ্যকার বিষয়গুলো সঠিকভাবে সামলে আনতে পারছি কি-না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার আগেই ফের ধাক্কা করোনার। বিশ্ব অর্থনীতির যে ধাক্কা তা আমাদের ওপরও তীব্রভাবে পড়েছে। কিন্তু গত এক বছরে আমাদের যে প্রস্তুতি নেয়ার সময় ছিল, সেখানে আমরা কী করতে পেরেছি?
এই বিশ্লেষক তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রথমত, অতিমারির সময়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কী করার কথা, আর কী করতে পারল সরকার? দ্বিতীয়ত, যোগাযোগ বা কী বার্তা দেয়া হচ্ছে মানুষকে? তৃতীয়ত, জীবিকার প্রশ্নে মানুষকে কতটুকু সহায়তা বা পথ দেখানো হচ্ছে?
Advertisement
‘বিশ্বে যারা সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করছেন, তারা এই তিন প্রশ্নেই সমাধান খুঁজেছেন। বার্তাগুলো আসছে সরকারের মাঝারি পর্যায়ের কর্তা থেকে। যেমন লকডাউন নিয়ে যে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তা সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নেয়ার কথা। কিন্তু তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সিদ্ধান্তগুলো স্ব-বিরোধী কি-না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।’করোনার বিস্তার রোধে ৫ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা ৭ এপ্রিল সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চালুর সুযোগ করে দেয়া হয়
তিনি বলেন, লকডাউনের মধ্যে বইমেলা কোন যুক্তিতে খোলা তার পরিষ্কার বার্তা নেই। আবার বইমেলা খোলা রেখে পরিবহন বন্ধ করলে মেলার কী হবে, তারও বার্তা নেই। খেলাধুলা চালু রাখা হলো। অথচ পরিবহন বন্ধ। এই প্রশ্নগুলোর তো উত্তর নেই। বার্তার নানা পথ থাকে। যে বার্তা দেয়া হচ্ছে, তা মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি করার জন্য উপযুক্ত কি-না, এ নিয়ে সঠিক আলোচনাও নেই। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত যাই হোক, ব্যক্তি-মানুষের সচেতনতা খুবই জরুরি বলে মনে করি।বইমেলা খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ আলোচনা হয়
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বার্তা দেয়ার সঙ্গে সময়কে যুক্ত করা হচ্ছে না। যেমন, (এই পরিস্থিতিতে) যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশিরা আসছেন। আবার বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে লোক নেয়া হচ্ছে না। এখানে কী ধারণা নেবে মানুষ? তার মানে, বার্তা দেয়ার ক্ষেত্রে চরম সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্তহীনতা সংক্রমণ থেকে কতটুকু রক্ষা করবে, তার নিশ্চয়তা মিলছে না। তবে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর ভরসা না মিললেও নিজেদেরকে সর্বাত্মকভাবে সতর্ক থাকতে হবে এবং নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে।
এএসএস/এইচএ/জেআইএম
Advertisement