পুরোনো পণ্য বিক্রয়ের জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ রিসাইকেল বিন। গ্রুপটি বর্তমানে অসংখ্য মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি করেছে বিনা দ্বিধায়। বলা হচ্ছে সঠিক মনিটরিং এ সাফল্যের পেছনে মূল কারণ। সম্প্রতি গ্রুপটির কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় অ্যাডমিন ফ্লোরিডা শারমিন সেতুর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—
Advertisement
জাগো নিউজ: প্রথমেই নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন—ফ্লোরিডা শারমিন সেতু: আমি কুষ্টিয়ার মেয়ে। বাবা-মায়ের চাকরির সুবাদে নারায়ণগঞ্জে বেড়ে ওঠা। ফার্মেসিতে বি ফার্ম এবং এম ফার্ম শেষ করেছি। প্রায় ৭ বছর ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের কোয়ালিটিতে কাজ করেছি। এরপর সংসার শুরু। একমাত্র ছেলের আগমনে ২০১৮ সালে চাকরি ছেড়ে নতুন জীবন শুরু করি উদ্যোক্তা হিসেবে। পথ চলা শুরু করি ‘ক্লোসেট ডি ফ্লোরিডা’ নামের এক স্বপ্ন উদ্যোগের।
জাগো নিউজ: রিসাইকেল বিন গ্রুপের আইডিয়া কিভাবে মাথায় এলো? ফ্লোরিডা শারমিন সেতু: ঘটনাটি বেশ মজার। সেলিব্রেটিদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে এক্সপেন্সিভ শাড়ি পরতে দেখে মেইনলি এটি মাথায় এসেছিল। এ ফেসবুক দুনিয়ায় এসব এক্সপেন্সিভ শাড়ি বা জুয়েলারি আমরা একবারই পরি। কারণ ছবি শেয়ার করে ফেলি সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেকেন্ড টাইম আর সেটা ইউজ হয় না। এত দামি শাড়ি বা জুয়েলারি আমরা দানও করি না। রিলেটিভকে দিতে গেলেও পুরান জিনিস দেওয়াটা শোভা পায় না। রিসাইকেল বিনের জন্ম হয়েছিল মধ্যবিত্তদের কথা মাথায় রেখে। যাদের শখ আছে কিন্তু সামর্থ নেই বা কারো কাছে হাত পেতে দান নেওয়ারও ক্ষমতা নেই লজ্জার ভয়ে।
জাগো নিউজ: এখন সদস্য সংখ্যা তো দশ লাখ ছাড়িয়েছে। কিভাবে দেখছেন বিষয়টি? ফ্লোরিডা শারমিন সেতু: আমরা নিজেরাও বেশ অবাক হয়েছি মানুষের এ উচ্ছ্বাসে। আমরা বুঝতে পারছিলাম, মানুষ এমন একটি প্লাটফর্মের অপেক্ষায় ছিলেন। কৃতজ্ঞতা সৃষ্টিকর্তার কাছে। বর্তমানে আমি অ্যাডমিন হিসেবে আছি। সাথে আছেন আমার স্বামী মাসুম আব্দুল্লাহ। দু’জন কো অ্যাডমিন আছেন রানা রফিক এবং ফাহমিদা বিনতে রহিম। এ ছাড়াও আছেন ১৭ জন মডারেটর্স, মানে টোটাল ২১ জনের টিম এখন রিসাইকেল বিন পরিচালনা করছেন।
Advertisement
জাগো নিউজ: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি রিসাইকেল বিন টিমের? ফ্লোরিডা শারমিন সেতু: ভবিষ্যতে এটাকে একটি ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার দেওয়ার ইচ্ছা আছে আমার। ওয়েবসাইট করার ইচ্ছা আছে। খুব শিগগিরই আমরা ডেলিভারি সার্ভিস নিয়ে আসছি। ক্যাশ অন ডেলিভারি পুরো বাংলাদেশে হবে। যেন সদস্যরা পণ্যটি দেখে-শুনে নিতে পারেন। ডেলিভারির টাইমে তাহলে ডেলিভারি পরবর্তী তাদের মন খারাপের সংখ্যাটাও কমে আসবে।
জাগো নিউজ: বর্তমান কাজে কী কী চ্যালেঞ্জ পাচ্ছেন?ফ্লোরিডা শারমিন সেতু: রিসাইকেল বিন যেহেতু এখন ১০ লাখেরও বেশি মানুষের পরিবার। আমাদের এখন সত্যিই একটু সিরিয়াসলি ভাবতে হচ্ছে। প্রতিদিন গ্রুপে পোস্টের সংখ্যা বাড়ছে। বেড়ে চলেছে চাওয়া-পাওয়া। গ্রুপের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আমরা একে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া নিয়ে কাজ করছি।
ফেসবুক নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে অ্যাপ বা ওয়েবসাইট থেকে কিভাবে গ্রুপ পরিচালনা করা যায়- এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। ভার্চুয়াল জগতের সাথে তাল মিলিয়ে বাস্তবেও রিসাইকেল আউটলেট দেওয়া যায় কি-না ভাবছি। তাছাড়া রিসাইক্লিংয়ের সাথে আপসাইক্লিং নিয়ে কিভাবে কাজ করা যায়, এ নিয়ে টিম কাজ করছে।
গ্রুপে আমাদের ১০ লক্ষাধিক মেম্বার আমাদের শক্তি, যেকোনো মিডিয়ার চেয়ে বিজ্ঞাপন ও বিপণনের জন্য রিসাইকেল বিন হয়ে উঠতে পারে অনন্য এক মাধ্যম। গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতুলনীয় সুযোগ করে দিয়েছে গ্রুপটি। নামমাত্র চার্জের বিনিময়ে তাদের সেবা বা প্রডাক্ট নিয়ে মাঠ পর্যায়ে গ্রাহকের কাছে যাওয়ার ও তাদের মূল্যায়ন বা মতামত নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে রিসাইকেল বিন।
Advertisement
তরুণ উদ্দ্যোক্তাদের নিয়েও কাজ করছে গ্রুপটি। গেল ফাল্গুনেও সাফল্যের সাথে বড় পরিসরে একটি ভার্চুয়াল মেলার আয়োজন করেছে রিসাকেল বিন অ্যাডমিন প্যানেল। তবে বাণিজ্যিকভাবে গ্রুপটি সফল হোক বা না হোক, মেম্বারদের থেকে কোনো কমিশন বা চাঁদা না নেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে অটল আছি আমরা।
জাগো নিউজ: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ দিন—ফ্লোরিডা শারমিন সেতু: কিছু করতে হয়, তাই করবো- এ চিন্তা থেকে বেরিয়ে কিছু করলে করার মত করে করবো; এ লক্ষ্য স্থির করে কাজে নেমে পরুন। নিজের লক্ষ্যে অটুট থাকুন। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। সর্বোপরি ধৈর্য আর সততা নিয়ে এগিয়ে যান। সফলতা আপনার আসবেই।
এসইউ/এএসএম