হিংসা আর প্রতিহিংসার কাফনে মোড়ানো লুকিয়ে থাকা প্রেতাত্মা হেফাজতে ইসলাম। এটা পুরোনো আত্মা। অতীতের কালসাপ। ঘাপটি মেরে থাকা বিষ। নতুন আঙিকে পুরোনো বিষের রণকৌশল। দ্বিজাতিতত্ত্বের অধর্মীয় সাম্প্রদায়িক বীজ। ভাষা আন্দোলনের অশুভশক্তি। চুয়ান্নের ফতোয়াবাজ। পাকিস্তান রক্ষার বিশুদ্ধ রক্ত। পাকিস্তানি চিন্তা কাঠামোর উকিল। পাকিস্তান মাতা মুসলিম লীগের উত্তরসূরী। ৭১ এর পরাজিত শক্তির একনিষ্ঠ গোষ্ঠীগেয়াতি। রাজাকার আল-বদরের অঙ্গীকারনামা।
Advertisement
ভুললে চলবে না, এরা অশিষ্ট, বিকৃত ও হিংস্র। হারানো ভূমি ফিরে পেতে ব্যাকুল। ভেতরে পরাজয়ের ক্ষোভ ধ্বংসাত্মক। এদের উত্তরসূরীরা বাংলা ভাষা চায়নি। স্বাধীনতা চায়নি। বাংলাদেশ এদের কাছে চোখের বিষ। বাংলাদেশের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু বিষফোঁড়া। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এদের কাছে খিচুনির মতো। সাম্প্রদায়িকতা এদের বাপদাদার সম্পদ। তাই তো পুরোনো অভ্যাসের বীজ এখনও তাজা। মিথ্যা অপপ্রচারে ইতিহাসের সত্যিটা বারবার লুকানোর চেষ্টা করে ধর্মীয় লেবাসে অধর্মীয় চর্চায়। ধর্মের অমর্যাদা করে ইসলামকে হেয় করার ইতিহাস এদের পুরোনো।
বঙ্গবন্ধু আমার দেখা নয়াচীনে লিখেছেন, "ইসলামের মূল কথা শান্তি, ঈমান, বিশ্বভ্রাতৃত্ব। সেখানে ধর্মযাজকদের দ্বারা শান্তির পরিবর্তে দেখা দিলাে অশান্তি, ঈমানের পরিবর্তে বেঈমানি, বিশ্বভ্রাতৃত্বের জায়গায় দেখা দিলাে ভাই ভাইকে শােষণ বা নির্যাতন করা। যেমন বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং মহামতি বুদ্ধ অহিংস নীতি প্রচার করেছিলেন—সেখানে দেখা দিলাে হিংসা, ঘৃণা, অত্যাচার, অবিচার ও শােষণ। তেমনি আবার দেখা দিলাে খ্রিষ্ট ধর্মের মধ্যে, যেখানে ক্রাইস্ট বলে দিয়েছেন, “এক মুখে আঘাত করলে আরেক মুখ এগিয়ে দাও, ক্ষমাই মহত্ত্বের লক্ষণ।" কিন্তু খ্রিষ্ট ধর্মে বিশ্বাসীরা দুনিয়ার অনুন্নত দেশগুলিকে শােষণ করার জন্য যুদ্ধ করে। নয়া নয়া অস্ত্র তৈরি করে, তার দ্বারা জনসাধারণকে হত্যা করে, সেই দেশগুলিকে শাসন করার নামে শােষণ করে। দরকার হলে লক্ষ লক্ষ নিরীহ লােককে বােমা মেরে হত্যা করে। গ্রামের পর গ্রাম উচ্ছেদ করে। এরাই আবার দুনিয়ায় প্রচার করে, ‘আমরা খ্রিষ্টান’। এরা কি জেসাস ক্রাইস্টকে অপমান করে না? যেমন, আমরা মুসলমানরাও কি অসম্মান করি না দুনিয়ার শেষ নবী হজরত রসুলে করিমকে (সা.)? তার আদর্শ পালন না করে তার নাম ব্যবহার করি মানুষকে ধোকা দেওয়ার জন্য। তেমনি ভারতের দিকে চেয়ে দেখুন, হিন্দু ধর্মের রক্ষকরা জায়গায় জায়গায় মুসলমানদের হত্যা করছে ধর্মের নামে। এক হিন্দু অন্য হিন্দুর ছোঁয়া পানি পর্যন্ত খায় না, কারণ জাত যাবে।" পৃঃ ১১১,১১২
বাঙালিরা ধর্মপ্রাণ। কিন্তু ধর্মান্ধ না। এখানেই খুঁটি গেড়ে আছে ধর্মীয় উগ্রধর্মান্ধরা। ধর্মীয় কার্ডের ফতোয়া। অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বাঙালির মনন।
Advertisement
"আমি ব্যক্তিগতভাবে ধর্মে বিশ্বাসী। এবং নিজে একজন মুসলমান বলে গর্ব অনুভব করি।"পৃঃ ১১২
"মানুষ যদি সত্যিকারভাবে ধর্মভাব নিয়ে চলতো তাহলে আর মানুষে মানুষে এবং রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে এইভাবে যুগ যুগ ধরে সংগ্রাম হতো না। কিন্তু মানুষ নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য ধর্মের অর্থ যার যেভাবে ইচ্ছা সেইভাবে চালাতে চেষ্টা করেছেন।"পৃঃ১০৮
ধর্মান্ধদের ফতোয়া ইতিহাস অনেক পুরোনো। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা নতুন খোলসে পুরোনো রূপ মাত্র। অনেকেই হয়তো বলবার চেষ্টা করছে হঠাৎ করে এদের উগ্রতা কেন? এটা পুরনো বাতি প্রস্তুতি নিয়েই জ্বলে উঠা। ইতিহাস তাই বলে।
"আমাদের দেশে এককালে এই সকল তথাকথিত ধর্মগুরু বা পীর সাহেবরা ইংরেজি পড়া হারাম বলে আমাদের জাতির কী ভয়ানক ক্ষতি করেছে। সৈয়দ আহমদ যখন ইংরেজি পড়ার জন্য আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি করলেন তখন তাকে এই সকল পীর সাহেবরা ফতোয়া দিলো 'কাফের' বলে।" পৃঃ১০৯
Advertisement
কী কারণে একটা মানুষ কাফের হবে, মুশরেক হবে, মুরতাদ হবে তার সঠিক ব্যাখ্যা ধর্মান্ধ ফতোয়াবাজরা কোনো দিন দেন না। কী কারণে কোনটা হারাম তার সঠিক ব্যাখ্যাও দেন না। তাদের ফতোয়ার সাথে একমত না হলে যে কেউ যেকোনো সময় কাফের, মুশরেক, মুরতাদ হতে পারে। আর হারাম!!!
"আমি মাইক্রোফোনে বক্তৃতা শুরু করলাম। পীর সাহেবরা প্রথমে দাঁড়াইয়া ফতোয়া দিলেন, মাইক্রোফোনে কথা বলা হারাম। কোনাে কাজকর্ম করে না, মানুষকে ফাঁকি দেয়, মাদরাসার নামে, মসজিদের নামে, লিল্লাহ বাের্ডিংয়ের নামে টাকা তুলে নিজেদের ভরণপােষণ করে। চিয়াং কাইশেকের চীনে সেই দশা ছিল। কামাল আতাতুর্কের তুরস্কেরও সেই দশা ছিল।" পৃঃ১১১
ফতোয়াবাজরা নছিয়ত যা দেন খাছিলতে তা কোনটাই খুঁজে পাওয়া যায় না। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, "যারা মুসলিম লীগের সদস্য -যাদের সাথে আমি বহুদিন রাজনীতি করেছি, তারা ইসলামের যে কয়টা কাজ করা নিষেধ আছে, তার প্রত্যেকটা করে, আবার ইলেকশনে দাঁড়াইয়া বড় বড় পীর মাওলানাদের হাজির করে তাদের কাছ থেকে ফতোয়া নেয় টাকা দিয়া।পৃঃ১১৪
চীন নিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীদের গুজব অপপ্রচারের ইতিহাস বহুকালের। আমার দেখা নয়াচীনে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, "নয়াচীন সরকার কারও ধর্মকাজে বাধার সৃষ্টি করে না এবং যদি কোনাে সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের ওপর বা তাদের ধর্মকাজে বাধার সৃষ্টি করে, তাহলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হয়। এ রকম অনেক ঘটনার কথা আমাকে অনেক মুসলমান বলেছেন আমরা নিজেরা মসজিদে গিয়াছি, সেখানে মুসলমানরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। প্রত্যেক মসজিদে ইমাম আছে যারা ছেলেমেয়েদের কোরআন হাদিস শিক্ষা দেয়। ইমাম সাহেবরা বেতন পান। তাদের আমাদের দেশের মতাে না খেয়ে ইমামতি করতে হয় না; আর পেট বাঁচানাের জন্য মিথ্যা ফতােয়া দেওয়া লাগে না। আর তাবিজ কবজ, ফুঁ-ফাঁ দিয়া পয়সা নিতে হয় না এবং এই সমস্ত টাকা গ্রহণ করা আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যতদূর খবর নিয়া জানলাম, নয়াচীনে একটা প্রতিষ্ঠান আছে যার নাম ‘অল চায়না ইসলামিক কালচারাল অ্যাসােসিয়েশন।’ এই প্রতিষ্ঠান থেকে পিকিং সরকারকে সাহায্য করা হয়। আর মুসলমানরা অর্থ দিয়া একে বাঁচাইয়া রাখে। এদের কাজ, ইসলামের নামে যে-সব কুসংস্কার চালু হয়েছে তা মুছে ফেলে দেওয়া, যত মসজিদ আছে তার হিসাব নিয়া ইমাম নিযুক্ত করা।..। এরাই বড় বড় মাদ্রাসা করে, সেখান থেকে পাশ করলে মওলানা’ বা ‘মৌলবি’ লেখা যায়। অন্য কোথাও থেকে পাশ করলে ‘মওলানা লেখার ক্ষমতা নাই। এবং এই কমিটিও তেমন কাউকে মওলানা হিসাবে গ্রহণ করবে না। পাশ করার পরে আবার একটা পরীক্ষা দিতে হয়। একটা বাের্ড আছে, বাের্ডের পরীক্ষায় পাশ করলে তাদের চাকরি দেওয়া হয়। ইচ্ছামতাে মাদ্রাসা করে ব্যবসা করা যায় না। এই কমিটি থেকে অনুমতি নিতে হবে। ঐ কমিটি অনুমতি দিলেই সরকারও অনুমতি দিবে। যদি কোথাও মসজিদ ভেঙে যায় বা মেরামত করতে হয় তবে কমিটি তা করবে জনগণের সাহায্য নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির ব্রাঞ্চ হিসাবে প্রাদেশিক, জেলা, মহকুমা কমিটিও আছে। পীর মুরিদির ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে।"পৃঃ১১৩
"টাকার বিনিময়ে ‘ফতোয়া’ দেয়া, জনগণকে ‘ধর্মের নামে ধোঁকা। ধর্মের দোহাই দিয়ে সেখানে(নয়াচীনে) আজ রাজনীতি চলে না, যা চলছে আজও আমাদের দেশে।"পৃঃ ১১৪
চীন সম্পর্কে এখনও প্রতিনিয়ত গুজব সৃষ্টি করে ফতোয়াবাজরা। করোনাকালীন জাতি তা প্রত্যক্ষভাবে লক্ষ করেছে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চীনাদের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করেছে ফতোয়াবাজরা। নাস্তিক, কাফের, মুশরেক... কত কী ভাষা। আরও কত কী...? চীনারা এই খায়, সেই খায়...। করোনা তাদের জন্য গজব। মুসলমানদের করোনা হবে না বলে কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী কাঠমোল্লাদের ফতোয়া। করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ফর্মুলাও দিয়ে দেয় ফতোয়া দিয়ে। কালাজিরা, তেজপাতা, কলাপাতা, লবঙ্গপাতা, তুলসী পাতা, পুদিনা পাতা, কত রকমের যে পাতা এগুলো খেলে নাকি করোনা থাকবে না। এরা আবার করোনাবিরোধী মিছিলও করছে। অথচ চীনা পণ্য এরা মজা করে খায়। চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বহু বেতনে আয়েশে চাকরি করে।
চীনের মতো আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ইমাম তৈরি করা গেলে আমাদের দেশের অনেক উপকার হতো, দেশ থেকে অনেক কুসংস্কার ও কুপ্রথা দূর হতো।
নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে হেফাজত আর জামাত বিশাল বিশাল ফতোয়া দেন। অথচ ধর্ম কি বলে? আমার দেখা নয়াচীনে বঙ্গবন্ধু লিখছেন, "মুসলিম মেয়েরা পুরুষদের সাথে যুদ্ধ ক্ষেত্রে যেত, অস্ত্র এগিয়ে দিতো। আহতদের সেবা শুশ্রূষা করতো। হযরত রসুলে করিমের (সা.) স্ত্রী হযরত আয়েশা সিদ্দিকা নিজে বক্তৃতা করতেন, ‘দুনিয়ার ইসলামই নারীর অধিকার দিয়াছে। সত্য কথা বলতে গেলে, একটা জাতির অর্ধেক জনসাধারণ যদি ঘরের কোণে বসে শুধু বংশবৃদ্ধির কাজ ছাড়া আর কোনো কাজ না করে তা হলে সেই জাতি দুনিয়ায় কোনোদিন বড় হতে পারে না।"পৃঃ ৯৯,১০০
পুরুষ শ্রেষ্ঠ আর স্ত্রী জাতি নিকৃষ্ট এটাই ফতোয়াবাজদের নীতি। নারী নেতৃত্ব হারাম বলে ফতোয়া দেয়। অথচ বিভিন্ন নামে দল গঠন করে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে রাজনীতিতে যুক্ত। ক্ষমতায় যাওয়ারও স্বপ্নে বিভোর। এরাই আবার নারী নিয়ে রিসোর্টে যায়। এদিকে হেফাজতের গঠনতন্ত্রে রিসোর্টে যাওয়া হারাম বলা হয়েছে। তা না হয় গেল। যে নারীকে নিয়ে গিয়েছে তাকে নিয়ে কত ফতোয়া হেফাজতের। অথচ সেই নারী অপরের স্ত্রী। শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে আল্লাহর কসম বলায় হেফাজতি নেতারা কত ফতোয়া যে বের করছে সত্যাটাকে লুকানোর। সেই নারীর ছেলে, মাওলানা মামুনুল হকের বোনের ফোনালাপ, মামুনুল হকের ফোনালাপ কোনোটাতেই তাদের কান নাই। একমাত্র ফতোয়াই তাদের মেইন অস্ত্র। এরা বাংলাদেশের আইন মানে না। এই মামুনুল হকরাই নাকি আবার ইসলামের হেফাজতকারী। কী হাস্যকর!!!
নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ফতোয়া দিয়ে ২০১০ সালে হেফাজত আলোচনায় আসে। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বাঁচানোর জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তৈরি হওয়া গণজোয়ারকে এরা নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করেছিল। এরপর একের পরে এক নানান রকম অযৌক্তিক ফতোয়া দিতে থাকে। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য নানারকম ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে সোচ্চার। বাঙালি জাতি তো ৭১ এ আনুষ্ঠানিকভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বিদায় করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু ৪৭ থেকে ৭১ দীর্ঘ সময় আন্দোলন সংগ্রাম আর মুক্তির মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িকতার বীজ বপণ করেছে। কারও বাপদাদার ক্ষমতা আছে একে নস্যাৎ করার।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর ঐতিহাসিক মুহূর্ত শুধু প্রতিটি বাঙালি নয় সারাবিশ্ববাসী করোনার এই প্রাদুর্ভাবেও জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করেছে। বাঙালি জাতির মহানায়ক, স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণপুরুষ, বাঙালি জাতির আবেগ, অনুভুতি, নিঃশ্বাস, বিশ্বাস, অস্তিত্বের প্রতীক, একতার প্রতীক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে বিশ্ববাসী। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। মুজিবশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে এসেছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বন্ধুদেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এসেছিল ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক।
ধর্মান্ধ ফতোয়াবাজ হেফাজত, বিএনপি, জামায়াত আর বাম মিলে শুরু করল নতুন ফতোয়া। ভারত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রশ্ন তো নরেন্দ্র মোদি নয়। প্রশ্ন বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ আর ভারত। বাংলাদেশের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু। ভাষা, স্বাধীনতা এসেছে তার হাত ধরে। প্রতিবাদ যারা করছে তাদের পরিচয় একাত্তরের পরাজিত শক্তির বংশধর। আর মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী দেশপন্থী বামরা। তাদের উত্তরসূরীরা ভাষার বিরুদ্ধে, ছয় দফার বিরুদ্ধে, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী। তারা বিরোধিতা করবে, সহিংসতা করবে, জ্বালাও-পোড়াও করবে, জাতীয় পতাকা পুড়বে, জাতীয় পতাকা অবমাননা করবে, বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করবে, শহীদ মিনার ভাঙবে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করবে, বঙ্গবন্ধুকে বিকৃত করবে, আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর করবে, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষকে হত্যা করবে, আওয়ামী লীগ নেতা, ছাত্রলীগের নেতাদের মারবে, পুলিশ মারবে, সাংবাদিক মারবে, ধর্ষণের নেতৃত্ব দিবে, হত্যার নেতৃত্ব দিবে এটাই স্বাভাবিক। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ যেসকল জায়গায় হেফাজত, বিএনপি জামায়াত, শিবির সহিংসতা চালিয়ে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, থানা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়িঘর, ইউএনও অফিসসহ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে তা পরাজয়ের গ্লানি থেকে। যে কায়দায় পাকিস্তানি ও রাজাকাররা ৭১ এর ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে গণহত্যা শুরু করে নয় মাস ত্রিশ লক্ষ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল, দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জত নিয়েছিল ঠিক একই কায়দায় ২০ থেকে ২১ সালের অদ্যাবধি সময় পর্যন্ত তাণ্ডবলীলা চালায়।
চুয়ান্নের নির্বাচনে ধর্ম ব্যবসায়ীদের পূর্বপুরুষ মুসলিম লীগের ফতোয়া। বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখছেন, "মুসলিম লীগ যখন দেখতে পারলেন তাদের অবস্থা ভাল না, তখন এক দাবার ঘুঁটি চাললেন। অনেক বড় বড় আলেম, পীর ও মাওলানা সাহেবদের হাজির করলেন। এক ধর্ম সভা ডেকে ফতোয়া দিলেন আমার বিরুদ্ধে যে, ‘আমাকে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না, ধর্ম শেষ হয়ে যাবে। সাথে শর্ষিনার পীর সাহেব,বরগুনার পীর সাহেব, শিবপুরের পীর সাহেব, রহমতপুরের শাহ সাহেব সকলেই আমার বিরুদ্ধে নেমে পড়লেন এবং যত রকম ফতোয়া দেওয়া যায় তাহা দিতে কৃপনতা করলেন না। দুই চারজন ছাড়া প্রায় সকল মওলানা, মৌলভী সাহেবরা এবং তাদের তালবেলেমরা নেমে পড়ল। একদিকে টাকা, অন্যদিকে পীর সাহেবরা, পীর সাহেবদের সমর্থকরা টাকার লোভে রাতের আরাম ও দিনের বিশ্রাম ত্যাগ করে ঝাঁপিয়ে পড়লেন আমাকে পরাজিত করার জন্য।
জনগণকে ‘ইসলাম ও মুসলমানের নামে’ স্লোগান দিয়ে ধোঁকা দেয়া যায় না। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদের ধর্মকে ভালোবাসে, কিন্তু ধর্মের নামে ধোঁকা দিয়ে রাজনৈতিক কার্যসিদ্ধি করতে তারা দেবে না এ ধারণা অনেকেরই হয়েছিল। জনসাধারণ চায় শোষণহীন সমাজ ও অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি।...। আওয়ামী লীগও অন্যান্য নেতা রাষ্ট্রদ্রোহী, হিন্দুদের দালাল, পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলা এক করতে চায়- এ রকম নানা রকমের স্লোগান দিতে আরম্ভ করেছিল।..। মুসলিম লীগ নেতারা প্রচার করেছে,আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে অবাঙ্গালিদের পূর্ব বাংলায় থাকতে দেবে না।..।যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা কোনো দিন কোনো রকমের সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করতে পারে না। তাঁদের কাছে মুসলমান, হিন্দু,বাঙালি, অবাঙ্গালি সকলেই সমান। পৃ২৫৬, ২৫৮
৭০ এর নির্বাচনে ফতোয়া দিয়েছিল আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে বিবি তালাক হয়ে যাবে। ধারাবাহিকভাবে ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছে, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে কাফের হয়ে যাবে, দেশ ভারত হয়ে যাবে, মসজিদ, মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যাবে, সেখানে উলুধ্বনি বাজবে। এখন নতুন ফতোয়া, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতাদের জানাজা পড়ানো হারাম। তারা নাস্তিক, কাফের, মুশরেক। মহান মুক্তিযুদ্ধে ফতোয়ার বাতাস কি ছিল যেন? পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ করা হারাম। স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন আশ্রয় প্রশ্রয়ে পরিপুষ্ট হয়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মের অপব্যাখ্যা করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে এরা। মেজর জিয়াউর রহমানের অবৈধ ক্ষমতায়নে জামায়াত খুটি গেড়ে বসে তাঁর হাত ধরেই। জামায়াত আর হেফাজত একই রসুনের কোয়া। বিভিন্ন সময় গোপনে, প্রকাশ্যে সহযোগিতা করলেও ২০১৩ সালের ৫ই মে বেগম খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে হেফাজতকে মাঠে নামায়। ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড তাদের পুরনো ন্যাচার। এরা জাতীয় সংগীত মানে না। এরা বাংলাদেশের সংবিধান মানে না। এরা ধর্মনিরপেক্ষতা মানে না। এরা পাকিস্তান মানে। এদের মুল উদ্দেশ্য পাকিস্তানি ধারার প্রদেশ।
তারা এখনও স্বপ্ন দেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করে আবার পাকিস্তানি রাষ্ট্রে ফিরে যাওয়া। সেজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার সকল ষড়যন্ত্র করছে। এরা ইতিহাস বিকৃতি করে ফাঁসি হওয়া রাজাকারদের শহীদ বানিয়ে নতুন প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের ভুলভাবে উত্থাপন করার চেষ্টা করছে। এরা মসজিদ মাদ্রাসাসহ পবিত্র জায়গাগুলোকে এবং জাতীয় দিবসকে লক্ষ্য করে সংহিতায় মেতে উঠে। ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভূতিই এদের টার্গেট। যা এখন সহজেই সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে কার্যসিদ্ধি আদায় করছে। অতীতে এই কাজটি করত অসহায় ও গরীব শ্রেণীভূক্ত মানুষের দিয়ে।
ভারত নিয়ে এদের এলার্জি নতুন নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের সহযোগিতায় এদের বাপদাদাদের পরাজিত করা হয়েছিল। এটাই তাদের মুল কারণ। এই ফতোয়াবাজরা ভারতের সমস্ত পণ্য খাবে, ব্যবহার করবে তাতে ফতোয়া নাই। ভারতের বড় বড় মাদ্রাসা থেকে ডিগ্রি নিয়ে বড় মাওলানা সেজে ফতোয়া দিবে তখন দোষ নাই। বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেই দেশের জাতির পিতাকে নিয়ে প্রশংসা করতে এদের দোষ নাই, ফতোয়া নাই। করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কি গুজবটাই না করলো ফতোয়াবাজরা? এই ভ্যাকসিনে গরুর মুত আছে,..আরো কতো কি?
সকল ধর্মের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু যে নিরাপদ বাংলাদেশ গঠন করতে চেয়েছিল তা বাস্তবায়নের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বায়তুল মোকাররমসহ ধর্মীয় যেসব প্রতিষ্ঠান হয়েছে তা সবই বঙ্গবন্ধু করেছেন। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একযোগে ৫৬০টি মডেল মসজিদসহ সারাদেশে যত মসজিদ, মাদ্রাসা তৈরি, সংস্কার ও পরিচালনার জন্য যত অর্থ দেয়া হচ্ছে তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। শুধু তাই নয় সকল ধর্মের মানুষের উপাসনালয়ের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সময় এসেছে ধর্মের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের কঠোর নজরদারি ও প্রশিক্ষণ। আলেম সমাজকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার স্বার্থে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার্থে হেফাজত, জামায়াত শিবির সন্ত্রাসীদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিকভাবে ভাবে বয়কট করার উপযুক্ত সময় এখনই।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক গণিত বিভাগ, সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও পরিচালক, বঙ্গবন্ধু চর্চাকেন্দ্র বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগ।
এইচআর/এমকেএইচ