বিশেষ প্রতিবেদন

ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ উঠছে না

নাটোরে শুরু হয়েছে রোপা আমন ধান কাটা। অনুকূল আবহাওয়ায় ফলন ভালো হলেও বাজারে ধানের দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচ উঠছে না কৃষকদের। ফলে ধান চাষের উপর উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষকরা। সরেজমিনে নাটোর সদর উপজেলার মোহনপুর ও হাজরা এলাকায় ঘুরে দেখা যায় কৃষকরা ব্যস্ত এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা ধান কাটা মাড়াই ও শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজ করছেন। হাজরা নাটোর এলাকার শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, সাত বিঘা জমিতে স্বর্ণা জাতের ধান চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে আট থেকে ১০ হাজার টাকা। অপরদিকে, ধানের ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি ১৮ থেকে ২০ মণ হারে। কিন্তু বাজারে ৫`শ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করে তাদের উৎপাদন খরচ উঠছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোকসান হচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষক আব্দুল খালেক জাগো নিউজকে জানান, তিনি বর্গা জমিতে ধান চাষ করেছেন।  কিন্তু সার বীজ ও সেচ খরচ বেশি পড়ায় তার উৎপাদন খরচ পড়েছে বেশি। এমতাবস্থায় ৫`শ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করে তিনি খরচের টাকা তুলতে পারবেন না। কৃষক রবিউল করিম জাগো নিউজকে জানান, ধান কেটে লোকসান হওয়ায় তিনি দিনমজুর দিয়ে ধান কাটাতে পারছেন না। কারণ, একজন ধান কাটা শ্রমিককে দিনে দিতে হয় তিন`শ থেকে সাড়ে তিন`শ টাকা। এক বিঘা জমির ধান কাটতে চার থেকে পাঁচজন শ্রমিক লাগে। তাই লোকসান বাঁচাতে তিনি নিজেই ধান কাটছেন। এই অঞ্চলের বেশিরভাগই বর্গা চাষি। বিঘা প্রতি জমির মালিককে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা দেওয়ার পরে চাষের খরচ এবার কৃষকদের উঠবে না। এ কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বর্গাচাষিরা। তিনি জানান, ধানের দাম মণ প্রতি ৭`শ থেকে আট`শ টাকা হলে কৃষকরা লাভ করতে পারতেন। দানেশ নামের একজন কৃষক জাগো নিউজকে জানান, তিনি নিজে জমিতে শ্রম দিতে পারেন না। এ কারণে জমি চাষ, নিড়ানি, সার, তেল ও বীজ দিয়ে তার বিঘা প্রতি আট হাজার টাকা খরচ হয়েছে। উপরন্তু ধান কাটা শ্রমিকদের বিঘা প্রতি দিতে হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। কিন্তু, তিনি ১৫ থেকে ১৮ মণের বেশি দাম পাচ্ছেন না। ফলে বর্তমান বাজার অনুসারে তার উৎপাদন খরচ উঠছে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ধানের দাম হয়তো ভবিষ্যতে বাড়বে। কিন্তু তখন প্রান্তিক অথবা মধ্যবিত্তদের হাতে ধান থাকবে না। এ কারণে ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাবুল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, নাটোরে সাধারণত বিনা ধান-৭ , স্বর্না, ব্রি-৩৯ হাইব্রিডের মধ্যে ধানী গোল্ড ও স্বর্ণা নেপালি জাতের ধানের চাষ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ রোগ বালাই প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক তদারকি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলহাজ উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, নাটোরে এ বছর ৫২ হাজার ৩১৯ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৬০ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৩৯ হাজার ৮`শ ৮ মেট্রিক টন চালের। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার ধানের ফলন হয়েছে ভালো। বিঘা প্রতি ১৮ থেকে ২২ মণ হারে ধানের ফলন পাওয়া যাচ্ছে যা প্রত্যাশার চেয় বেশি। এ কারণে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, বর্তমান বাজার মূল্য অনুসারে কৃষকদের তেমন লাভ থাকবে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোকসানের সম্ভাবনা রয়েছে। ধানের দাম সাত থেকে ৮`শ টাকা মণ হলে ভালো হতো।এমজেড/আরআইপি

Advertisement